এলোমেলো চুলের একজন মানুষ উত্তেজিত হয়ে বলল, যদি প্রসেসরের সংখ্যা আর মেমোরিকে শক্তি হিসেবে ধরা যায় সেটি এক মাত্রার নয়, সেটি দুই মাত্রার। কারণ রিচি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখানো যায় যদি নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের সংখ্যা অর্ধেক করে দেয়া হয় গ্রুস্টানের ক্ষমতা কমে যাবে চার গুণ। যদি এক–চতুর্থাংশ করে দেয়া হয়–
লাল চুলের মেয়েটি আবার বাধা দিয়ে বলে, দ্রুন তুমি এখন থাম। খুঁটিনাটি পরে দেখা যাবে।
সবাই আবার আমার মুখের দিকে তাকাল। আমি বললাম, আমরা যদি কম্পিউটারগুলোর অবস্থান জানি তাহলে এটা খুব অসম্ভব নয় যে আমরা নেটওয়ার্কের বিশেষ বিশেষ জায়গা ধ্বংস করে সেটিকে দু ভাগ করে দিতে পারি। গ্রুস্টানের শক্তি তখন অর্ধেক হয়ে যাবে, আর দ্রুনের হিসেব যদি সত্যি হয় শক্তি হবে চার ভাগের এক ভাগ। যে অর্ধেক নেটওয়ার্কে আমরা আছি সেটাকে আবার যদি দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি তখন হঠাৎ করে গ্রুস্টানের শক্তি অনেক কমে যাবে। তারপর সেটাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করে–
একজন হঠাৎ মাটিতে পা দাপিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল, সহজ একেবারেই সহজ! আমরা গ্রুস্টানকে ধ্বংস করে দেব।
আমি বললাম, না এত সহজ না। এত সহজে উত্তেজিত হয়ো না। কম্পিউটারের নেটওয়ার্কটি একেবারে নিখুঁতভাবে জানতে হবে। সেটা কঠিন। তবে
তবে কী?
এখন আমি তোমাদের সাথে কথা বলতে বলতে ভাবছি। সেটা না করে যদি ঠাণ্ডা মাথায় সবাই মিলে ভাবি হয়তো আরো চমৎকার কোনো বুদ্ধি বের হয়ে যাবে।
লাল চুলের মেয়েটি বলল, এখন যেটা বের হয়েছে সেটাই তো অসাধারণ!
ইশি একটু হেসে বলল, এটা যদি অসাধারণ নাও হয় কোনো ক্ষতি নেই। তোমাকে এখনই এমন কিছু ভেবে বের করতে হবে যেটা সত্যি কাজ করবে, যেটা সত্যি অসাধারণ।
তাহলে?
তোমার এবং আমাদের সবার এমন একটা কিছু ভেবে বের করতে হবে যেটা আমাদের মাঝে আশা জাগিয়ে রাখবে। যত কমই হোক সাফল্যের একটু সম্ভাবনা থাকবে। সেই সাফল্যের মুখ চেয়ে আমরা কাজ করব–সবাই মিলে একসাথে, একটা বিরাট পরিবারের মতো।
ক্লড বলল, ইশি, কুশান এইমাত্র যেটা বলেছে সেটাতে সাফল্যের সম্ভাবনা একটু নয়, আমার ধারণা অনেকখানি। কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক বেশ কয়েকভাবে হতে পারে, কোয়ার্টজ ফাইবার কিংবা উপগ্রহ যোগাযোগে। উপগ্রহ যোগাযোগের বড় এন্টেনাগুলো যদি পাতলা এলুমিনিয়াম দিয়ে ঢেকে দিয়ে
আমি ক্লডকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, যখন গ্রুষ্টানকে বিচ্ছিন্ন করা শুরু করবে সে কি চুপ করে বসে থাকবে? থাকবে না। সে তার বিশাল রবোট বাহিনী নিয়ে আমাদের পিছনে হানা দিবে–
লাল চুলের মেয়েটি চোখ বড় বড় করে বলল আমরা প্রথম দিকে খুব বুদ্ধি খাটিয়ে যোগাযোগ নষ্ট করতে পারি। কোনো এক ঝড়ের রাতে উপগ্রহের এন্টেনা ফেলে দেব, নিয়ন্ত্রণহীন রবোটদের যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে কিছু ফাইবার কেটে দেব
সবাই মাথা নাড়ে। রাইনুক হাসতে হাসতে বলল, তোমরা একটা জিনিস লক্ষ করেছ?
