রু মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, রিকি এখন পালাবে। তুমি দেখ, সে পালাবে। খুব ভয় পেয়েছে আজ।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক কোনো কথা বললেন না, বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যদের নিয়ে কৌতূহল দেখানো শোভন নয়। ক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ঘুরে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে জানানোর জন্যে। ইঞ্জিনটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে আর লাভ নেই, ধরে নাও ওটা গেছে। আমি মহাকাশ কেন্দ্রের সাথে কথা বলে একটা-কিছু ব্যবস্থা করে দেব।
অনেক ধন্যবাদ মহামান্য রু। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, রু তাঁকে থামালেন। জিজ্ঞেস করলেন, রিকি এখন পর্যন্ত কী করেছে না করেছে তুমি তো সব জান?
জানি।
তার স্ত্রীকে হত্যা করা, রথোনিয়াম জড়ো করা, মুদ্রা অপসারণ, এখন কুরু মহাকাশযানের ইঞ্জিন–
পরিচালক ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বললেন, জ্বি, জানি।
তুমি খুব সাবধানে এইসব খবর বাইরের পৃথিবীর কাছে গোপন রেখেছ?
জ্বি। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যদের অবমাননা করে কোনো ধরনের খবর প্রকাশ করা আমাদের নীতির বিরুদ্ধে।
রু একটু ভেবে বললেন, রিকি আজকালকের ভিতরে উধাও হয়ে যাবে। কোথায় যাবে ঠিক বলা যাচ্ছে না, কিন্তু উধাও হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সে উধাও হবার পর তার সম্পর্কে তুমি যা জান, সবকিছু খবরের কাগজে প্রকাশ করে দিতে পারবে?
পরিচালক ভদ্রলোক ভয়ানক চমকে উঠলেন, কী বলছেন আপনি।
রু শান্ত গলায় বললেন, পারবে? আপনি যদি বলেন নিশ্চয়ই পারব। কিন্তু—
কিন্তু কি?
বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা আমাদের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তাঁরা পৃথিবীর জন্যে যে অবদান রেখেছেন, তার কোনো তুলনা নেই, তাঁদের কোনো-একজন যদি ছোটোখাটো কোনো ভুলত্রুটি করে থাকেন, সেটা সারা পৃথিবীকে জানানোর সত্যিই কী কোনো প্রয়োজন আছে?
রু আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন, আছে। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা ঈশ্বর নয়, তারা মানুষ। তাদের সাধারণ মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া ঠিক না। তুমি আমার এই অনুরোধটি রাখ।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বিদায় নেয়ার পর রু অনেকক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন, বিজ্ঞান আকাদেমির কাঠামোতে একটি বড় রদবদল করতে হবে, এভাবে আর চালানো যায় না। আজ একজন রিকি বের হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি দশজন রিকি বের হয়, তখন কী হবে?
সহকারী মেয়েটি নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে বলল, মহামান্য রু, আপনার জন্য কিছু খাবার আনব?
না, এই তো খেলাম একটু আগে। বয়স হয়ে গেলে বেশি খিদে পায় না।
তা হলে কোনো ধরনের পানীয়? ফলের রস বা অন্য কিছু?
না না, কিছু লাগবে না। আমার জন্যে তুমি ব্যস্ত হয়ো না। যদি পার তা হলে দেখ আমাদের যাদুঘরের মহাপরিচালককে কোথাও পাওয়া যায় কী না। জরুরি কিছু নয়, এমনি একটু কথা বলব।
সহকারী মেয়েটি হাসি গোপন করে সরে গেল। মহামান্য রু নিজে থেকে একজন মানুষের সাথে দেখা করতে চাইছেন, এর থেকে জরুরি খবর পৃথিবীতে কি কিছু হতে পারে? কোমল স্বভাবের এই বৃদ্ধ কি সত্যি জানেন, কী প্রচণ্ড তাঁর ক্ষমতা?
কিছুক্ষণের মাঝেই রু তাঁর ঘরের হলোগ্রাফিক্স স্ক্রিনে যাদুঘরের মহাপরিচালককে দেখতে পেলেন। মহাপরিচালক দুই হাতে নিজের টুপি ধরে রেখে ফ্যাকাসে মুখে বললেন, মহামান্য রু, আপনি আমায় খোঁজ করছিলেন?
হ্যাঁ, করছিলাম। জরুরি কোনো ব্যাপারে নয়, এমনি একটা কাজে। কথার সুর পাল্টে বললেন, আপনার যাদুঘর কেমন চলছে?
ভালো, খুব ভালো। তাড়াতাড়ি কথা বলতে গিয়ে মহাপরিচালকের মুখে কথা জড়িয়ে যায়, গত মাসে আমরা নূতন একটা সভ্যতা আবিষ্কার করেছি, বিশ্বয়কর একটা সভ্যতা। অংশবিশেষ আমাদের যাদুঘরে আনা হয়েছে।
তাই নাকি? একদিন আসতে হয় দেখতে।
আসবেন? আপনি আসবেন মহামান্য রু? মহাপরিচালকের চোখ উত্তেজনায় চকচক করতে থাকে, আপনি শুধু আমাকে জানান, কবে আসবেন।
আমার নাতনি আমার সাথে দেখা করতে আসবে সামনের সপ্তাহে। তাকে নিয়ে আসব। নাতনির বয়স ছয়। সে কিছুতেই যাদুঘরে যেতে চাইবে না, বলবে চিড়িয়াখানাতে নিয়ে যেতে। আমি অবশ্যি যাদুঘরেই আসব। আমার খুব ভালো লাগে। যাদুঘরে যেতে।
যাদুঘরের মহাপরিচালক নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না। কী বলবেন বুঝতে না পেরে প্রায় চিৎকার করে বললেন, যাদুঘরকে আমরা নূতন করে সাজাব। নূতন করে–
সে কী!
জ্বি। আপনি আসবেন, কত বড় সম্মান আমাদের যাদুঘরের জন্যে। মহামান্য রু, আপনার প্রিয় রং কি?
কেন?
আপনার প্রিয় রং দিয়ে পুরো যাদুঘর আমরা নূতন করে রং করে নেব।
সে কী! রু ব্যস্ত হয়ে বললেন, পুরো যাদুঘর রং করে ফেলবেন মানে? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?
মহাপরিচালক একেবারে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, আপনার জন্য কিছু-একটা করতে চাই আমরা, আপনি আপত্তি করবেন না মহামান্য রু। আপনাকে বলতেই হবে কী রং আপনার প্রিয়।
রু এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, সব রংই আমার পছন্দ। ক্যাটক্যাটে হলুদ একটা রং আছে, সেটা বেশি ভালো লাগে না, তা ছাড়া—
সব হলুদ রং সরিয়ে নেব আমরা। পুরো ব্লকে কোনো হলুদ রং থাকবে না। পুরো শহরে–
না না, সেটা করবেন না –কিছুতেই না।
তাহলে বলেন আপনার প্রিয় রং।
নীল, হালকা নীল।
নীল। যাদুঘরের মহাপরিচালক উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, আমার প্রিয় রং হালকা নীল। কী যোগাযোগ! কত বড় সৌভাগ্য আমার। পুরো যাদুঘর নূতন করে সাজাব অবিশ্বাস্যরকম সুন্দর করে–