ক্রানা একটু অবাক হয়ে কাটুঙ্কার দিকে তাকাল। বলল, ঠিকই বলেছ তুমি! অস্ত্র খুবই অবাক একটা জিনিস।
মাজুর তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা দিয়ে অনির্দিষ্টভাবে এক ঝক গুলি করে বলল, এক শ ভাগ সত্যি কথা, গুলি করতে কী ভালোই না লাগে। শব্দটা কী সুন্দর, হাতের নিচে যে ঝাঁকুনিটা দেয় সেটা অসাধারণ। মনে হয় এই অস্ত্রটা একটা জীবন্ত প্রাণী, তাই না?
দ্রীমান মাথা নাড়ল, বলল, ঠিকই বলেছ, অস্ত্র খুব চমৎকার একটা জিনিস। নার্ভকে শান্ত রাখার জন্য এর থেকে ভালো কিছু আর হতে পারে না।
কাটুস্কা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ইয়টের একজন ক্রুকে ঠিক এ রকম সময়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সে থেমে গেল। মানুষটির রোদেপোড়া চেহারা, কঠিন মুখ এবং নীল চোখ। মাথার সামনের দিকে চুল হালকা হয়ে এসেছে। কাছাকাছি এসে বলল, তোমাদের অস্ত্র চালানো কেমন হচ্ছে?
মাজুর বলল, খুব ভালো। মোটামুটি টার্গেট ফেলে দিতে পারছি।
দ্রীমান বলল, যত কঠিন হবে ভেবেছিলাম মোটেও তত কঠিন নয়।
কঠিন চেহারার মানুষটি হা হা করে হেসে বলল, ইয়টের ডেক থেকে গুলি করছ, কঠিন মনে হবে কেন? যখন সাগর-স্কুটারে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে ছুটে যেতে যেতে গুলি করবে তখন বুঝবে কাজটা সহজ না কঠিন।
কাটুস্কা জানতে চাইল, সেটা আমরা কখন করব?
এখনই। আমি সেজন্য এসেছি।
মাজুর আনন্দের মতো একটা শব্দ করল, বলল, চমৎকার। চল তা হলে, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
ক্রানা বলল, আমরা জলমানবদের দেখা পাব কখন?
সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। কঠিন চেহারার মানুষটি বলল, জলমানবদের কাছাকাছি নেবার আগে তোমাদের সাগর-স্কুটারে চড়া শিখতে হবে। সেখান থেকে গুলি করা শিখতে হবে। এখনো অনেক কাজ বাকি। তোমাদের এত তাড়াহুড়ো কিসের?
কাটুস্কা হেসে বলল, নাই। আমাদের কোনো তাড়াহুড়ো নেই। সব মিলিয়ে শিখতে কত দিন লাগবে?
কঠিন চেহারার মানুষটি একটু হাসল এবং হাসির কারণে তাকে হঠাৎ সহৃদয় একজন মানুষের মতো দেখায়, সে হাসতে হাসতে বলল, জলমানব শিকার হচ্ছে এক ধরনের স্পোর্টস। এটি কোনো নিষ্ঠুরতা নয়, কোনো যুদ্ধ নয়। জলমানব হচ্ছে মানুষের অপভ্রংশ, তাই তাদের আছে মানুষের বুদ্ধি। তারা পানিতে ভেসে থাকতে ব্যবহার করে ডলফিন, পানিতে ডলফিন থেকে সাবলীল কোনো প্রাণী নেই। মানুষ এবং ডলফিন এই দুই প্রাণী মিলে তৈরি হয় একটা অসাধারণ সমন্বয়। তাদের গুলি করা সোজা কথা নয়। তোমাদের সেটা সময় নিয়ে শিখতে হবে। সেজন্য তোমাদের পরিশ্রম করতে হবে।
কাজেই পরের কয়েকদিন তারা সমুদ্রের পানিতে সাগর-স্কুটার চালানো শিখল। হাইড্রোজেন সেলের শক্তিশালী ইঞ্জিন গর্জন করে উঠতে থাকে আর শুকনো এলাকার চারজন তরুণ তরুণী সাগর-স্কুটারে করে প্রচণ্ড গতিতে পানি কেটে ছুটে যেতে থাকে। একবার সাগর স্কুটারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি দখলে নিয়ে নেওয়ার পর তারা এক হাতে হ্যান্ডেলটা ধরে রেখে অন্য হাতে গুলি করা শিখতে রু করল। কাজটি কঠিন এবং বিপজ্জনক। বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে তারা তৃতীয় দিনের মাথায় ব্যাপারটা মোটামুটি শিখে নিল। চতুর্থ দিন। ইয়টের ক্রুরা তাদের একটা পরীক্ষা নিল। নানা ধরনের চলমান টার্গেটকে তাদের গুলি করতে হল, পানিতে না ডুবে তারা যখন সফলভাবে টার্গেটে গুলি করতে পারল তখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তাদের ট্রেনিং সমাপ্ত করে দেওয়া হল।
সেই রাতে একটা বিশেষ ভোজর আয়োজন করা হয়েছে। ইয়টের ডেকে জ্বলন্ত আগুনে একটা সামুদ্রিক মাছ ঝলসে খেতে খেতে সবাই কথা বলছে। উত্তেজক পানীয় খাবার কারণে সবার ভেতরেই এক ধরনের ফুরফুরে আনন্দ। ইয়টের ক্রুদের পক্ষ থেকে একসময় একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কাটুঙ্কা, কানা, দ্রীমান এবং মাজুর আমি আমার এই ইয়টের পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তেজনাময় স্পোর্টসের জন্য তোমরা এখন প্রস্তুত। তোমাদের অভিনন্দন।
মাজুর হাত উচিয়ে একটা আনন্দের মতো শব্দ করল, অন্যরাও তাতে যোগ দিল। মানুষটি বলল, আমি খুব আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা জলমানবের একটা আস্তানার খোঁজ পেয়েছি। আমাদের ইয়ট সেদিকে রওনা দিচ্ছে। আমরা আশা করছি আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমরা তার কাছাকাছি পৌঁছে যাব। আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তোমরা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তেজনাময় স্পোর্টসে অংশ নেবে। তোমাদের অভিনন্দন।
কাটুস্কা তার উত্তেজক পানীয়ের গ্লাসটা ঊপরে তুলে আনন্দে একটা চিৎকার করে ওঠে, সাথে সাথে অন্য সবাই সেই চিৎকারে যোগ দেয়। ছেলেমানুষি আনন্দে তারা হিহি করে হাসতে থাকে, একজন আরেকজনের ওপর ঢলে পড়তে থাকে।
গভীর রাতে ইয়টের ডেকে শুয়ে শুয়ে আকাশের নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে কাটুস্কার মনে হয়, মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে সত্যি এক ধরনের আনন্দ আছে। কাটুস্কার মনে হয় তার। কী সৌভাগ্য যে সে মানুষ হয়ে জন্মেছিল। তাই সে এই আনন্দ আর উত্তেজনা উপভোগ করতে পারছে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে হঠাৎ তার মনে হল তার জীবনের এই আনন্দ আর উত্তেজনা কি সত্যি? নাকি সেটা নিজের কাছে নিজের করা এক ধরনের অভিনয়? মানুষ কি কখনো নিজের কাছে নিজে অভিনয় করে? করতে পারে?
০৫. কায়ীরা চিন্তিত মুখে বলল
কায়ীরা চিন্তিত মুখে বলল, দূর সমুদ্রে একটা সাদা ইয়ট দেখা গেছে।