কাটুস্কা বলল, না বাবা, কৌতূহল।
উপগ্রহের ছবি কী বলে? আস্তানাটা আছে, না নেই?
নেই। একটু আগে ছোট ঘোট কয়টা ভাসমান দ্বীপের মতো ছিল। এখন সেখানে কিছু নেই।
রিওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সব ভেসে গেছে।
এমনকি হতে পারে যে তারা কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে?
রিওন শব্দ করে হেসে বলল, নিরাপদ আশ্রয়টা কোথায়? চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
কাটুস্কা মাথা নাড়ল, বলল, তা ঠিক।
রিওন চলে যাচ্ছিল, কাটুস্কা আবার তাকে থামাল, বাবা।
কী কাটুস্কা?
তুমি কয় দিন আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে আমি জন্মদিনে কী চাই। মনে আছে?
হ্যাঁ কাটুস্কা। মনে আছে। তুমি কী চাও?
দশ হাজার ইউনিট।
রিওন একটু অবাক হয়ে বলল, এত ইউনিট দিয়ে কী করবে তুমি?
সমুদ্রে একটা অ্যাডভেঞ্চার পার্টি যায়, দশ হাজার ইউনিট তার ফি। খুব নাকি মজা হয়।
তুমি কোথা থেকে তার খোঁজ পেলে?
মাজুর বলেছে। মাজুরের কথা মনে আছে? আমাদের ইনস্টিটিউটে পড়ে।
হ্যাঁ, মনে আছে।
দেবে তো দশ হাজার ইউনিট?
রিওন এক মুহূর্ত কী একটা ভেবে বলল, দেব। অবশ্যই দেব, কাটুস্কা।
.
ইনস্টিটিউটের ক্লাসঘরে জানালার পাশে কাটুস্কা তার নির্ধারিত সিটে বসে অন্যমনস্কভাবে বাইরে তাকিয়ে ছিল। সামনে বড় ডেস্কে তাদের মধ্যবয়সী ইনস্ট্রাক্টর ছোট ব্যাগটি রেখে সেখান থেকে ইন্টারফেসের ছোট মডিউলটা বের করতে করতে বলল, তোমাদের অভিনন্দন। তোমরা সবাই টাইফুনের গতিপথটি সফলভাবে বের করতে পেরেছ। তোমাদের হিসাবের সঙ্গে প্রকৃত গতিপথের বিচ্যুতি মাত্র দশমিক শূন্য শূন্য তিন শতাংশ। তোমাদের সবাইকে অভিনন্দন।
ক্লাসঘরে বসে থাকা ছেলেমেয়েরা আনন্দের মতো এক ধরনের শব্দ করল। কাটুস্কা ভুরু কুঁচকে সবার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারা অভিনন্দন পাওয়ার মতো এমন কী কাজ করেছে সে এখনো বুঝতে পারে নি।
মধ্যবয়সী ইনস্ট্রাক্টর ডেস্কের সামনে কয়েকবার পায়চারি করে মুখে এক ধরনের গাম্ভীর্য নিয়ে এসে খানিকটা নাটকীয়ভাবে বলল, তোমরা কোয়াকম্প ব্যবহার করার একটা পর্যায় শেষ করেছ। এখন তোমরা তার পরের পর্যায়ে যাবে। এই পর্যায়ে যাওয়ার জন্য তোমরা নিশ্চয়ই অনেক দিন থেকে অপেক্ষা করছ, কারণ যারা এই পর্যায়ে পৌঁছায় তারা কোয়াকম্প ব্যবহার করে সিনথেসিস করতে পারে। এই সুযোগটি গ্রহণ করতে হলে তোমাদের নিজস্ব জিনেটিক কোডিং ব্যবহার করতে হয় নিরাপত্তার কারণে। তোমাদের অভিনন্দন। অনেক অভিনন্দন।
কাটুস্কার কী মনে হল কে জানে, হঠাৎ হাত তুলে বলল, তুমি একটু পরপর আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছ কেন? আমরা কী করেছি?
