কী দেখেছ?
দেখেছি যে তুই কিছু একটা বললে সে কিছু একটা করতে পারে। এটা হচ্ছে এক ধরনের ট্রেনিং টুইটি এটা না বুঝে করছে।
নীলা বলল, কী বলছ তুমি আব্বু? টুইটি না বুঝে কিছু করে না। তুমি দেখতে চাও?
দেখা।
নীলা এবারে টুইটির দিকে তাকিয়ে বলল, টুইটি তুই কাঠি চিনিস? কাঠি?
আবিদ হাসান অবাক হয়ে দেখলেন টুইটি না–সূচকভাবে মাথা নাড়ল। নীলা তখন খুঁজে একটা কাঠি বের করে হাতে নিয়ে বলল, এই যে এইটা হচ্ছে কাঠি। বুঝেছিস?
টুইটি হ্যাঁ–সূচকভাবে মাথা নাড়ল। নীলা বলল, যা, এইবারে খুঁজে খুঁজে পাঁচটা কাঠি নিয়ে আয়।
টুইটি সাথে সাথে লেজ নেড়ে বাগানের দিকে ছুটে গেল এবং খুঁজে বের করে একটা কাঠি নিয়ে ছুটে এসে নীলার পায়ের কাছে রেখে দিয়ে আবার বাগানের দিকে ছুটে গেল। এইভাবে সত্যি সত্যি সে পাঁচটা কাঠি খুঁজে খুঁজে নীলার পায়ের কাছে এনে হাজির করল। নীলা এবারে যুদ্ধ জয়ের ভঙ্গি করে বলল, দেখেছ, আপু?
আবিদ হাসান এবারে সত্যি অবাক হলেন। কুকুর কত পর্যন্ত গুনতে পারে তিনি জানেন, কিন্তু সংখ্যাটি বেশি হবার কথা নয়। নীলাকে নিয়ে তিনি ঘুঁটিয়ে ঘুঁটিয়ে টুইটিকে পরীক্ষা করে সত্যি সত্যি হতবাক হয়ে গেলেন। এটি শুধু যে গুনতে পারে তাই নয়, এটি মানুষের যে কোনো কথা বুঝতে পারে, যে কোনো জিনিস শিখিয়ে দিলে এটি শিখে নিতে পারে। শুধু যে নানা ধরনের জিনিস চিনিয়ে দেওয়া যায় তাই নয়; এটি পুরোপুরি মানবিক কিছু ব্যাপারও বুঝতে পারে, ভালো, খারাপ বা আনন্দ এবং দুঃখ এই ধরনের ব্যাপার নিয়েও তার বেশ স্পষ্ট ধারণা আছে। নীলা যখন টুইটিকে একটা ছোট বাচ্চার নানা ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে একটা গল্প বলল, আবিদ হাসান অবাক হয়ে দেখলেন টুইটি গল্পটা সত্যি সত্যি একজন মানবশিশুর মতো উপভোগ করল। এটি একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার এবং আবিদ হাসান নিজের চোখে না দেখলে এটি তিনি বিশ্বাস করতেন না।
সেদিন গভীর রাতে আবিদ হাসান ইন্টারনেটে কুকুরের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নিজের কম্পিউটারে ডাউনলোড করে নিয়ে এলেন। মনোবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় চোখ বুলিয়ে পশুপাখির বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য নিয়ে পড়াশোনা করলেন। রাতে ঠিক ঘুমানোর আগে তিনি ডক্টর আসিফ আহমেদ আজহারের পেটেন্টটি একবার দেখার চেষ্টা করে একটি বিচিত্র জিনিস আবিষ্কার করলেন। তাঁর একাধিক পেটেন্ট রয়েছে সত্যি কিন্তু সেগুলো কুকুরের বুদ্ধিমত্তার জিন্সকে আলাদা করার উপরে নয়। তার পেটেন্টগুলো হচ্ছে একটি প্রাণীর দেহে ভিন্ন প্রজাতির একটি প্রাণীর কোষকে অনুপ্রবেশ করিয়ে সেখানে সেটিকে বাঁচিয়ে রাখার উপরে।
সে রাতে আবিদ হাসান অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারলেন না। ঠিক কী তাকে পীড়া দিচ্ছিল তিনি বুঝতে পারলেন না কিন্তু টুইটির পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তার ভিতরে এক ধরনের অশান্তি কাজ করতে লাগল। তার কেন জানি মনে হতে লাগল এখানে কোনো এক ধরনের অশুভ ষড়যন্ত্র চলছে।
০৪.
