আমি মাথা নাড়লাম, না।
তাহলে?
আমি এদের বন্দি। আমাকে গ্রুস্টানের কাছে ফেরত দেবার জন্যে এরা আমাকে ধরে রেখেছে।
মেয়েটি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি দেখতে পাই ধীরে ধীরে তার মুখ রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে। সে কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, অসম্ভব, এটি হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না।
আমার মেয়েটির জন্যে এক ধরনের কষ্ট হতে থাকে হঠাৎ করে নিজেকে এক ধরনের অপরাধী মনে হয় ঠিক কী জন্যে নিজেই বুঝতে পারি না।
মেয়েটি হঠাৎ হাঁটু ভেঙে বসে, তারপর এক ধরনের ভাঙা গলায় প্রায় আর্তনাদ করে উঠে বলল, এরা তাহলে আমাকে ধরে এনেছে কেন? কেন?
আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম না, মেয়েটার চোখের দিকেও তাকাতে পারলাম, দৃষ্টি সরিয়ে আমি মাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটির প্রশ্নের উত্তর দিল ক্রিশি। নিচু গলায় বলল, রবোটগুলো আপনাকে জৈবিক সম্ভোগে ব্যবহার করার জন্যে এনেছে
মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। ক্রিশি কী বলছে ঠিক বুঝতে পারল বলে মনে হয় না। খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, কী বলছ তুমি?
আমি সত্যি কথাই বলছি। ব্যাপারটি কী সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। রবোটগুলো তাদের কপোট্রনে কী একটা পরিবর্তন করেছে।
মেয়েটি হঠাৎ এগিয়ে এসে খপ করে আমার দুই হাত ধরে ফেলল, তারপর ব্যাকুল হয়ে বলল, এই রবোট ভুল বলেছে, বলছে না?
আমার নিজেকে একটি অমানুষের মতো মনে হল। কিন্তু কিছু করার নেই, মাথা নেড়ে বললাম, না।
কয়েক মুহূর্ত সে কোনো কথা বলল না। তারপর হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলল, তুমি আমাকে রক্ষা করবে, করবে না?
আমি অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকালাম, কী আশ্চর্য রকম সরল মেয়েটির জগৎ! কী ভয়ঙ্কর নিষ্পাপ। শুধু তাই নয় হঠাৎ করে বুঝতে পারি মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী। তার কোমল ত্বক, কালো রেশমের মতো চুল, চোখের ভিতর এক ধরনের বিচিত্র ব্যাকুলতা। লাল ঠোঁট, ঠোঁটের আড়ালে তার কী অপূর্ব স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো দাঁত। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অসহায় বোধ করতে থাকি। যে ভয়ঙ্কর রবোটের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে আমি আত্মহত্যা করার প্রস্তুতি নিয়েছি সেই রবোটের হাত থেকে তাকে আমি রক্ষা করব? সেটা কি সম্ভব?
মেয়েটা আমার দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে ছিল, আবার ভাঙা গলায় বলল, তুমি আমাকে রক্ষা করবে, করবে না?
আমি গভীর বেদনায় মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। হঠাৎ আমার কী হল জানি না, আমি তার রেশমের মতো কোমল চুলে হাত বুলিয়ে নরম গলায় বললাম, অবশ্যি আমি তোমাকে রক্ষা করব। অবশ্যি–
আমার নাম টিয়ারা।
অবশ্যি আমি তোমাকে রক্ষা করব টিয়ারা।
মেয়েটি হঠাৎ একটা ছোট শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
০৬. রবোটগুলো আমাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে
রবোটগুলো আমাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে নিজেদের মাঝে ব্যস্ত ছিল। আমাকে বন্দি করার সময় যেভাবে আমার শরীরে ট্রাকিওশান প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিল টিয়ারার বেলাতে তাও করল না। ছোট একটা ট্রাকিওশান তার হাঁটুতে বেঁধে দিয়েছে, চেষ্টা করলে সেটা খুলে ফেলা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু রবোটগুলো সম্ভবত জানে টিয়ারা কখনোই এই ট্রাকিওশান খুলে পালিয়ে যেতে পারবে না। টিয়ারা যখন আমার সাথে কথা বলছে আমি তাকিয়ে দেখতে পাই রবোটগুলো মিলে তাদের একজনের কপোট্রন খুলে সেখানে ঝুঁকে পড়েছে। ক্রিশির কথা সত্যি, তারা নিজেদের কপোট্রনে কিছু একটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে রবোটের দলটির দিকে এগিয়ে গেলাম। বাহাত্তর মাথা তুলে বলল, তুমি কিছু বলতে চাও?
হা। তোমরা টিয়ারাকে কেন ধরে এনেছ?
তোমার পঙ্কিল কুসুম সফটওয়ারটির কথা মনে আছে?
আমি মাথা নাড়লাম, হ্যাঁ মনে আছে।
তুমি সেটা নিয়ে যে কথাটি বলেছিলে সেটি সত্যি। এই সফটওয়ারটি উপভোগ করার জন্যে জৈবিক অনুভূতি থাকতে হয়। আমরা আমাদের কপোট্রন পরিবর্তন করে জৈবিক অনুভূতি তৈরি করেছি।
সত্যি?
হ্যাঁ, সত্যি। আমাদের অসাধ্য কিছু নয়। আমাদের মাঝে মানুষের সীমাবদ্ধতা নেই। আমরা এখন পঙ্কিল কুসুম উপভোগ করতে পারব। সেখানে আমাদের যেসব তথ্য শেখানো হবে আমরা সেগুলো টিয়ারার উপরে পরীক্ষা করে দেখব।
ও।
কুরু জিজ্ঞেস করল, আমরা চেষ্টা করেছি সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে আনতে। তোমার কী মনে হয়, টিয়ারা সুন্দরী?
হ্যাঁ, সুন্দরী।
তার দেহ? জৈবিক অনুভূতিতে দেহ গুরুত্বপূর্ণ। তার দেহের গঠন কি ভালো?
তার দেহের গঠন ভালো।
তার দেহের গঠন ভালো করে দেখার জন্যে তাকে কি অনাবৃত করার প্রয়োজন আছে?
আমি মাথা নাড়লাম, না নেই।
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। কুরু আবার জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আর কিছু বলতে চাও?
না। আমি আর কিছু বলতে চাই না। আমি ফিরে যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম, তোমরা কি পঙ্কিল কুসুমটি উপভোগ করেছ?
খানিকটা দেখেছি কিন্তু জৈবিক অনুভূতি নেই বলে উপভোগ করতে পারি নি।
সফটওয়ারের ত্রুটিটি কি চোখে পড়েছে?
কী ক্রটি?
তোমরা নিশ্চয়ই দেখবে। এই সফটওয়ারেরও একটা বড় ত্রুটি রয়েছে। হঠাৎ করে একটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য হাজির হয়।
কী দৃশ্য?
তোমরা নিজেরাই দেখবে।
বাহাত্তর হঠাৎ কঠিন গলায় বলল, আমি জানতে চাই দৃশ্যটিতে কী আছে।