কী আশ্চর্য!
আশ্চর্য হবার অনেক সময় পাবে। এখন চল বের হয়ে যাই।
চল।
দরজা খুলে দুজন বের হয়ে যায়। দূরে কোথাও অ্যালার্ম বাজতে থাকে। তার মধ্যে দুজন একজন আরেকজনের হাত ধরে ছুটতে থাকে।
১২. প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রধান রিওন
প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রধান রিওন সমাজ দপ্তরের প্রধানকে জিজ্ঞেস করল, আমার মেয়ে কাটুস্কা কোথায়?
সমাজ দপ্তরের প্রধান ইতস্তত করে বলল, আমি জানি না।
আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে যে তোমার লোকজন আমার মেয়ে আর জলমানব ছেলেটিকে ধরে এনেছে।
হ্যাঁ। ধরে এনেছিল। কিন্তু তারা এখান থেকে পালিয়ে গেছে।
রিওন ক্রুদ্ধ গলায় বলল, কেন তাদের ধরে এনেছিলে, তোমাকে কে সেই ক্ষমতা দিয়েছে?
সমাজ দপ্তরের প্রধান ইতস্তত করে বলল, আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না, কিন্তু তুমি জেনে রাখ আমাকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল এবং আমার কোনো উপায় ছিল না।
রিওন কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে সমাজ দপ্তরের প্রধানের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, এখন তারা কোথায়?
আমি জানি না। এখান থেকে বের হয়ে একটা দ্রুতগামী ক্যাব ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেছে।
কোথায় গেছে?
আমি জানি না।
রিওন কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, প্রচণ্ড একটা ঘুষি দিয়ে সমাজ দপ্তরের প্রধানের সামনের কয়েকটা দাঁত ফেলে দেয়ার একটা অদম্য ইচ্ছাকে রিওন অনেক কষ্ট করে দমিয়ে রাখল। সে আস্তে আস্তে বলল, কাজটা মনে হয় ভালো হল না।
সমাজ দপ্তরের প্রধান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কোন কাজটা ভালো, কোনটা খারাপ সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা আমরা বহুদিন আগে ছেড়ে দিয়েছি রিওন।
কাজটা ঠিক হয় নি। আবার আমাদের চিন্তাভাবনা করা শুরু করতে হবে।
.
রিওন ঘরের দরজায় লাল রঙের মনিটরের সামনে তার ডান চোখটা লাগাল। একটা ইনফ্রারেড রশ্মি চোখের রেটিনা স্ক্যান করে খুট করে দরজাটা খুলে দিল। রিওন দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, শুভ সন্ধ্যা রিওন।
রিওন মাথা থেকে টুপিটা খুলতে গিয়ে থেমে যায়। সে নিচু গলায় বলে, শুভ সন্ধ্যা কোয়াকম্প।
রিওন, তোমার এখানে এখন আসার কথা নয়।
আমি জানি।
তা হলে তুমি কেন এসেছ?
আমি তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।
তুমি আমার সাথে কী নিয়ে কথা বলতে এসেছ?
রিওন নিচু গলায় বলল, তুমি জান আমি তোমার সাথে কী নিয়ে কথা বলতে এসেছি।
তোমার মেয়ে এবং জলমানব?
হ্যাঁ। আমার মেয়ে কাটুস্কা এবং জলমানব নিহন।
কোয়াকম্প শুষ্ক গলায় বলল, তুমি তাদের নিয়ে কী কথা বলতে চাও?
রিওন ধীরে ধীরে বলল, তুমি নিহনকে দিয়ে আমার মেয়েকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিলে।
রিওন, তোমাকে শুধু তোমার মেয়ের ভালোমন্দ দেখতে হয়। আমার দায়িত্ব অনেক বেশি। আমাকে তোমাদের সবার ভালোমন্দ দেখতে হয়। সেই দায়িত্ব কঠিন। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনো কখনো আমাকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
রিওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, একটা মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে তখন আমরা তার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকাই। একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটার যখন মিথ্যা কথা বলে তখন আমরা কী করি কোয়াকম্প?
তুমি কী বলতে চাও রিওন?
আমি বলতে চাই তুমি একটা প্রতারক কোয়াকম্প। তুমি আমাদের সবাইকে প্রতারণা করেছ। তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পার না– তুমি বলেছ জলমানবদের বিবর্তন উল্টোদিকে যাচ্ছে। তুমি বলেছ তারা নির্বোধ হয়ে যাচ্ছে, হিংস্র হয়ে যাচ্ছে, পশু হয়ে যাচ্ছে! আসলে ব্যাপারটি ঠিক তার উল্টো। জলমানবেরা এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের সন্তানেরা ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে উঠছে, হিংস্র হয়ে উঠছে, তুমি সেটা আমাদের বল নি। কেন বল নি, জান?
কেন?
কারণ তুমি সেটা জান না। রিওন একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, তুমি একটা নির্বোধ কোয়ান্টাম কম্পিউটার। নির্বোধ আর মূর্খ। নির্বোধ, মূৰ্থ এবং অসৎ। অসৎ এবং প্রতারক। প্রতারক এবং খুনি। তোমার মতো একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের হাতে আমাদের পুরো ভবিষ্যৎ তুলে দিয়েছিলাম ভেবে আমি শিউরে উঠেছি কোয়াকম্প।
তুমি কী চাও রিওন?
তুমি খুব ভালো করে জান আমি কী চাই। আমি পকেটে করে আমার রিভলবারটা নিয়ে এসেছি। আমি বড় ফ্রেমের ঢাকনাটা খুলে তোমার মূল ছয়টা প্রসেসরে একটা একটা করে গুলি করব। প্রসেসরগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে তখন তুমি কোয়াকম্প হবে একটা সাধারণ কম্পিউটিং মেশিন। তুমি শুধু যোগ করবে আর বিয়োগ করবে। আমরা যখন তোমাকে কিছু একটা করতে আদেশ দেব, তুমি স্যালুট দিয়ে বলবে, ইয়েস স্যার! বুঝেছ?
রিওন।
বল কোয়াকম্প।
তুমি এটা কোরো না। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি রিওন, তুমি এটা কোরো না।
আমি দুঃখিত কোয়াকম্প।
তোমার সাথে আমি পুরো বিষয়টা নিয়ে আলাপ করতে চাই। আমি নিশ্চিত তুমি আর আমি কিছু ব্যাপারে একমত হতে পারব-
না কোয়াকম্প। সেটা আর সম্ভব নয়। রিওন তার পকেট থেকে রিভলবারটা বের করে তার ম্যাগাজিনটা খুলে পরীক্ষা করে নিয়ে দুই পা এগিয়ে গিয়ে বড় ফ্রেমের ঢাকনাটা খুলে নেয়। পাশাপাশি ছয়টা সোনালি প্রসেসর সাজানো রয়েছে, ছোট টিউব দিয়ে তরল নাইট্রোজেন সেই প্রসেসরগুলোকে শীতল করে রাখছে। রিওন তার রিভলবারটা উঁচু করল ঠিক তখন আবার কোয়াকম্পের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। সেটি ক্লান্ত গলায় বলল, রিওন। তুমি খুব বড় ভুল করছ রিওন। তুমি আমার কথা না শুনে খুব বড় ভুল করছ।