সবাই চমকে ওঠে। দেখে মনে হল আমি কী বলছি কেউ ঠিক বুঝতে পারে নি। নাইনা ইতস্তত করে বলল, তু–তুমি কী বলছ?
আমি বলেছি আমাকে গ্রুস্টানের কাছে যেতে হবে।
কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলব না। ইশি কয়েকবার কিছু একটা বলার চেষ্টা করে থেমে যায়। ঠিক কী বলবে মনে বুঝতে পারছে না। রাইনুক শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে বলল, তুমি সত্যি যেতে চাও?
হ্যাঁ। আমি সত্যি যেতে চাই।
নাইনা প্রায় আর্ত স্বরে বলল, কেন? তুমি কেন যেতে চাও?
আমি টিয়ারাকে রক্ষা করতে চাই। তাকে কথা দিয়েছিলাম।
কিন্তু তুমি গ্রুস্টানের কাছে গিয়ে কেমন করে তাকে রক্ষা করবে? সেটা কি খুব বড় নির্বুদ্ধিতা হবে না? আবেগপ্রবণ হয়ে তো লাভ নেই–
আমাকে তোমরা বাধা দিও না। একবার চেষ্টা করতে দাও।
তুমি কেমন করে চেষ্টা করবে?
ইশি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি কেমন করে চেষ্টা করবে?
আমি জানি না।
জান না?
না। যদি আর কিছু না হয় আমি টিয়ারার কাছাকাছি থাকব।
কিন্তু টিয়ারাকে সিলাকিত করে রাখা হয়েছে।
আমাকেও সিলাকিত করবে। আমার সাথে টিয়ারার দেখা হবে সিলাকিত জগতে
আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম দাঁড়িয়ে থাকা সবাই কেমন জানি শিউরে ওঠে। আমি জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে নরম গলায় বললাম, আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যাবার আগে তোমাদের একটা দায়িত্ব দিতে চাই।
কী দায়িত্ব?
ক্লড–তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণে পৃথিবীর সব কম্পিউটারের অবস্থান, তাদের মাঝে যোগসূত্র সবকিছু বের করে এনেছ?
ক্লড মাথা নাড়ল। পকেট থেকে ছোট একটা ক্রিস্টাল ডিস্ক বের করে বলল, এই যে, এখানে সব আছে। দেখ–
না, আমি দেখতে চাই না। আমি এসবের কিছুই এখন জানতে চাই না। গ্রুস্টান নিশ্চয়ই আমাকে সিলাকিত করবে, আমার মস্তিষ্কে যা আছে সব সে জেনে যাবে।
ক্লড ডিস্কটি সরিয়ে নিয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। আমি বললাম, আমি এখন অন্য কিছু জানতে চাই না, কিন্তু একটি জিনিস আমাকে জানতে হবে। আমাকে সেটা বলবে–
কী জিনিস?
এই ভূখণ্ডের সবগুলো কম্পিউটারের অবস্থান আর তাদের যোগসূত্রগুলো যদি দেখ, আমি নিশ্চিত কয়েকটা যোগসূত্র খুব সুচিন্তিতভাবে কেটে দিতে পারলে পুরো নেটওয়ার্কটি দু ভাগে ভাগ করে ফেলা যাবে।
হ্যাঁ। ক্লড মাথা নেড়ে বলল, প্রশান্ত মহাসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে যে কয়েকটি যোগসূত্র চলে গেছে সেগুলো কেটে দিলে বলা যায় পুরো নেটওয়ার্ক দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে।
চমৎকার। তোমরা এখন ইচ্ছে করলে এই যোগসূত্রগুলো কেটে নেটওয়ার্কটি দুই ভাগে ভাগ করতে পারবে?
ক্লড ইশির দিকে তাকাল। ইশি খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, পারব।
তোমাদের কতক্ষণ সময় লাগবে?
ভালো কিছু বাই ভার্বাল পেয়েছি। যোগসূত্রগুলোর নিখুঁত অবস্থানও জানি, চেষ্টা করলে আট কি দশ ঘণ্টার মাঝে করা যাঝে মনে হয়। নাইনা তুমি কী বল?
নাইনা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ এর বেশি সময় লাগার কথা নয়।
চমৎকার। আমি ক্লডের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার এই যোগসূত্রগুলোর অবস্থান জানা দরকার।
কিন্তু সেটা কি খুব বিপজ্জনক কিছু তথ্য নয়? তুমি সত্যি জানতে চাও? তথ্যটি মনে রাখাও সহজ নয়। সমুদ্রোপকূলে অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ মাটির নিচে গভীরতা কোয়ার্টজ ফাইবার কেবলের ক্রমিক সংখ্যা অসংখ্য সংখ্যা পরিমাপ
তা ঠিক, আমি মাথা নাড়ি। আমি মনে রাখতে পারব না–কিন্তু তথ্যটা আমার প্রয়োজন, তুমি ক্রিশির কপোট্রনে সেটা প্রবেশ করিয়ে দাও।
ক্রিশি?
হা ক্রিশি। ক্রিশি অত্যন্ত নিম্ন স্তরের কম্পিউটার, তার কপোট্রনের তথ্যে গ্রুস্টানের কোনো কৌতূহল নেই। আমি তার কপোট্রনে করে তথ্যটি নিয়ে যাব।
ক্লড কী একটা কথা বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল, ঠিক আছে কুশান।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, আমি এখন যাব।
কেউ কোনো কথা বলল না। সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললাম, আমি যাবার পর তোমরা তোমাদের কাজ শুরু করতে পার। প্রথমে নেটওয়ার্কটি দু ভাগে ভাগ করবে। তারপর সেটিকে আরো দু ভাগ। আমরা যেভাবে ঠিক করেছিলাম।
ক্লড মাথা নাড়ল।
আমি একটু এগিয়ে যেতেই ইশি ডাকল, কুশান।
বল।
আমি জানি না তুমি কেন এটা করছ। খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে এটি আত্মহত্যা নয়, এটি আরো কিছু।
আমি কিছু না বলে একটু হাসার চেষ্টা করলাম।
আমাদের কি আবার দেখা হবে কুশান?
সেটা কি সত্যি জানার প্রয়োজন আছে?
ইশি একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, না, নেই।
আমি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি, কী বলব বুঝতে পারি না। রাইনুক আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আমার মাঝে মাঝে একটা কথা মনে পড়ে।
কী কথা?
তুমি প্রথম যেদিন গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলে, লিয়ানা বলেছিল পাহাড়ের উপর থেকে একটা পাথর গড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
হ্যাঁ। আমি মাথা নেড়ে বললাম, লিয়ানা বলেছিল পাথরটা গড়িয়ে পড়তে পড়তে ধস নামিয়ে দেবে না ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে কেউ জানে না।
রাইনুক নরম গলায় বলল, আমরা জানি একটা ধস নেমে আসছে। কিন্তু সেই ছোট পাথরটাকে আমি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে দেখতে চাই না।
ছোট পাথরটার কোনো গুরুত্ব নেই রাইনুক। কোনো গুরুত্ব নেই। বড় কথা ধস নেমেছে। সেটা কেউ থামাতে পারবে না