কার কাছে বিক্রি করার জন্য?
ক্রিমিনালদের কাছে। আন্তঃগ্রহ পরিবহনে দুর্ঘটনায় যেসব ক্রুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট হয় তাদের কাছে
আমি আমার হাত ছড়িয়ে দিয়ে বলি, এই দেখ, আমার হাত–পা, নাক, চোখ–মুখ সব আছে–কেউ কোথাও বিক্রি করে দেয় নি।
কোম এত সহজে তর্কে হার মানতে রাজি নয়, মাথা নেড়ে বলল, হয়তো তোমার শরীরের ভিতরে পুরো জিনিসপত্র নেই। লিভার রয়েছে একটুখানি, কিডনি অর্ধেকটা, হৃৎপিরে ভাভ হয়তো নেই।
আমি হেসে বললাম, আমি পুরোপুরি সুস্থ পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ। গত মাসে চেকআপে আমি তিরানব্বই পয়েন্ট পেয়েছি।
কত?
তিরানব্বই।
কোম শিস দেওয়ার মতো শব্দ করে বলল, নিশ্চয়ই ভুল দেখেছ, সংখ্যাটি ছিল ঊনচল্লিশ, ভুল করে তুমি পড়েছ তিরানব্বই।
না ভুল দেখি নি। সংখ্যাটি ডেসিমেল এবং কোয়ার্টানারিতে ছিল, ভুল হওয়ার কোনো উপায় নেই।
কোম হাতের পানীয়টুকু গলায় ঢেলে চোখ মটকে বলল, হয়তো তোমার মস্তিকের নিউরন সংখ্যা কম। হয়তো তোমার সেরেব্রাল কর্টেক্স থেকে এক খাবলা তুলে নেওয়া হয়েছে, তোমার বুদ্ধিমত্তা হয়তো শিম্পাঞ্জির কাছাকাছি। তোমার রিফ্লেক্স হয়তো একটা সরীসৃপের সমান।
মস্তিষ্কে নিফ্রাইটের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আমাদের আলোচনা কোন দিকে অগ্রসর হত বলা মুশকিল, কিন্তু ঠিক এই সময়ে পানশালাতে একটা বিচিত্র ঘটনা ঘটল। সশব্দে দরজা খুলে ভিতরে তিন জন মানুষ এসে ঢুকল, তাদের শরীরে কালো নিওপলিমারের আবরণ, মুখ ঢাকা এবং চোখে ইনফ্রারেড গগলস। তাদের সবার হাতেই এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। সামনের মানুষটি, যাকে দেখে একজন মেয়েমানুষ বলে সন্দেহ হচ্ছিল, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি উপরের দিকে তাক করে একপসলা গুলি করে উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে খসখসে গলায় বলল, এটা একটা লুণ্ঠন প্রক্রিয়া। আমরা ঠিক দুই মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ডে এখান থেকে চলে যাব বলে ঠিক করেছি। কেউ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলে এগিয়ে আস।
ঘরের উপস্থিত পুরুষ এবং মেয়েরা আতঙ্কে ফ্যাকাসে হয়ে টেবিল বা পরদার আড়ালে লুকিয়ে যেতে শুরু করে। মেয়েটি অস্ত্রটা উপরে তুলে বলল, যে যেখানে আছ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাক। আমাদের কাজ শেষ করার আগে কেউ নড়তে পারবে না। আমরা এখানে এসেছি একটা ভালো হৃৎপিণ্ডের জন্য।
মেয়েটা উপস্থিত মানুষগুলোর দিকে একনজরে তাকিয়ে ঘরের এক কোনায় বসে থাকা একজন কিশোরীর দিকে ইঙ্গিত করল, তুমি এগিয়ে এস।
মুহূর্তে কিশোরীটির মুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। সে কোনোমতে দাঁড়িয়ে বলল, আমি?
হ্যাঁ, তুমি।
না–কিশোরীটি চিৎকার করে বলল, না!
হ্যা তুমি। সময় নষ্ট করে লাভ নেই, তাড়াতাড়ি চলে এস।
কিশোরী মেয়েটি একটা টেবিল ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত গলায় কাঁদতে শুরু করল। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতের মেয়েটি বিরক্ত গলায় বলল, কী হচ্ছে?
