আবিদ হাসান হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠলেন, তার হঠাৎ একটি নতুন জিনিস মনে হয়েছে। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে নয়–অন্য কোনোভাবে টুইটির বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো হয়েছে!
.
আবিদ হাসান অফিসে গিয়ে কাজে খুব একটা মন দিতে পারলেন না। সারাক্ষণ তার ভিতরে কিছু একটা খুঁতখুঁত করতে থাকল। দুপুরবেলা তিনি পেট ওয়ার্ল্ডে ফোন করলেন, মিষ্টি গলার একটি মেয়ে তার টেলিফোনের উত্তর দিল। আবিদ হাসান জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি জেরিন?
হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?
আমার নাম আবিদ হাসান।
জেরিন তাকে চিনতে পারল, খুশি হয়ে বলল, আমাদের টেস্ট কেস কেমন আছে আপনার বাসায়?
ভালো আছে।
চমৎকার। আমাদের স্টাফ নিয়মিত যাচ্ছে নিশ্চয়ই।
হ্যাঁ যাচ্ছে। খুব যত্ন করছে, কোনো সমস্যাই নেই।
খুব ভালো লাগল শুনে, তা এখন আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
আবিদ হাসান একটু ইতস্তত করে বললেন, আপনাদের যে কুকুর ছানাটি আমাদের বাসায় আছে সেটি নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন ছিল।
বেশ। আপনাকে আমি সার্ভিস সেন্টারে কানেকশান দিয়ে দিচ্ছি–
না, না। সার্ভিস সেন্টার নয়, আমি আসলে ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলতে চাই। উঁচু ম্যানেজমেন্ট। খুব জরুরি একটা ব্যাপারে।
জেরিন কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, ম্যানেজমেন্টের সবাই তো এখন ব্যস্ত, একটা বোর্ড মিটিঙে আছেন।
আমার ব্যাপারটি আসলে বোর্ড মিটিঙের মতোই জরুরি। আবিদ হাসান ঠাণ্ডা গলায় বললেন, ডক্টর আজহারকে বলেন যে আপনাদের কুকুরের মাথায় অস্ত্রোপচারের একটা ব্যাপার নিয়ে আমি কথা বলতে চাই।
জেরিন বলল, বেশ। আপনি এক মিনিট অপেক্ষা করুন।
আবিদ হাসান টেলিফোনে বিদেশী গান শুনতে শুনতে অপেক্ষা করতে লাগলেন। দীর্ঘ সময় পর টেলিফোনে খুট করে শব্দ হল এবং সাথে সাথে ডক্টর আজহারের গলা শুনতে পেলেন, গুড মর্নিং মিস্টার হাসান।
গুড মর্নিং।
আজহার বলল, আপনি কি একটা জরুরি ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে চান?
হ্যাঁ। আবিদ হাসান একটা নিশ্বাস নিয়ে বললেন, আমি ঠিক কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। আপনার সাথে আমি যখন কথা বলেছি তখন আপনি বলেছিলেন জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে আপনারা কুকুরের বুদ্ধিমত্তা বাড়িয়েছেন।
বলেছিলাম। সেটি নিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছে?
ঠিক সমস্যা নয়, কনফিউশান হয়েছে। আপনাদের কুকুর ছানাটির ইন্টেলিজেন্স আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। সোজা কথায় এটি অস্বাভাবিক বুদ্ধিমান। আমি পশুপাখির বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করে দেখেছি, আপনাদের কুকুর ছানার বুদ্ধিমত্তা ম্যামেলের মাঝে থাকা সম্ভব নয়।
টেলিফোনের অন্যপাশে ডক্টর আজহার উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠল, ম্যামেল বলতে যা বোঝায় আমাদের টেস্ট–কেস তা নয়। আপনাকে তো আমরা বলেছি জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী তৈরি করেছি।
তা হলে কুকুরটার মাথায় অপারেশনের চিহ্ন কেন?
অপারেশন?
হ্যাঁ।
ডক্টর আজহার কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার লক্ষ করেছেন মি. হাসান। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে যে বুদ্ধিমান প্রজাতি আমরা দাঁড় করিয়েছি তার মস্তিষ্কের সাইজ অনেক বড়। সাধারণ কুকুরের স্কালে সেটা গ্রো করতে পারে না। তাই সার্জারি করে স্কালের সাইজটি বড় করতে হয়।
এটি কি পশু নির্যাতনের মাঝে পড়ে না?
ডক্টর আজহার আবার হো হো করে হেসে বলল, এই দেশে মানুষ নির্যাতনের জন্যই আইন ঠিক করা হয় নি, পশু নির্যাতনের আইন করবে কে?
আবিদ হাসান একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, এই জন্যই কি আপনারা পেট ওয়ার্ল্ড তৈরি করার জন্য আমাদের দেশকে বেছে নিয়েছেন?
না। এই জন্য করি নি। গবেষণার জন্য পশুপাখি ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়। আমাদের মডার্ন মেডিসিন পুরোটাই তৈরি হয়েছে পশুপাখির ওপর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে। মানুষের জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আপনি যদি ভেজিটারিয়ান না হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিশ্চয়ই গরু ছাগল হাঁস মুরগিও খান।
আবিদ হাসান একটা নিশ্বাস ফেললেন, কোনো কথা বললেন না। ডক্টর আজহার বলল, আপনার সব কনফিউশান কি দূর হয়েছে হাসান সাহেব?
হ্যাঁ। হয়েছে। শুধু একটা ব্যাপার। ছোট একটা ব্যাপার।
কী ব্যাপার?
আপনি বলেছিলেন জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে বুদ্ধিমান কুকুর তৈরি করা সম্পর্কে আপনার একটা পেটেন্ট আছে।
ডক্টর আজহার এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, হ্যাঁ। কোনো সমস্যা?
হ্যাঁ। ছোট একটা সমস্যা। আমি ইন্টারনেটে আপনার পেটেন্টগুলো পরীক্ষা করে দেখছিলাম। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙে আপনার কোনো পেটেন্ট নেই।
ডক্টর আজহার দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বলল, আপনি–আপনি আমার পেটেন্টের খোঁজ নিয়েছেন?
হ্যাঁ। ইন্টারনেটের কারণে ঘরে বসে নেওয়া যায়। ব্যান্ড উইডথ বেশি নয় বলে সময় একটু বেশি লাগে। আপনার পেটেন্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে। এক প্রজাতির প্রাণীর ভিতরে অন্য প্রজাতির প্রাণীর টিস্যু বসিয়ে দেওয়ার উপরে।
ডক্টর আজহার চুপ করে রইল। আবিদ হাসান বললেন, আপনি আমার কাছে একটা মিথ্যা কথা বলেছেন। কেন বলেছেন জানি না। যে একটা মিথ্যা কথা বলতে পারে সে অসংখ্য মিথ্যা কথা বলতে পারে। কাজেই আমি আপনার কোন কথাটা বিশ্বাস করব বুঝতে পারছি না।