কোম অবাক হয়ে বলল, হিম নগরী! সেখানে কেন যাবে?
আমি রহস্যময়ভাবে হেসে বললাম, একটু কাজ আছে!
হিম নগরীর রাস্তা কোম জানে না, আমি জানতাম সে জানবে না। কয়দিন পর যখন প্রতিরক্ষা দপ্তর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সে নিশ্চয়ই এই কথাটা বলবে, এই জন্যই তাকে জিজ্ঞেস করা।
আমি শহরের বড় বড় ব্যাঙ্ক ভন্টে কয়দিন ঘোরাঘুরি করলাম, আন্তঃভূমণ্ডল পরিবহন কেন্দ্রে কেনাকাটা করলাম, কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কে একদিন বসে বসে পৃথিবীর বড় বড় ডাটা সেন্টারে তথ্য বিনিময় করলাম। পৃথিবীর বড় কিছু গবেষণাগারে অর্থহীন বিষয় নিয়ে। আলোচনা করলাম। অবশেষে শহরের বড় একটি লেভিটেশান টার্মিনালে অসংখ্য মানুষের ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে ইশিকে বললাম প্রতিরক্ষা দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে।
আমাকে খুঁজে বের করতে কতক্ষণ লাগবে সেটা নিয়ে আমার একটু কৌতূহল ছিল, দেখতে পেলাম ঘণ্টাখানেকের মাঝেই আমাকে প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাছাকাছি একটা অফিসে নিয়ে যাওয়া হল। লেভিটেশান টাওয়ারের ভিড় থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে বলে অসংখ্য দৃষ্টিক্ষেপণ মডিউলে সেটি সংরক্ষিত থাকার কথা, রিগা কম্পিউটার ইচ্ছে করলেই তার পরিবর্তন করতে পারবে কিন্তু এই বিশাল মানুষের ভিড়ের দৃশ্যে সেটি সহজ নাও হতে পারে।
প্রতিরক্ষা দপ্তরে আমার সাথে যে কথা বলতে এল সে সম্ভবত খুব উচ্চপদস্থ কর্মচারী, তার সাথে এসেছে দুজন আইনরক্ষাকারী অফিসার এবং একটি প্রতিরক্ষা রোবট। উচ্চপদস্থ কর্মচারীটি মধ্যবয়স্ক, জীবনের একটি বড় সময় ভুরু কুঁচকে থাকার কারণে তার কপাল পাকাপাকিভাবে কুঞ্চিত হয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে রুষ্ট স্বরে বলল, আধা জৈবিক প্রাণীটি ধ্বংস করে তোমার সাথে আমার যোগাযোগ করার কথা ছিল।
আমি একটু অবাক হবার দুর্বল অভিনয় করে বললাম, ছিল নাকি? আমি ভেবেছিলাম সে জন্য তোমরা আমার মাথায় একটা ট্রাকিওশান লাগিয়েছ।
মানুষটি মুখ কালো করে বলল, ট্রাকিওশানটি আমাদের আনুগত্য স্বীকার করতে অস্বীকার করছে।
তাই নাকি! আমি গলায় বিদ্রূপটুকু লুকানোর কোনো চেষ্টা না করে বললাম, কী অন্যায়! কী ঘোরতর অন্যায়?
প্রতিরক্ষা রোবটটি ভাবলেশহীন মুখে বসে রইল, কিন্তু আমার কথায় সাথের আইনরক্ষাকারী অফিসার দুজন বিশেষরকম বিচলিত হয়ে উঠল বলে মনে হল।
উচ্চপদস্থ কর্মচারীটি ক্ষুব্ধ গলায় বলল, আধা জৈবিক প্রাণীটিকে ধ্বংস করার একটি পূর্ণ বিপোর্ট দরকার। তুমি কি সেটি দেবার জন্য প্রস্তুত?
না।
কর্মচারীটি অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে রাখল। আইনরক্ষাকারী অফিসারদের একজন বলল, কেন নয়?
সেটি সম্ভব নয় বলে।
কেন সেটি সম্ভব নয়?
কারণ আমি সেই প্রাণীটিকে হত্যা করি নি।
অসম্ভব। সেই প্রাণীটিকে হত্যা না করলে তুমি জীবন্ত বের হতে পারতে না। আমাদের সিসমি রেকর্ডে তোমার এটমিক ব্লাস্টারের বিস্ফোরণের সংকেত ধরা পড়েছে।
তোমরা যদি সেটি জান তা হলে কেন আমাকে প্রশ্ন করছ?
আমরা ঘুঁটিনাটি জানতে চাই। আধা জৈবিক প্রাণীটির ধ্বংসাবশেষ আনতে চাই।
আমি হঠাৎ করে সামনে ঝুঁকে গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আছে, কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি আমি দিতে পারি ঠিক সেরকম গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষকে।
উচ্চপদস্থ কর্মচারীটি দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, তোমার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি কে হতে পারে?
তুমি তাকে চিনবে না। সত্যি কথা বলতে কী, আমি যদি সেই মানুষের কথা তোমাকে বলি, তোমার বিপদ হতে পারে। তুমি কি সত্যিই শুনতে চাও?
আমি এই প্রথমবার মানুষটির মুখে এক ধরনের ভীতির ছাপ দেখতে পেলাম। সে ইতস্তত করে বলল, তুমি কী বলতে চাও?
আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাই না। তুমি তোমাদের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ মানুষ কিংবা যন্ত্রকে নিয়ে এস। যদি সেটা নিয়ে সমস্যা থাকে আমাকে একটি গোপন চ্যানেল দাও আমি ইশিকে ব্যবহার করে একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ কিংবা যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করি।
আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না।
আমি কাঠ কাঠ স্বরে হেসে উঠে বললাম, তুমি জান আমি এক ছুঁয়ে তোমাদের ধ্বংস করে দিতে পারি? তোমরা নিজেরা আমার মুখে ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরক লাগিয়ে দিয়েছিলে? সেটি এখনো ব্যবহার করি নি। তুমি জান?
আমার এই কথায় হঠাৎ ম্যাজিকের মতো কাজ হল। সামনে যারা উপস্থিত ছিল তারা হঠাৎ করে উঠে দাঁড়াল এবং আমাকে একা বসিয়ে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি কালো একটি গ্রানাইট টেবিলের সামনে একাকী বসে রইলাম।
দীর্ঘ সময় পরে আমার সামনে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে একজন বয়স্ক মানুষের ছবি দেখতে পেলাম। মানুষটি শুষ্ক গলায় বলল, তুমি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে চাইছ?
হ্যাঁ। শুধুমাত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কাছে।
বয়স্ক মানুষটি হাসার ভঙ্গি করে বলল, আমি প্রতিরক্ষা দপ্তরের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
সেটি সত্যি কি না আমি এক্ষুনি বুঝতে পারব। আমি একমুহূর্ত অপেক্ষা করে বললাম, তুমি কি প্রজেক্ট অতিমানবীর কথা শুনেছ?
বয়স্ক মানুষটি বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠল, কয়েক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি–তুমি কী বললে?
প্রজেক্ট অতিমানবী।
তুমি কেমন করে প্রজেক্ট অতিমানবীর কথা জেনেছ?