জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে শুনতে পেলাম আমার মস্তিষ্কে কেউ একজন বলল, ভার্ন গ্যাস!
.
জ্ঞান ফিরে পাবার পর চোখ খুলে দেখলাম আমার মুখের উপরে একটি যন্ত্র ঝুঁকে আছে। আমাকে জেগে উঠতে দেখে যন্ত্রটি সরে দাঁড়াল–এটি একটি প্রাচীন রোবট। আমি উঠে বসার চেষ্টা করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম সেটি সম্ভব নয়, আমাকে ধবধবে সাদা একটা বিছানায় শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমি রোবটটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কোথায়?
রোবটটি এগিয়ে এসে বলল, তুমি প্রজেক্ট অতিমানবীর ল্যাবরেটরির রেট্রো ভাইরাস অংশে।
এখানে কেন?
এই ল্যাবরেটরি যেসব রেট্রো ভাইরাস তৈরি করেছে সেগুলো পরীক্ষা করার উপযোগী মানুষের খুব অভাব। তোমাকে পাওয়ায় কিছু পরীক্ষা করা যাবে।
আমি বৃথাই আবার ওঠার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, আমার ওপরে পরীক্ষা চালানো হবে?
হ্যাঁ।
কিসের পরীক্ষা!
সেটা তুমি সম্ভবত বুঝবে না। মহামান্য গ্রুটান বলে থাকেন মানুষমাত্রই নির্বোধ।
তুমি বলে দেখ। হয়তো বুঝতে পারব।
তুমি নিশ্চয়ই জান রেট্রো ভাইরাস তার ডি, এন. এ. মানুষের ক্রোমোজমে পাকাপাকিভাবে ঢুকিয়ে দেয়।
আমি জানতাম না কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না। রোবটটি তার একঘেয়ে গলায় বলল, মহামান্য গ্রুটাস কিছু চমৎকার রেট্রো ভাইরাস তৈরি করেছেন, তাদের ডি. এন. এ. তে কিছু মজার জিনিস ঢোকানো আছে।
সেই মজার জিনিসগুলো কী?
একটি মানুষের নিউরনের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
কীভাবে?
মস্তিষ্কের আয়তন বাড়িয়ে দিয়ে।
আমি পুরো পদ্ধতিটি ভালো করে বুঝতে পারলাম না, রোবটটি ব্যাখ্যা করারও চেষ্টা করল না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের নিউরনের সংখ্যা বেড়ে গেলে মানুষেরা কি বেশি বুদ্ধিমান হয়ে যায়?
সেটি এখনো প্রমাণিত হয় নি। কারণ খুলির আকার বাড়ানো হয় নি বলে মস্তিষ্কের চাপে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায় শেষ মানুষটির মৃত্যু হয়েছে।
আমি শিউরে উঠে রোবটটির দিকে তাকালাম, রোবটটি যান্ত্রিক গলায় বলল, নতুন রেট্রো ভাইরাসে খুলিটাকেও বড় করার ব্যবস্থা হয়েছে। এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয় নি।
তার অর্থ আমাকে দিয়ে যে পরীক্ষা হবে সেটি সফল হলে আমার মস্তিষ্ক অনেক বড় হবে, সফল না হলে আমি মারা যাব?
যদি দেখা যায় তুমি মারা যাচ্ছ তা হলে তোমার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটেকুটে নেওয়া হবে। তোমার কিছু ক্লোন তৈরি হবে। ক্লোন তৈরি হতে সময় নেয় সেটাই হচ্ছে সমস্যা।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমি রাজি নই।
কিসের রাজি নও?
আমাকে নিয়ে পরীক্ষা করায়। আমি কোনো রেট্রো ভাইরাসে আক্রান্ত হব না।
রোবটটি এক পা এগিয়ে বলল, তুমি ঠিক বুঝতে পারছ না। এখানে তোমার ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই। মহামান্য গ্রুটাস যেভাবে চান সেভাবেই হবে।
কোথাও কিছু গোলমাল হয়েছে। আমি বললাম, আমাকে তোমরা এভাবে হত্যা করতে পারবে না। আমি সারা পৃথিবীতে অতিমানবীর টিস্যু ছড়িয়ে রেখেছি। আমাকে
মিথ্যাবাদী! রোবটটি শান্ত গলায় বলল, তোমার মাথায় একটা ট্রাকিওশান লাগানো ছিল, আমরা জানতাম না। তুমি যখন অচেতন ছিলে আমরা সেটা বের করে এনেছি।
বের করে এনেছ? তার মানে আমার মাথায় এখন ট্রাকিওশান নেই?
না। আমরা সেই ট্রাকিওশানটিকে বিশ্লেষণ করেছি। সেটি সব কথা স্বীকার করেছে। সে বলেছে তুমি সারা পৃথিবীতে অতিমানবীদের টিস্যু ছড়িয়ে দাও নি। তুমি অতিমানবীদের জীবকোষ বাঁচিয়ে রাখ নি। তুমি প্রতিরক্ষা দপ্তরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছ, নানা কেন্দ্রে জীবকোষ সংরক্ষণের ভান করেছ।
আমি হতচকিত হয়ে রোবটটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রতিরক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধে আমার এবং অতিমানবীদের নিরাপত্তার পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করেছিল এই ছলনাটির ওপর। সেটি ধরা পড়ে গেলে আমাদের রক্ষা করবে কে?
রোবটটি একটু এগিয়ে এসে বলল, তুমি মিথ্যাবাদী। আমরা মিথ্যাবাদীদের কঠোর শাস্তি দিই। মহামান্য গ্রুটাস তোমাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। শাস্তি দেওয়ার আগে তোমার ওপর এই পরীক্ষাটি করতে চান। আমরা আশা করছি এই পরীক্ষায় তোমার যেন মৃত্যু না হয়।
না। আমি অক্ষম আক্রোশে চিৎকার করে বললাম, না! তোমরা সেটা করতে পার না।
মহামান্য গ্রুটাস ঠিকই বলেছেন। মানুষমাত্রই নির্বোধ।
আমি চিৎকার করে বললাম, আমাকে ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও।
তুমি বুঝতে পারছ না। এই পরীক্ষাগারে সত্যিকার মানুষ খুব দুষ্প্রাপ্য জিনিস। তোমাকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না। রিগা কম্পিউটারের সাথে ষড়যন্ত্র না করেই তোমাকে ব্যবহার করা যাবে। তুমি একই সাথে বড় অপরাধী।
আমি ছটফট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম, ছেড়ে দাও আমাকে, ছাড়।
রোবটটি আরেকটু এগিয়ে এসে বলল, তুমি মিছেমিছি ছটফট করছ। আমি তোমার দেহে প্রবেশ করানোর জন্য রেট্রো ভাইরাসটি নিয়ে এসেছি। তুমি স্থির হয়ে শুয়ে থাকলে আমি ভাইরাসটি তোমার রক্তে মিশিয়ে দেব।
সরে যাও। আমি চিৎকার করে বললাম, সরে যাও।
নির্বোধ মানুষ
আর এক পা এগিয়ে এলে আমি তোমাকে শেষ করে দেব। ধ্বংস করে দেব।
তুমি শুধু মিথ্যাবাদী নও। তুমি বাকসর্বস্ব একজন নিষ্ফল মানুষ। তুমি নির্বোধ এবং দুর্বল। মানুষ জাতির বড় দুর্ভাগ্য যে গ্রুটাসের মতো মানুষের সংখ্যা এত কম।