বেশ। তুমি তা হলে কী হতে চাও?
আমি আমার নিজের থাকতে চাই।
নিজ বলে কিছু নেই। তোমার মুক্তি হয়েছে। তুমি এখন সব। তুমি এখন আমার বিশাল অস্তিত্বের অংশ। তুমি এখন
আমি কি সময়কে পিছু নিয়ে যেতে পারি?
পিছু?
হ্যাঁ।
কত পিছু?
আমার শেষ অংশটুকু। জীবনের শেষ অংশটুকু?
কী বলছ তুমি? সেটি অর্থহীন মূল্যহীন তুচ্ছ একটি পরীক্ষা। নগণ্য একটি প্রক্রিয়া।
আমি তবু আরো একবার সেটি দেখতে চাই। আরো একবার তার ভিতর দিয়ে যেতে চাই। আরো একবার
কী বলছ তুমি?
আমি সত্যি বলছি।
কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না। তারপর কেউ একজন একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, বেশ।
.
হেমন্তের কুয়াশা ঢাকা পথে কয়েস হেঁটে যাচ্ছে। অন্ধকার নেমে এসেছে, জ্যোৎস্নায় এক ধরনের আলো–আঁধারের খেলা নেমে এসেছে। অনেক দূরে কোথাও একটা কুকুর ডাকল, ঝিঁঝি পোকা কর্কশ স্বরে ডাকছে।
কয়েসের হাত পিছন থেকে বাধা, নাইলনের দড়ি টান দিয়ে পিছনের মানুষটি বলল, এখানে দাঁড়া।
কয়েস হঠাৎ করে বুঝতে পারল সে তার জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে। তার সারা শরীর অবশ হয়ে আসে। হঠাৎ করে মনে হয় তার কিছুতেই কিছু আসে–যায় না। পিছনের মানুষটি বলল, হাঁটু গেড়ে বস। কয়েস হাঁটু গেড়ে বসল। পিছনের মানুষটা হেঁটে কয়েসের সামনে এসে দাঁড়াল। একটা ধাতব শব্দ শুনে কয়েস মাথা তুলে তাকাল। হঠাৎ করে মনে হতে থাকে এই ব্যাপারটি আগে কখনো ঘটেছে। কখন ঘটেছে সে মনে করতে পারে না। মানুষটি হাতে একটি বেটপ রিভলবার নিয়ে তার কপালের দিকে তাক করে ধরে। নিচু গলায় বলে, দ্যাখ–এখন তুই নড়িস না। তা হলে সোজা কাজটা কঠিন হয়ে যাবে। চুপচাপ বসে থাক
কয়েস বাধা দিয়ে বলল, মাজহার সাহেব–
মানুষটি থতমত খেয়ে থেমে যায়। ভুরু কুঁচকে সে কয়েসের দিকে তাকাল, বলল, কী বললি?
কিছু না। বলছিলাম কী, কিছুতেই আর কিছু আসে–যায় না। আপনার ওপর আমার কোনো রাগ নেই। আমি জানি এইটা একটা বিজনেস।
মানুষটা কয়েক মুহূর্ত রিভলবারটা ধরে রেখে ধীরে ধীরে হাতটা নামিয়ে আনে। একটা নিশ্বাস ফেলে সে নদীর দিকে তাকাল। তারপর অন্যমনস্কভাবে নদীর পানির দিকে এগিয়ে গেল। দূরে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ডাকছে।
কয়েস নিচু গলায় ডাকল, মাওলা সাহেব। দড়িটা একটু খুলে দেবেন? হাতে বড় জোরে বেঁধেছেন।
মাজহার নামের মানুষটি, যার আসল নাম মাওলা বকশ, মাথা ঘুরিয়ে কয়েসের দিকে তাকাল, কাঁপা গলায় বলল, কী বললি?
আপনার নাম তো আসলে মাওলা বকশ। তাই না?
তুই কেমন করে জানিস?
আমি জানি। আপনি আর আমি তো আসলে একই মানুষ। তাই না?
মহাজাগতিক কিউরেটর
সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তারা বেশ সন্তুষ্ট হল। প্রথম প্রাণীটি বলল, এখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে।
হ্যাঁ।
বেশ পরিণত প্রাণ। অনেক ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রজাতি। একেবারে ক্ষুদ্র এককোষী থেকে শুরু করে লক্ষ–কোটি কোষের প্রাণী।
দ্বিতীয় প্রাণীটি আরো একটু খুঁটিয়ে দেখে বলল, না। আসলে এটি জটিল প্রাণ নয়। খুব সহজ এবং সাধারণ।
কেন? সাধারণ কেন বলছ? তাকিয়ে দেখ কত ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণ। শুরু হয়েছে ভাইরাস থেকে, প্রকৃতপক্ষে ভাইরাস আলাদাভাবে প্রাণহীন বলা যায়। অন্য কোনো প্রাণীর সংস্পর্শে এলেই তার মাঝে জীবনের লক্ষণ দেখা যায়। তারপর রয়েছে এককোষী প্রাণ, পরজীবী ব্যাক্টেরিয়া। তারপর আছে গাছপালা, এক জায়গায় স্থির। আলোক সংশ্লেষণ দিয়ে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে নিচ্ছে। পদ্ধতিটা বেশ চমৎকার। গাছপালা ছাড়াও আছে কীটপতঙ্গ। তাকিয়ে দেখ কত রকম কীটপতঙ্গ। পানিতেও নানা ধরনের প্রাণী আছে, তাদের বেঁচে থাকার পদ্ধতি ভিন্ন। ডাঙ্গাতেও নানা ধরনের প্রাণী, কিছু কিছু শীতল রক্তের কিছু কিছু। উষ্ণ রক্তের। উষ্ণ রক্তের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটির ভিতরে আবার অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর বুদ্ধির বিকাশ হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু সব আসলে বাহ্যিক। এই ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাঝে আসলে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই।
প্রথম প্রাণীটি বলল, আমি বুঝতে পারছি না তুমি কেন এই পার্থক্যকে বাহ্যিক বলছ।
তুমি আরেকটু খুঁটিয়ে দেখ। এই ভিন্ন প্রজাতি কী দিয়ে তৈরি হয়েছে দেখ।
প্রথম প্রাণীটি একটু খুঁটিয়ে দেখে বিস্ময়সূচক শব্দ করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। এই প্রাণীগুলো সব একইভাবে তৈরি হয়েছে। সব প্রাণীর জন্য মূল গঠনটি হচ্ছে ডিএনএ দিয়ে, সব প্রাণীর ডিএনএ একই রকম, সবগুলো একই বেস পেয়ার দিয়ে তৈরি। সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে জটিল প্রাণীটির একই রকম গঠন। প্রাণীটির বিকাশের নীলনকশা এই ডিএনএ দিয়ে তৈরি করে রাখা আছে। কোনো প্রাণীর নীলনকশা সহজ, কোনো প্রাণীর নীলনকশা জটিল–এটুকুই হচ্ছে পার্থক্য।
হ্যাঁ। দ্বিতীয় প্রাণীটি বলল, আমরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব গ্রহ–নক্ষত্র ঘুরে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীগুলোকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি–কাজটি সহজ নয়। এই গ্রহ থেকেও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীটি খুঁজে বের করতে হবে–যেহেতু সবগুলো প্রাণীর গঠন একই রকম, কাজটি আরো কঠিন হয়ে গেল।
সময় নষ্ট না করে কাজ শুরু করে দেওয়া যাক।
হ্যাঁ।
এই ভাইরাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়া বেশি ছোট, এর গঠন এত সহজ এর মাঝে কোনো বৈচিত্র্য নেই।