মধ্যবয়সী ইনস্ট্রাক্টর বলল, তোমরা কোয়াকম্প ব্যবহারের একটা নূতন স্তরে পৌঁছেছ। টাইফুনের গতিবিধি নিখুঁতভাবে বের করার জন্য তোমাদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
কাটুস্কা বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একটা বাচ্চা ছেলেও কোয়াকম্প ব্যবহার করতে পারবে। এখানে-সেখানে দুই-চারটা সুইচে চাপ দেওয়া, দুই-চারটা তথ্য খুঁজে বের করা-এর মধ্যে কোন কাজটা অভিনন্দন পাওয়ার মতো?
মধ্যবয়স্ক ইনস্ট্রাক্টর কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, ইতস্তত করে বলল, কিন্তু তোমাদের মতো এই পর্যায়ে পৌঁছায় খুব অল্প কয়জন মানুষ।
তার কারণ আমাদের বাবাদের ক্ষমতা বেশি, তারা আমাদের এই ইনষ্টিটিউটে ভর্তি করিয়েছেন। আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। সব কৃতিত্ব আমাদের বাবাদের।
ক্লাসরুমের মাঝামাঝি বসে থাকা মাজুর হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল। কাটুস্কা চোখ পাকিয়ে বলল, কী হল, তুমি হাসছ কেন? আমি কি হাসির কথা বলেছি?
মাজুর মাথা নাড়ে, বলে, না, তুমি মোটেই হাসির কথা বল নাই।
তা হলে কেন হাসছ?
হাসছি, কারণ খুব সহজ একটা জিনিস তুমি বুঝেছ এত দেরিতে।
কাটুস্কা চোখ পাকিয়ে বলল, এটা তোমরা আগে থেকে জান?
হ্যাঁ। জানি। তবে আমরা তোমার মতো নাবালিকা না, তাই এটা নিয়ে চেঁচামেচি করি না।
কাটুস্কা রেগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু মধ্যবয়স্ক ইনস্ট্রাক্টর তাকে থামিয়ে দিল। হাত তুলে বলল, অনেক হয়েছে। আমরা যে কাজ করতে এসেছি সেই কাজ করি।
কাটুস্কা একটা নিঃশ্বাস ফেলে তার টেবিলের মনিটরটি নিজের কাছে টেনে নেয়।
.
ক্লাসের শেষে ছোট করিডরে সবাই একত্র হয়েছে। মাজুর তার উত্তেজক পানীয়ে চুমুক দিয়ে বলল, আচ্ছা কাটুস্কা, তোমার হয়েছেটা কী? তুমি সব সময় এত রেগে থাক কেন?
দ্রীমান বলল, হ্যাঁ, কী হয়েছে তোমার?
কাটুস্কা মাথা নাড়ল, বলল, আমার কিছু হয় নি।
ক্রানা মাথা নেড়ে বলল, উঁহু, তোমার কিছু একটা হয়েছে, কিছু একটা তোমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে।
কাটুস্কা মাথা নেড়ে বলল, আমাকে নূতন কিছু যন্ত্রণা দিচ্ছে না।
তা হলে? পুরোনো কিছু যন্ত্রণা দিচ্ছে?
কাটুস্কা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, না না, এটা ঠিক যন্ত্রণা নয়। তবে
তবে কী?
তোমরা জান আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা এত বেশি আত্মহত্যা করে কেন? শতকরা প্রায় বারো ভাগ?
মাজুর গম্ভীর হয়ে বলল, আত্মহত্যা এক ধরনের রোগ।
কাটুস্কা বলল, তা হলে আমি অন্যভাবে প্রশ্ন করি, আমাদের মতো কমবয়সীদের মধ্যে এই রোগটি এত বেশি কেন?
দ্রীমান বলল, এ তো সব সময়ই ছিল।
না। ছিল না। যখন পৃথিবীটা স্বাভাবিক ছিল তখন আমাদের মতো কমবয়সীরা এত বেশি আত্মহত্যা করত না।