ইশি?
হ্যাঁ। আমি কি তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি?
তুমি বলতে চাইছ আমি যদি রাজি না হই তা হলে তুমি আমার সাথে কথা বলবে না?
না, বলব না। আমি সিস্টেম সাতানব্বই গ্রুপ বারো পয়েন্ট বি। আমি পুরোপুরি তোমার নিয়ন্ত্রণে। তোমার না চাওয়া পর্যন্ত আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।
আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
ইশি নামক সিস্টেম সাতানব্বই গ্রুপ বারো পয়েন্ট বি প্রোগ্রামটি তরল কণ্ঠে হাসার মতো শব্দ করে বলল, পরীক্ষা করে দেখ। তুমি বল দূর হও হতভাগা আমি তোমার কথা শুনতে চাই–আমি তা হলে তোমাকে আর বিরক্তকরব না।
সত্যি করবে না? কখনোই করবে না?
সেটা অবশ্য আমি বলতে পারব না। ইশি গলার স্বরে খানিকটা গাম্ভীর্য এনে বলল, প্রতিরক্ষা দপ্তরকে তুমি কথা দিয়েছ তাদের একটা কাজ করে দেবে। সেটা নিয়ে যদি প্রতিরক্ষা দপ্তর কিছু বলতে চায় তা হলে সেটা তোমাকে জানাতে হবে। তুমি শুনতে না। চাইলেও তোমাকে জানাতে হবে।
ও।
তা হলে কী দাঁড়াল? ইশি বলল, তোমার সাথে কথা বলব নাকি বলব না?
এটা কি প্রতিরক্ষা দপ্তরের আদেশ?
অনেকটা সেরকম।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, তা হলে শোনা যাক। ব্যাপারটা নিয়ে আমার নিজেরও একটু কৌতূহল হচ্ছে।
ইশি কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, তোমাকে ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না। আমি গত দুই দিন তোমার চিন্তাভাবনাকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি দেখতে পেয়েছি তুমি মানুষটা খুব কোমল স্বভাবের। তোমাকে যে কাজটা করতে হবে সেটি তোমার স্বভাবের সাথে একেবারেই খাপ খায় না।
আমাকে কী করতে হবে?
একটা খুন করতে হবে।
খুন? কাকে?
কাকে নয় ‘কী’–কে।
আমি বুঝতে পারছি না। যে জিনিসটা খুন করতে হবে সেটা যদি মানুষ না হয়ে থাকে তা হলে তুমি খুন কথাটা ব্যবহার করছ কেন? একটা যন্ত্র আমরা খুন করি না। আমরা ধ্বংস করি।
আমি যে জিনিসটার কথা বলছি সেটা মানুষের এত অবিকল প্রতিচ্ছবি, মানুষের এত সফল অনুকরণ যে সেটাকে মানুষ বলায় কোনো ক্রটি নেই। তাই আমি খুন কথাটা ব্যবহার করছি। ইশি এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বলল, তুমি যদি আপত্তিজনক মনে কর আমি এই শব্দটা ব্যবহার করব না।
আমি হাত নেড়ে ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বললাম, কী শব্দ ব্যবহার করা হল তাতে কিছু আসে–যায় না। কী কাজ করতে হবে সেটাই হচ্ছে আসল কথা।
তা ঠিক।
আমাকে তা হলে একটা রোবট ধ্বংস করতে হবে?
জিনিসটি পুরোপুরি রোবট নয়। এর ভিতরে রয়েছে কিছু যন্ত্র কিছু জৈবিক জিনিস আবার কিছু জিনিস যেটা যান্ত্রিকও নয় জৈবিকও নয়।
এটা কী? কোথা থেকে এসেছে?
ইশি একটু ইতস্তত করে বলল, ঠিক করে কেউ জানে না।
তার মানে তুমি আমাকে বলবে না।
বলতে পার। আমি খুব বেশি জানি না, কিন্তু যেটুকু জানি সেটুকুতেই নিষেধ রয়েছে।
তা হলে তুমি কেমন করে আশা কর কিছু না জেনেশুনে আমি হঠাৎ করে কাউকে খুন করে ফেলব?
তোমাকে যেটা জানানো প্রয়োজন সেট আমরা জানাব। তা ছাড়া—
তা ছাড়া কী?
তোমাকে খুন করার জন্য আলাদা করে আমাদের কিছু করতে হবে না। তুমি নিজে তোমার সর্বশক্তি দিয়ে সেটিকে শেষ করার চেষ্টা করবে।
কেন এই কথা বলছ?
তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। এই ভয়ঙ্কর যন্ত্র বা প্রাণীটি তোমাকে কোনো সুযোগ দেবে না। তুমি যদি তাকে হত্যা না কর সেটি তোমাকে চোখের পলকে হত্যা করে ফেলবে।
কেন?
এই খেলাতে সেটাই নিয়ম। আমরা খেলোয়াড় মাত্র। নিয়ম তো আমরা তৈরি করি নি।
ও!
.
আমার আরো দুদিন কেটে গেল কোনোরকম যন্ত্রণা ছাড়াই। একদিন বিকেলে পানশালাতে গেলাম নিফ্রাইট মেশানো পানীয় খেতে। কোমের সাথে দেখা হল সেখানে, দুই গ্লাস নিফ্রাইট খেয়ে তার মস্তিষ্কে সিনান্সের খেলা চলছে, আমার দিকে চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল, এই যে প্রতিরক্ষা দপ্তরের রোবট!
আমি ভিতর ভিতরে একটু চমকে উঠলাম। আমার মাথার ভিতরে একটা ট্রাকিওশানে প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটা প্রোগ্রাম বসানো রয়েছে আমাকে মনে হয় সত্যি এখন রোবট ডাকা যায়। কোম অবশ্য তার কিছু জানে না, ব্যাপারটি গোপন রাখার কথা। গোপন না রাখলে কী হবে আমি জানি না, কিন্তু ব্যাপারটা আমার পরীক্ষা করার সাহস হল না। কোম নিফ্রাইট মেশানো পানীয়ের তৃতীয় গ্লাসটিতে একটা ছোট চুমুক দিয়ে বলল, তোমার চকচকে ভাবটি নেই, কেমন যেন ভুসভুসে হয়ে গেছ!
আমি কোমের সামনে খালি চেয়ারে বসতে বসতে বললাম, একসময় চকচকে ছিলাম তা হলে?
ছিলে। তোমার মন ভালো থাকলেই তোমাকে চকচকে দেখায়! তোমার নিশ্চয়ই মন খারাপ। কী হয়েছে বল?
আমি একটু অবাক হয়ে কোমের দিকে তাকালাম, সত্যি কি আমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমি খুব বড় দুঃসময়ের মাঝ দিয়ে যাচ্ছি! আমার খুব বলতে ইচ্ছে করল, কোম, তুমি সত্যিই বুঝেছ। আমার খুব মন খারাপ। আমার মাথায় একটা ধুরন্ধর ট্রাকিওশান বসানো আছে, সেটি আমাকে দিয়ে একটি খুন করিয়ে নিতে চায়। কিন্তু আমি সেটা বললাম না, শব্দ করে হেসে বললাম, কোম, তুমি আর যা–ই কর কখনো মনোবিজ্ঞানীর চাকরি নিও না, না খেতে পেয়ে মারা যাবে।
কোম একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, তুমি আমার কাছে কিছু–একটা লুকাচ্ছ। বল কী হয়েছে?
আমি কোমের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে বললাম, আমার কিছু হয় নি।