কিশোরীটি তবুও দাঁড়িয়ে রইল দেখে মেয়েটি তার সাথের দুজন মানুষকে ইঙ্গিত করতেই তারা ছুটে গিয়ে দুজন দুপাশ থেকে কিশোরী মেয়েটিকে ধরে ফেলল। মেয়েটি। ভয়ার্ত গলায় একটা আর্তনাদ করে ওঠে।
আমি কী করছি নিজেও খুব ভালো করে জানি না–হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমি উঠে দাঁড়িয়ে উঁচুগলায় বলছি, দাঁড়াও।
মেয়েটা এবং তার সঙ্গী দুজন সাথে সাথে অস্ত্র হাতে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। আমি খুব স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে দুই পা হেঁটে গেলাম, কোনো একটি বিচিত্র কারণে আমার কাছে পুরো
ব্যাপারটিকে একটি ছেলেমানুষি কাজ বলে মনে হতে লাগল। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বুকের দিকে তাক করে রাখলে যেরকম ভয় লাগার কথা আমার একেবারেই সেরকম ভয় লাগছিল না। মেয়েটি চিৎকার করে বলল, কী চাও তুমি?
আমি গত মাসে চেকআপ করিয়েছি। খুব শক্ত এবং তাজা একটা হৃৎপিণ্ড রয়েছে আমার বুকের ভিতরে। ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে আমাকে নিয়ে যাও।
মেয়েটির মুখ মুখোশে ঢাকা বলে তার মুখভঙ্গি দেখতে পেলাম না কিন্তু তার ক্রুদ্ধ গলার স্বর হিসহিস করে ওঠে, আমি কাকে নেব সেটা আমি ঠিক করব–নির্বোধ কোথাকার।
আমি আরো দুই পা এগিয়ে মেয়েটার কাছাকাছি চলে গিয়ে বললাম, তার জন্য একটু দেরি হয়ে গেছে।
কী বলতে চাইছ তুমি?
তুমি যতক্ষণে ঐ ট্রিগার টানবে তার আগে আমি তোমার পাজরের দুটি হাড় ভেঙে দিতে পারি।
মেয়েটি মনে হয় নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েছিলাম, আমাকে গুলি করার জন্য একটু দূরে যেতে হবে, ঘুরতে শুরু করা মাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে। পিছনে আরো দুজন আছে কিন্তু আমি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছি। মেয়েটিকে বাচিয়ে আমাকে গুলি করা কঠিন–জেনেশুনে কেউ সে ঝুঁকি নেবে না।
মেয়েটির শরীর নড়তে শুরু করা মাত্র আমি শূন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে পা দিয়ে তাকে আঘাত করলাম, বিকেলবেলা যখন কিছুই করার থাকে না উঁচু দেয়ালে চক দিয়ে ক্রসচিহ্ন এঁকে আমি এভাবে সেখানে পা দিয়ে আঘাত করে করে নিজেকে ক্লান্ত করে ফেলি। সত্যিকার কখনো এটা ব্যবহার করতে হবে ভাবি নি, কিন্তু যখন ব্যবহার করা হল ব্যাপারটি মোটেও কঠিন মনে হল না।
আমি যখন আবার নিচে নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়েছি তখন মেয়েটি মেঝেতে মুখ থুবড়ে কাতরাচ্ছে, বলেছিলাম দুটি পাজরের হাড় ভেঙে দেব, মেয়েটিকে দেখে মনে হল সংখ্যা একটু বেশি হতে পারে। এখনো দুজন সশস্ত্র মানুষ রয়েছে তাদেরকে সামাল দেওয়ার একটি মাত্র উপায়। আমি শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে বিদ্যুদ্বেগে নিচে পড়ে থাকা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তুলে নিলাম। এই যন্ত্রটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় আমি জানি না কিন্তু সেই কথাটি আর কারো জানার কথা নয়। আমি কপাল থেকে চুল সরিয়ে অত্যন্ত শান্তি গলায় বললাম, অস্ত্র ফেলে দুই হাত তুলে দাঁড়াও। অন্য কিছু করার চেষ্টা করলে সেটা নিজের দায়িত্বে করবে। বুঝতেই পারছ উপায় থাকলে আমি শারীরিক আঘাত করে শুইয়ে দিতাম কিন্তু এত দূর থেকে সেটা করতে পারব না। মেরে ফেলা ছাড়া আর কিছু করার নেই।