কী?
আমরা এতদিন মানুষের বসতির মাঝে একটা বুদ্ধিহীন প্রাণীর মতো বেঁচেছিলাম। গ্রুস্টান আমাদের ছোটবড় সব কাজ করে দিত। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমরা বসতি থেকে পালিয়ে এখানে এসেছি প্রত্যেক মুহূর্তে আমরা নূতন নূতন জিনিস ভাবছি। নূতন নূতন বুদ্ধি বের করছি।
ইশি বলল, সেটা হচ্ছে গোড়ার কথা। মানুষের একটা স্বপ্ন থাকতে হয়। যদি স্বপ্ন থাকে তাহলে আশা থাকে। আর যদি আশা থাকে মানুষ সগ্রাম করে যেতে পারে। জীবন তাহলে কখনো অর্থহীন হয় না। আমাদের জীবন কখনো অর্থহীন হবে না। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কুশান!
আমি ইশির দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে বললাম, তোমাদের সবার ভিতরে এখন গভীর ভাব, অন্য এক ধরনের উদ্দীপনা। তাই আমি এখন মন খারাপ করা কিছু বলছি না। কিন্তু তোমরা নিশ্চয়ই জান প্রকৃতপক্ষে আমরা সত্যিকারের একটা দানবকে খেপিয়ে তুলতে যাচ্ছি। নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর একটা দানব–সে কী করবে আমরা এখনো জানি না।
টিয়ারা মাথা নেড়ে বলল, আমি এখন জানতেও চাই না।
.
রাত্রিবেলা বিশাল একটা আগুন জ্বালিয়ে আমরা সবাই গোল হয়ে বসে আছি। আমার পাশে বসেছে টিয়ারা, আমার এত কাছে যে আমি তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তাকে দেখে আমার বুকের মাঝে কেমন এক ধরনের কষ্ট হয়, কেন জানি না। তার অপূর্ব মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমি নিচু গলায় তাকে ডাকলাম, টিয়ারা।
বল।
মানুষের বসতিতে তোমার জন্যে একজন মানুষ অপেক্ষা করে আছে বলেছিলে।
হা। তাকে বহুকাল অপেক্ষা করে থাকতে হবে। টিয়ারা আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খিলখিল করে হেসে ফেলল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হল?
আমার হঠাৎ ক্লিচির কথা মনে পড়ল।
ক্লিচি?
হ্যাঁ। আমাদের বসতিতে গ্রুস্টানের ডান হাত। যে আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। সে যদি জানতে পারে আমি গ্রুস্টানকে ধ্বংস করার দলে যোগ দিয়েছি টিয়ারা হঠাৎ আবার খিলখিল করে হাসতে থাকে। তাকে দেখে আমার বুকের ভিতরে কিছু একটা নড়েচড়ে যায়।
টিয়ারা হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কুশান!
তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি?
কর।
সব মানুষের নিজের জীবনকে নিয়ে একটা স্বপ্ন থাকে। তোমার স্বপ্নটি কী?
আমি একটু হেসে বললাম, তুমি যেরকম ভাবছ সেরকম কোনো স্বপ্ন আমার নেই। তোমাদের বিশ্বাস করাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আসলেই আমি খুব সাধারণ মানুষ। আমার স্বপ্নও খুব সাধারণ।