নিশ্চয়ই পারে।
তুমি কেন এ রকম কথা বলছ?
কারণ আমি নিশ্চিতভাবে জানি রিগা কম্পিউটার আমার সম্পর্কে কিছু তথ্য পরিবর্তন করেছে। এই ধরনের অন্যায় কাজ বিচ্ছিন্নভাবে হতে পারে না। আমি নিশ্চিত সেটা ইচ্ছাকৃত। যে পদ্ধতিতে একটি অন্যায় কাজ করা হয় সেখানে নিশ্চয়ই আরো অসংখ্য অন্যায় এবং অনিয়মিত কাজ করা হয়।
মহিলাটি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। পুরুষমানুষটি একটু ঝুঁকে পড়ে নিচু গলায় বলল, তোমার অস্বাভাবিক শারীরিক ক্ষিপ্রতা থাকলেও বুদ্ধিমত্তা নিম্নশ্রেণীর।
আমি এক ধরনের অসহায় অপমানবোধ অনুভব করি, অত্যন্ত রূঢ় কিছু একটা বলার ইচ্ছে খুব কষ্ট করে সংযত করতে হল। শান্ত গলায় বললাম, আমি খুব সাধারণ মানুষ, খুব সাধারণ কাজ করি। আমার নিম্নশ্রেণীর বুদ্ধিমত্তা দিয়েই বেশ কাজ চলে যায়।
ঠিক চলে না। তা হলে এখানে এসে উপস্থিত হতে না।
হয়তো আমাকে এখানে উপস্থিত করা হয়েছে। হয়তো পুরো ব্যাপারটি পূর্বপরিকল্পিত।
পুরুষমানুষটি এবারে শিস দেওয়ার মতো একটি শব্দ করে হেসে ফেলল এবং হঠাৎ করে তাকে একজন সহৃদয় মানুষের মতো দেখাতে থাকে। মানুষটি তার সামনে রাখা হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে টোকা দিতে দিতে বলল, আমরা যদি তোমার ট্রাকিওশানের যন্ত্রণা। মিটিয়ে দিই তুমি আমাদের কী দেবে?
তোমরা যদি ট্রাকিওশানটি বের করে দাও–
মানুষটি হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমি ট্রাকিওশান বের করার কথা বলি নি।
আমি থতমত খেয়ে বললাম, তা হলে?
ট্রাকিওশানের যন্ত্রণা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি।
পার্থক্যটা কী?
তোমার মস্তিষ্কে যে ট্রাকিওশানটি রয়েছে, তার যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেটা হচ্ছে একজন খুনিকে নিয়ন্ত্রণ করার ট্রাকিওশান। আমরা প্রোগ্রামটি পাল্টে দিতে পারি।
কী দিয়ে পাল্টে দেবে?
যদি দেখি তুমি আমাদের সত্যিকার কোনো কাজ করে দিতে পারছ তা হলে নিরীহ কোনো প্রোগ্রাম দিয়ে পাল্টে দিতে পারি। তোমাকে যন্ত্রণা না দিয়ে সেটি বরং তোমাকে সাহায্য করবে–
চাই না আমি। আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমি চাই না আমার মস্তিষ্কের ভিতরে একটা ট্রাকিওশান বসে থাকুক
আমিও চাই না এ রকম চমৎকার একটা দিনে অন্ধকার একটা ঘরে বসে একজন নিম্নশ্রেণীর খুনির সাথে তর্ক করি। কিন্তু তবু আমাকে সেটা করতে হয়।
আমি আবার অসহায় অপমানবোধ অনুভব করতে থাকি। মানুষটা গলার স্বর একটু উঁচু করে বলল, তোমার কিছু করার নেই। যদি আমাদের জন্য ছোট একটা কাজ করে দাও তোমার ট্রাকিওশানের প্রোগ্রাম পাল্টে দিতে পারি। ব্যস, আর কিছু বলে লাভ নেই।
প্রোগ্রামটা—
মানুষটা অধৈর্যের মতো মাথা নেড়ে বলল, আমি আর কিছু নিয়ে কথা বলতে চাই না। যদি রাজি থাক তা হলে বল রাজি আছি, আমাদের তথ্যকেন্দ্রে সেটা গ্রহণ করে নিই। যদি রাজি না থাক তা হলে বল রাজি নই, তোমার নিয়ন্ত্রণটা ট্রাকিওশানের পুরোনো প্রোগ্রামে ফিরিয়ে দিই।
আমি প্রায় মরিয়া হয়ে বললাম, কাজটা কী?