সকালে নাশতা খেতে খেতে আবিদ হাসান অন্যমনস্ক হয়ে যেতে লাগলেন। মুনিরা হাসান তার স্বামীকে ভালোই বুঝতে পারেন, খানিকক্ষণ চোখের কোনা দিয়ে তাকে লক্ষ করে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী হয়েছে? কী নিয়ে এত চিন্তা করছ?
টুইটিকে নিয়ে।
কী চিন্তা করছ?
আবিদ হাসান একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, তুমি তো দেখেছ টুইটির কী সাংঘাতিক বুদ্ধি!
হ্যাঁ। দেখেছি।
কিন্তু একটা কুকুরের এই ধরনের বুদ্ধি থাকা সম্ভব না। নিচু শ্রেণীর ম্যামেলের বুদ্ধির বেশিরভাগ হচ্ছে সহজাত বুদ্ধি বা ইন্সটিংক্ট। কিন্তু টুইটির বুদ্ধি অন্যরকম–সে শিখতে পারে এবং সেটা কাজে লাগাতে পারে। এই রকম বুদ্ধি শুধু মানুষেরই থাকতে পারে।
মুনিরা হাসান হাসলেন, বললেন, আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি টুইটি মানুষ না।
সেটাই তো সমস্যা। হিসাব মিলাতে পারছি না। পেট ওয়ার্ল্ডের পুরো ব্যাপারটা নিয়েই আমার ভিতরে এক ধরনের অস্বস্তি হচ্ছে। কেমন জানি অশান্তি হচ্ছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা বড় রকমের অন্যায় হচ্ছে।
মুনিরা হাসান হেসে বললেন, এই দেশে মানুষজনের জীবনেরই ঠিক নেই, কুকুরকে নিয়ে অন্যায় হলে আর কত বড় অন্যায় হবে? অন্ততপক্ষে এইটুকু তো বলতে পারবে টুইটি মহাসুখে আছে!
তা ঠিক আবিদ হাসান আবার অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন।
কাজে বের হয়ে যাবার সময় আবিদ হাসান টুইটির ঘরের পাশে একবার দাঁড়ালেন, তাকে দেখে টুইটি তার কাছে ছুটে এল, তাকে ঘিরে ছোট ছোট লাফ দিয়ে টুইটি আনন্দ প্রকাশ করার চেষ্টা করতে লাগল। আবিদ হাসান নরম.গলায় বললেন, কী রে টুইটি, তুই ভালো আছিস?
টুইটি মাথা নাড়ল, আবিদ হাসানের স্পষ্ট মনে হল টুইটি তার প্রশ্নটি বুঝতে পেরেছে। তিনি নিজের ভিতরে টুইটির জন্য এক ধরনের স্নেহ অনুভব করলেন। কুকুর ছানাটিকে তিনি নিজের কাছে টেনে আনলেন, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় কিছু কথা বললেন। ধবধবে সাদা লোমের ভিতর আঙুল প্রবেশ করিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হঠাৎ মনে হল তিনি কিছু একটা স্পর্শ করেছেন। আবিদ হাসান কৌতূহলী হয়ে টুইটির মাথার লোম সরিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, সেখানে একটি অস্ত্রোপচারের চিহ্ন। ছোটখাটো অস্ত্রোপচার নয়, বিশাল একটি অস্ত্রোপচার, মনে হয় পুরো খুলিটিই কেটে আলাদা করা হয়েছিল।