রোবটটি আরেকটু এগিয়ে আসতেই আমি তার হাতে লাল রঙের সিরিজটি দেখতে পেলাম। আমি চিৎকার করে বললাম, আর আমার কাছে আসবে না। ধ্বংস করে দেব।
রোবটটি আমার কথা না শুনে আরেকটু এগিয়ে আসতেই আমি মুখের ভিতরে রাখা বিস্ফোরকটি ছুঁড়ে দিলাম। মুখ থেকে প্রচণ্ড বেগে ছোট ক্ষেপণাস্ত্রটি বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমি একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করলাম। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে সমস্ত ঘর কেঁপে উঠল, অন্ধকার হয়ে এল চারদিক, ধোঁয়া সরে যেতেই দেখতে পেলাম ঘরের দেয়ালে কয়েক মিটার ব্যাসের একটি ফুটো। রোবটটিকে কোথাও দেখতে পেলাম না। সম্ভবত প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভস্মীভূত হয়ে গেছে, শুধু তার একজোড়া পা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বিস্ফোরণের কারণেই কি না জানি না আমি নিজেও ঘরের একমাথায় ছিটকে সরে এসেছি, শরীরের বাঁধনও খুলে গেছে হঠাৎ। আমি শরীরের ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। চারদিকে প্রচণ্ড হইচই হচ্ছে, লোকজন–রোবট ছোটাছুটি করছে। আমার দিকে চার হাতের কয়েকজন মানুষ ছুটে এল। আমি হাত তুলে ডাকলাম একজনকে, বললাম, আমাকে গ্রুটাসের কাছে নিয়ে যাও। যদি না নাও তা হলে তোমাদের ল্যাবরেটরির বাকি যেটুকু আছে সেটুকুও আমি উড়িয়ে দেব।
কেন উড়িয়ে দেব, কীভাবে উড়িয়ে দেব মানুষটি সেই যুক্তিতর্কে না গিয়ে মাথা নুইয়ে আমাকে অভিবাদন করে বলল, চলুন, এই পথে।
আমি মানুষটির পিছু পিছু হেঁটে যেতে থাকি। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে সমস্ত ল্যাবরেটরি তছনছ হয়ে গেছে, স্থানে স্থানে ভাঙা দেয়াল আসবাবপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। বিচিত্র ধরনের নানারকম আধা–মানুষ আধা–প্রাণী ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করছে, আবার ধ্বংসস্তূপের মাঝে পুরোপুরি নির্লিপ্ত হয়ে কেউ কেউ বসে আছে। বড় একটা করিডোর ঘুরে আমি গ্রুটাসের হলঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। চার হাতের মানুষটি দরজা খুলে আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিল।
আমি ভিতরে ঢুকতেই গ্রুটাস সরসর করে ঘরের মাঝামাঝি সরে গিয়ে বলল, তুমি কী চাও আমার কাছে?
তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে অতিমানবীদের সাধারণ মানুষে পাল্টে দেবে। আমি জানতে এসেছি তার কত দূর।
গ্রুটাস কোনো কথা না বলে আমার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি দাঁতে দাঁত ঘষে বললাম, আমি তোমার একটি রোবটের সাথে রেট্রো ভাইরাস ল্যাবরেটরির বড় অংশ ধ্বংস করে এসেছি। আমার শরীরের ভিতরে এখনো যে পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে সেটা দিয়ে তোমার এই পুরো হলঘর উড়িয়ে দিতে পারি।
আমি জানি।
তা হলে আমার কথার উত্তর দাও। তুমি কি তোমার কথা রাখবে? নাকি আমি তোমার ঐ বিদঘুঁটে মাথাসহ পুরো ঘরটি উড়িয়ে দেব?
গ্রুটাস খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি দুঃখিত কিরি। তুমি একটু দেরি করে ফেলেছ।
কী হয়েছে? আমি ভয় পাওয়া গলায় বললাম, আমি কিসের জন্য দেরি করে ফেলেছি?
নয় জন অতিমানবীকে আমি একটা বিশেষ পরীক্ষায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। তারা রাজি হয় নি। তারা স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নিয়েছে।
স্বেচ্ছামৃত্যু?
হ্যাঁ। আমি তাদেরকে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে দিতে পারি না। আমি তাই আমার টেকনিশিয়ানদের নির্দেশ দিয়েছি তাদের শরীরকে বিকল করে দিতে। ক্রায়োজেনিক তাপমাত্রায় নিয়ে সমস্ত শারীরিক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কেন? কেন তুমি তাদের কষ্ট দিচ্ছ?
আমি, আমি—
তুমি কী?
আমি তাদের মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। তাদের ভিতরে বিচিত্র সব অনুভূতি খেলা করে, সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করার আগে তাদেরকে কিছুতেই স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।
আমি ঘুরে পিছনে তাকালাম। চার হাতের মানুষটি তখনো দাঁড়িয়ে ছিল, আমি তার একটি হাত ধরে ঘুরিয়ে চাপ দিতেই সে ভয়ংকর যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল। আমি দাঁত দাঁত ঘষে বললাম, আমি ইচ্ছে করলে তোমার হাত মুচড়ে খুলে আনতে পারব–সেটা করতে চাই না। এক্ষুনি আমাকে অতিমানবীদের কাছে নিয়ে চল। এক্ষুনি।
নিচ্ছি। মানুষটি কাতর গলায় বলল, এক্ষুনি নিচ্ছি।
আমি মানুষটিকে ঠেলে ঘর থেকে বের করার আগে ঘুরে গ্রুটাসের দিকে তাকিয়ে। বললাম, গ্রুটাস তুমি শুনে রাখ। আমাকে কথা দিয়ে সেই কথা না রাখার জন্য আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না। কখনো না।
আমি চার হাতের মানুষটির হাত মুচড়ে পিছন দিকে ধরে রেখে তার পিছু পিছু ছুটে যেতে থাকি, আমার মনে হতে থাকে আমি পৌঁছানোর আগেই ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাবে এবং আমার সাথে আর কখনো লাইনার দেখা হবেনা!
চার হাতের মানুষটি আমাকে একটা ঘরের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল, এখানে আছে সবাই।
আমি মানুষটিকে ছেড়ে দিয়ে লাথি মেরে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলাম। ঘরের ভিতর সারি সারি কালো ক্যাপসুল সাজানো, উপরে ক্রায়োজেনিক পাম্প মৃদু গুঞ্জন করছে। ক্যাপসুলগুলোর পাশে কিছু রোবট, কিছু সাদা পোশাক পরা রোবটের মতো মানুষ। দরজা খোলার শব্দ শুনে সবাই ঘুরে তাকাল। আমি দুই পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, যে যেখানে আছ সেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।
কাছাকাছি পঁড়িয়ে থাকা একটি রোবট একটু এগিয়ে এসে যান্ত্রিক গলায় বলল, এই ঘরে মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। তুমি প্রবেশ করে প্রতিরক্ষা দপ্তরের বড় একটি নিয়ম ভঙ্গ করেছ। তোমাকে