আমি জানি না। যদি জানতামও তোমাকে বলতাম না।
তা হলে–
আমি আর কিছু শুনতে চাই না। মানুষটা হঠাৎ অনাবশ্যকভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, তুমি রাজি থাকলে বল। আমি তোমাকে ঠিক দুই সেকেন্ড সময় দিচ্ছি।
আমি একটা নিশ্বাস ফেললাম, প্রকৃতপক্ষে আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হয় নি। পুরো ব্যাপারটা আসলে একটা বড় পরিকল্পনার অংশ, আমি কী বলি তাতে মনে হয় কিছু আসে–যায় না। আমাকে নিয়ে যেটা করার কথা সেটাই নিশ্চয়ই করা হবে। আমি ইচ্ছে করলে রাজি না হওয়ার ভান করতে পারি তাতে কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। যদি রাজি হওয়ার ভান করি হয়তো ব্যাপারটা বোঝার একটু সময় পাব।
দুই সেকেন্ড অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই বললাম, আমি রাজি।
চমৎকার। মানুষটা না–পুরুষ না–রমণী চেহারার মানুষটিকে বলল, ক্লিও, তুমি তা হলে কাজ শুরু করে দাও।
ক্লিও খসখসে গলায় বলল, সিস্টেম সাতানব্বই গ্রুপ বারো?
প্রোফাইলটা আরেকবার দেখে নাও। সিস্টেম সাতাই দিয়ে কনফ্লিক্ট হতে পারে।
ঠিক আছে।
ছোট একটা ঘরে সাদা একটা বিছানায় শুইয়ে আমার মস্তিষ্কের প্রোফাইল নেওয়া হল। একটা বড় মনিটরে ঝুঁকে পড়ে ক্লিও কিছু একটা দেখছিল, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ক্লিও।
কী হল?
তুমি কি মানুষ না রোবট?
ক্লিও বিরক্ত হয়ে বলল, কাজের সময় তুমি বড় বিরক্ত কর।
আমি একটা নিশ্বাস ফেললাম, ক্লিও মানুষ নয়, রোবট।
.
প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে ফিরে আসার পর দুই দিন কেটে গেছে। এই দুই দিন নতুন কিছুই ঘটে নি। আমার মাথায় ট্রাকিওশানটি রয়ে গেছে এবং প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে সেখানে নতুন একটি প্রোগ্রাম প্রবেশ করানো হয়েছে কিন্তু আমি এখনো তার কোনো সাড়া পাই নি। যেন কিছুই হয় নি সেরকম একটা ভান করে আমি কাজে গিয়েছি, গত দুই দিন কেন অনুপস্থিত ছিলাম সেটা নিয়ে আমাকে একটা ছোট কৈফিয়ত পর্যন্ত দিতে হয়েছে।
তৃতীয় দিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগের মুহূর্তে আমার সাথে প্রথমবার যোগাযোগ করা হল। কমবয়সী একটা মেয়ের গলায় একজন আমাকে ফিসফিস করে ডাকল, কিরি।
কণ্ঠস্বরটি কার হতে পারে পুরোপুরি জানার পরও আমি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, কে?
আমি। তোমার ট্রাকিওশান। তুমি ইচ্ছে করলে আমাকে ইশি বলে ডাকতে পার।