ডক্টর আজহার সিরিঞ্জটা নিয়ে খুব সহজ ভঙ্গিতে আবিদ হাসানের দিকে এগিয়ে এল। মানুষটি কোনো কিছু সন্দেহ করে নি। আবিদ হাসানের বুকের ভিতর ধকধক্ করে শব্দ করতে থাকে–তিনি একটি মাত্র সুযোগ পাবেন,সেই সুযোগটি কি তিনি ব্যবহার করতে পারবেন? জীবনে কখনো কোনো মানুষকে আঘাত করেন নি, কীভাবে কোথায় কখন আঘাত করতে হয় সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা নই। কোথায় জানি দেখেছিলেন মাথার পিছনে আঘাত করলে মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। তিনি কি পারবেন সেখানে আঘাত করতে? আবিদ হাসান নিশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকেন।
ডক্টর আজহার আরেকটু কাছে এগিয়ে এল, সিরিঞ্জটা উপরে তুলে সুচের দিকে তাকিয়েছে, এক মুহূর্তের জন্য তার ওপর থেকে চোখ সরিয়েছে, সাথে সাথে আবিদ হাসান হাত মুক্ত করে লোহার রডটা তুলে নিলেন। ডক্টর আজহার হতচকিত হয়ে আবিদ হাসানের দিকে তাকাল এবং কিছু বোঝার আগেই আবিদ হাসান তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ডক্টর আজহারের মাথায় আঘাত করলেন। আত্মরক্ষার জন্য ডক্টর আজহার মাথাটা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু কোনো লাভ হল না, প্রচণ্ড আঘাতে আর্তচিৎকার করে সে নিচে পড়ে গেল।
আবিদ হাসান দুই হাতে রডটি ধরে আরো কাছে এগিয়ে গেলেন, ডক্টর আজহার ওঠার চেষ্টা করলে আবার আঘাত করবেন, কিন্তু মানুষটার ওঠার ক্ষমতা আছে বলে মনে হল না। হাত থেকে সিরিঞ্জটা ছিটকে পড়েছে, আবিদ হাসান সেটি তুলে নিয়ে আসেন। মানুষকে তিনি কখনো ইনজেকশান দেন নি কিন্তু সেটি নিয়ে এখন ভাবনা–চিন্তা করার সময় নেই। সিরিঞ্জের সুচটা আজহারের হাতে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে ওষুধটা তার শরীরে ঢুকিয়ে দিলেন, দেখতে দেখতে ডক্টর আজহার নেতিয়ে পড়ল।
আবিদ হাসান বুক থেকে একটা নিশ্বাস বের করে দিলেন, পরিকল্পনার প্রথম অংশটুকু চমৎকারভাবে কাজ করেছে। এখন দ্বিতীয় অংশটুকু–এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া। আবিদ হাসান ডক্টর আজহারের গলায় ঝোলানো ব্যাজটা খুলে নিলেন–এটা ব্যবহার করে এই ঘর থেকে বের হওয়া যাবে।
ব্যাজে এক ধরনের ম্যাগনেটিক কোডিং রয়েছে সেটার সাহায্যে নিশ্চয়ই সব দরজা খুলে এই বিল্ডিং থেকে বের হওয়া যাবে কিন্তু তবু তিনি কোনো ঝুঁকি নিলেন না। ডক্টর আজহারের জ্যাকেটটা খুলে নিজে পরে নিলেন। দুজনের শরীরের কাঠামো মোটামুটি একরকম, হঠাৎ দেখলে বুঝতে পারবে না। সময় নষ্ট করে লাভ নেই, যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হওয়া যায়।
টুইটির কাছে গিয়ে আবিষ্কার করলেন সেটি নিথর হয়ে পড়ে আছে, বেঁচে আছে কি নেই বোঝার উপায় নেই। একটা নিশ্বাস ফেলে মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, টুইটিকে বাচানোর ক্ষমতা তার নেই। সবচেয়ে বড় কথা টুইটির জন্যে বেঁচে না থাকাই সম্ভবত বেশি মানবিক। আবিদ হাসান টেবিলের পাশে একটা এটাচি কেস আবিষ্কার করলেন। সম্ভবত ডক্টর আজহারের। ভিতরে নানা ধরনের কাগজপত্র, আবিদ হাসান এটাচি কেসটি হাতে তুলে নিলেন–এখানকার কিছু প্রমাণ বাইরে নিয়ে যাওয়া দরকার।
দরজায় ব্যাজটি প্রবেশ করাতেই সেটি শব্দ করে খুলে গেল। বাইরে বড় করিডোর, উপরে পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা পরীক্ষা করছে, আবিদ হাসান সহজ ভঙ্গি করে হেঁটে যেতে শুরু করলেন। করিডোরের শেষ মাথায় আরেকটি দরজা। সেখানে ব্যাজটি প্রবেশ করাতেই একটা কর্কশ শব্দ শোনা গেল এবং সাথে সাথে তিনি একজন মানুষের গলায় স্বর শুনতে পেলেন, মানুষটি ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, ডক্টর ট্রিপল-এ তুমি চলে যাচ্ছ কেন?
