হ্যাঁ। সারা ঢাকা শহর খুঁজে আমি একটা ভালো কুকুর ছানা পেলাম না।
পাবেন না। মানুষটি সোজা হয়ে বলল, যে দেশে মানুষ খেতে পায় না সে দেশে কুকুর আপনি কেমন করে পাবেন?
আবিদ হাসান একটু অবাক হয়ে বললেন, তা হলে আপনারা এত হইচই করে কুকুরের ফার্ম কেন খুলেছেন?
এক্সপোর্টের জন্য। ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে পোষা পশুপাখির বিশাল মার্কেট। মাল্টি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি। আমরা সেই মার্কেটটা ধরতে চাই।
আবিদ হাসানকে একটু বিভ্রান্ত দেখাল, তিনি মাথা নেড়ে বললেন, আমি বিজনেস বুঝি না। কিন্তু কমনসেন্স থেকে মনে হয় এখানে কুকুরের ফার্ম করে সেই কুকুরকে বিদেশে রপ্তানি করা কিছুতেই একটা লাভজনক ব্যবসা হতে পারে না।
ডক্টর আজহার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই জেরিন একটা সুন্দর ট্রে করে দুই মগ কফি এবং একটা গবলেটে আইসক্রিম নিয়ে এসে ঢুকল। টেবিলে তাদের সামনে সেগুলো সাজিয়ে রেখে চলে যাবার পর ডক্টর আজহার কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, আপনি বলছেন বিজনেস বোঝেন না, কমনসেন্স থেকে বলছেন কিন্তু বিজনেস মানেই হল কমনসেন্স। আপনি ঠিকই বলেছেন এখান থেকে সাধারণ কুকুর রপ্তানি করা লাভজনক ব্যবসা নয়।
তা হলে?
আমরা সাধারণ কুকুর রপ্তানি করব না। তা হলে কী ধরনের কুকুর?
জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে আমরা এমন একটি প্রজাতি দাঁড় করিয়েছি সারা পৃথিবীতে তার কোনো জুড়ি নেই।
আবিদ হাসান ভুরু কুঁচকে তাকালেন, কিসে জুড়ি নেই?
বুদ্ধিমত্তায়।
বুদ্ধিমত্তা?
হ্যাঁ। অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা।
আবিদ হাসান ডক্টর আজহারের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, আমি বুঝতে পারছি না, জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে আপনি কুকুরের বুদ্ধিমত্তা কীভাবে বাড়াবেন?
আমার পিএইচডি থিসিসের নাম ছিল আইসোলেশান অফ জিন্স রেসপন্সিবল অফ ইনটেলিজেন্স ইন কেনাইন ফেমিলি। অর্থাৎ কুকুরের বুদ্ধিমত্তা জিন্সটি আলাদা করা।
কুকুরের বুদ্ধিমত্তায় একটি জিন্স আছে?
ডক্টর আজহার হাত নেড়ে বলল, এই আলোচনাগুলো আসলে কফি খেতে খেতে শেষ করা সম্ভব না, হ্যাঁ এবং না দিয়েও এর উত্তর হয় না। তবে আপনি যদি জানতে চান। আপনাকে বলতে পারি, বুদ্ধিমান কুকুরের জিন্স আলাদা করে অসাধারণ বুদ্ধিমান কুকুর তৈরি করায় আমার একটা পেটেন্ট রয়েছে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। সেই পেটেন্ট দেখে আমেরিকায় একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। পুরো দেড় বছর আলাপ–আলোচনা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত এখানে পেট ওয়ার্ল্ড তৈরি হয়েছে।
চমৎকার। আবিদ হাসান বললেন, আপনাকে অভিনন্দন।
এখন অভিনন্দন দেবেন না। পুরোটুকু দাঁড়িয়ে যাক, স্টেটসে প্রথম শিপমেন্ট পাঠাই তারপর দেবেন।
প্রথম শিপমেন্টের কত বাকি?
অনেক। মাত্র প্রথম কয়েকটি টেস্ট কেস তৈরি হয়েছে। চমৎকার কয়েকটা কুকুর ছানার জন্ম হয়েছে।
নীলা এতক্ষণ চুপ করে তার আব্বুর সাথে ডক্টর আজহারের কথা শুনছিল, এবারে প্রথমবার কথা বলে উঠল, সত্যি?
ডক্টর আজহার নীলার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। বলল, হ্যাঁ, সত্যি। প্রথম কেসগুলো করেছি টেরিয়ার দিয়ে। আস্তে আস্তে শার্পে সিটজ করে ল্যাব্রাডার যাব। স্টেটসে ল্যাব্রাডার প্রজাতি খুব পপুলার।
নীলা একবার তার বাবার মুখের দিকে তাকাল, তারপর ডক্টর আজহারের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কুকুর ছানাগুলো বিক্রি করবেন?
ডক্টর আজহার চোখ বড় বড় করে লীলার দিকে তাকিয়ে বলল, কিনবে তুমি?
নীলা মাথা নাড়ল এবং সাথে সাথে ডক্টর আজহার হা হা করে হেসে উঠে বলল, আমাদের এই কুকুর ছানাগুলোর দাম কত জান?
নীলা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, কত?
রিটেল মার্কেট–অর্থাৎ খোলা বাজারে সাড়ে সাত হাজার ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের টাকায় তিন লাখ থেকে বেশি!
নীলার মুখটি সাথে সাথে আশাভঙ্গের কারণে ম্লান হয়ে যায়। পুরো ব্যাপারটাকে তার কাছে এক ধরনের দুর্বোধ্য এবং নিষ্ঠুর রসিকতা বলে মনে হতে থাকে। ডক্টর আজহার নীলার দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে বলল, আছে তোমার কাছে তিন লাখ টাকা?
নীলা কিছু বলল না। ডক্টর আজহার সোজা হয়ে বসে হঠাৎ গলার স্বরে এক ধরনের গুরুত্বের ভাব এনে বলল, তোমার মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই, কারণ একটু আগে তোমার বাবার সাথে তোমাকে দেখে আমার মাথায় একটা চমৎকার আইডিয়া এসেছে। সে জন্য তোমাদের এখানে ডেকে এনেছি।
নীলার চোখ হঠাৎ চকচক করে ওঠে, কী আইডিয়া?
আমাদের এই কুকুর ছানাগুলোকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারা কতটুকু বদ্ধিমান হয়েছে, মানুষের সাথে থাকতে তারা কত পছন্দ করে, সেই ব্যাপারগুলো নিয়ে গবেষণা। করতে হবে। সেটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী জান?
কী?
তাদের কোনো একটি ফ্যামিলির সাথে থাকতে দেওয়া। কাজেই যদি দেখা যায় তুমি সেরকম একটা ফ্যামিলির মেয়ে তা হলে তোমাকে আমরা একটা কুকুর ছানা দিয়ে দেব।
সত্যি? নীলা আনন্দে চিৎকার করে উঠে বলল, সত্যি?
সত্যি। শুধু একটি ব্যাপার।
কী ব্যাপার?
কুকুর ছানাটিকে পোষার ব্যাপারে আমাদের কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। আর
আর?
আর মাঝে মাঝে কুকুর ছানাটিকে আমাদের পরীক্ষা করতে দিতে হবে। রাজি?
নীলা রাজি বলে চিৎকার করতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে থেমে তার আব্বুর দিকে অনুমতির জন্য তাকাল। আবিদ হাসান হেসে মাথা নেড়ে অনুমতি দিলেন। সাথে নীলা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল, রাজি!