“না। আমরা পারি না। টিউবের উপর কোড লেখা থাকে, যাদের সিস্টেম তের থেকে বেশি তারা কোড ভেদ করতে পারে।”
টিশা বলল, “ও।”
আমি তখন খুব সাহস এবং মনে হয় ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করে ফেলোম, বললাম, “তোমাকে কি আমরা একটা কথা বলতে পারি?”
“কী কথা?”
“আমাদেরকে মায়ী মায়ী যখন তার ট্রেইলারে বেঁধে রেখেছে তখন মেঝেতে আমরা একটা ক্রেনি-টিউব খুঁজে পেয়েছিলাম।”
রিয়ানার চোখ দুটো একটু বিস্ফারিত হয়ে গেল, এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, “তুমি কী বললে?”
কথা যখন শুরু করে দিয়েছি, সেটা শেষ করে ফেলতে হবে, এখন আর পেছানোর উপায় নেই। আমি প্রায় মরিয়া হয়ে বলেই ফেলোম, “তুমি কি এই ক্রেনি-টিউবটি তোমার মাথায় লাগিয়ে বলতে পারবে এটা কিসের টিউব?”
রিয়ানা কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলল না, তারপর ফিসফিস করে বলল, “তুমি যে কথাটা বলেছ সেটা এই দস্যুদলের আর কেউ যেন না শোনে, তাহলে তোমাদের খুব বড় বিপদ হবে। আর এই টিউবটা মায়ী মায়ীকে ফিরিয়ে দিয়ো। তোমরা সিস্টেম সতেরর ক্ষমতা জান না!”
আমি কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলাম। রিয়ানা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হেঁটে চলে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে পড়ল, ফিরে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “দাও ক্রেনি টিউবটি।”
আমি কাঁপা হাতে রিয়ানার হাতে টিউবটি দিলাম। সে মুঠি বন্ধ করে হাতটি পকেটে ঢুকিয়ে চলে গেল।
পরের দুটি দিন রিয়ানা কী করে সেটা নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে থাকলাম। সে যদি মায়ী মায়ীর কাছে আমাদের নিয়ে নালিশ করে দেয় তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে আমরা সেটা চিন্তাও করতে পারি না। রিয়ানা অবশ্যি নালিশ করল না। তৃতীয় দিন তার সাথে আবার আমাদের দেখা হলো। আমি আর টিশা তখন একটা বড় লরির টায়ারের ফাঁকে আটকে থাকা পাথরের টুকরোগুলো পরিষ্কার করছিলাম। রিয়ানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আমাদের কাজ করতে দেখল, যখন আশেপাশে কেউ নেই, তখন পকেট থেকে ক্রেনি টিউবটা বের করে আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নাও।”
আমি সেটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি পকেটে ঢুকিয়ে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কিসের টিউব?”
“সিস্টেম পনের।”
“তার মানে কী?”
“তার মানে এটা খুবই মূল্যবান। মায়ী মায়ী সিস্টেম সতের। এখানে সিস্টেম পনের মাত্র চারজন।”
রিয়ানা কেমন বিচিত্র দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।
আমি বললাম, “ক্রেনিয়াল টিউব আমাদের কোনো কাজে লাগে। তুমি এটা রেখে দিতে চাও? তুমিও সিস্টেম পনের হয়ে যাবে?”
রিয়ানা মাথা নাড়ল, বলল, “না। আমি সিস্টেম পনের হতে চাই। আমি যা তাই থাকতে চাই। সম্ভব হলে আমি একটা নিউট্রাল টিউব আমার মাথায় লাগিয়ে স্বাভাবিক মানুষ হতে চাই।”
দুইদিন পরে আমরা আবার যখন একটা লরির ইঞ্জিন পরিষ্কার করছি তখন আবার রিয়ানার সাথে দেখা হলো। আমি এদিক-সেদিক তাকিয়ে আমার পকেট থেকে দুটি ক্রেনি-টিউব বের করে মুঠি বন্ধ করে তার দিকে হাতটা এগিয়ে দিলাম। ধীরে ধীরে আমাদের সাহস বেড়েছে, মায়ী মায়ী যখন আবার আমাদেরকে ট্রেইলারের ভেতর রেখে বাইরে গেছে, আমরা এবারে তার বাক্স থেকে দুটি ক্রেনি-টিউব সরিয়ে এনেছি।
রিয়ানা জিজ্ঞেস করল, “তোমার হাতে কী?”
আমি মুঠি খুলে তাকে ক্রেনি-টিউব দুটি দেখালাম। রিয়ানা একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল, কেমন করে আমার হাতে দুটি ক্রেনি-টিউব এসেছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করল না। একটা টিউব হাতে নিয়ে তার গায়ে লেখা কোডটা পড়ে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা নিচু স্তরের শারীরিক আনন্দ পাবার টিউব।” তারপর দ্বিতীয়টা হাতে নিয়ে তার কোডটা পড়ে আমার হাতে ফেরত দিয়ে বলল, “এটা সিস্টেম সাত।”
টিশা জিজ্ঞেস করল, “তুমি মাথায় না লাগিয়েই কেমন করে বলে দিচ্ছ?”
“আমি কোড পড়েই বলে দিতে পারি। আমি কোডটা জানি।”
“কেমন করে জানলে?”
“যখন আমার ক্রেনিয়ালে সিস্টেম পনের লাগিয়েছিলাম তখন জেনেছি।” রিয়ানা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “তোমরা যদি লেখাপড়া জানতে তাহলে আমি তোমাদের কোডটা শিখিয়ে দিতে পারতাম।”
টিশা এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, “আমরা লেখাপড়া জানি।”
রিয়ানা কোনো কথা না বলে কিছুক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, “তোমরা যদি আমাকে একটা নিউট্রাল ক্রেনি টিউব এনে দিতে পার তাহলে আমি তোমাদের কোডটা শিখিয়ে দিতে পারি।”
টিশা ফিক করে হেসে ফেলল, বলল, “তুমি যদি আমাদের কোডটা শিখিয়ে দাও তাহলে আমরা তোমাকে একটা নিউট্রাল ক্রেনি টিউব এনে দিতে পারি!”
রিয়ানা বলল, “ঠিক আছে। আমি তোমাদের কোডটা শিখিয়ে দেব।”
রিয়ানা আমাদের কোডটা শিখিয়ে দেওয়ার দুদিন পর আমরা তাকে একটা নিউট্রাল ক্রেনি-টিউব খুঁজে এনে দিলাম। টিউবটা হাতে নিয়ে সে কিছুক্ষণ চুপচাপ আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি এখন আবার সত্যিকারের মানুষে হয়ে বেঁচে থাকতে পারব।”
ক্রেনি-টিউবের কোডটি জানার পর হঠাৎ করে আমার আর টিশার ক্ষমতা প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলল। আমরা এখন ক্রেনি-টিউবের ভেতরের আইসিগুলো ওলটপালট করে দেব। দস্যুদল ভয়ংকর দস্যু হওয়ার জন্য মাথার মাঝে একটা ক্রেনি-টিউব লাগিয়ে নিজের অজান্তেই নিরীহ দুর্বল একজন মানুষে পাল্টে যাবে!