আবিদ হাসানের হৃৎপিণ্ড প্রায় থমকে দাঁড়াল, অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করলেন। ডক্টর আজহারের ব্যাজ ব্যবহার করে বের হয়ে যাচ্ছেন বলে তাকে ডক্টর আজহার ভাবছে। সম্ভবত এই মুহূর্তে তাকে দেখতেও পাচ্ছে। আবিদ হাসান যথাসম্ভব মাথা নিচু করে বললেন, শরীর ভালো লাগছে না।
যে লোকটাকে ধরে এনেছি তার কী অবস্থা?
ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি।
গুড। ট্রান্সপ্লান্টের জন্য রেডি?
আবিদ হাসান কী বলবেন বুঝতে পারলেন না, অস্পষ্ট এক ধরনের শব্দ করলেন, হুস।
কনভেয়ার বেল্টে তুলেছ?
না।
ঠিক আছে দুশ্চিন্তা কোরো না, আমরা তুলে নেব।
থ্যাংকস।
আবিদ হাসান চলে যাচ্ছিলেন তখন আবার সিকিউরিটির মানুষটির গলায় স্বর শুনতে পারলেন, ডক্টর ট্রিপল-এ—
হুঁ।
তোমার গলার স্বর একেবারে অন্যরকম শোনাচ্ছে। আবিদ হাসান ভিতরে ভিতরে চমকে উঠলেও কষ্ট করে নিজেকে শান্ত রাখলেন, বললেন, তাই নাকি?
হ্যাঁ। কী ব্যাপার?
জানি না। হয়তো ফ্লু। দুপুর থেকেই গলাটা খুশখুশ করছে।
ও। যাও গিয়ে বিশ্রাম নাও।
আবিদ হাসান বুকের ভিতর থেকে একটা নিশ্বাস বের করে সাবধানে হেঁটে যেতে ক্ষ করলেন। সামনে আরো একটা দরজা, ব্যাজ ব্যবহার করে সেটা খুলে বের হয়ে এলেন। দরজার ওপরে ইংরেজিতে বড় বড় করে লেখা, কঠোর নিরাপত্তা অঞ্চল। শুধুমাত্র অনুমোদিত মানুষের জন্য।
সামনে একটা লিফট, লিফটের বোতাম স্পর্শ করতেই নিঃশব্দে দরজা খুলে গেল। আবিদ। হাসান ভিতরে ঢুকলেন। পেট ওয়ার্ল্ডের গোপন এলাকা থেকে তিনি বাইরে চলে এসেছেন। এখানকার মানুষজন সাধারণ মানুষ, এই ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের কিছু জানে না। আবিদ হাসান ডক্টর আজহারের ব্যাজটি পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন, সম্ভবত এই ব্যাজটির আর প্রয়োজন নেই।