হাজার হাজার মানুষ চিৎকার করে বলল, প্রস্তুত!
আমরা আমাদের প্রাণ দিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যে নূতন একটা পৃথিবী দিয়ে
যাব।
মানুষ চিৎকার করে বলল, দিয়ে যাব! দিয়ে যাব!
তা হলে সবাই প্রস্তুত হও। মানুষটা খ্যাপার মতো হাত শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, আমরা এই মিলিটারিদের পদদলিত করে এগিয়ে যাব! তাদের গুলিতে হয়তো আমি তুমি মারা যাব, কিন্তু তারপরেও আমাদের লক্ষ লক্ষ জনতা থাকবে। তারা দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে! অক্সিরনের পুরো ভবন জ্বালিয়ে দেবে। মজুদ রাখা সবকিছু ছিনিয়ে নেবে! আমরা পৃথিবীর ইতিহাস থেকে অক্সিরনের নাম চিরদিনের জন্যে মুছে দেব।
লক্ষ লক্ষ মানুষ চিৎকার করে বলল, মুছে দেব। মুছে দেব!
তোমরা প্রস্তুত? প্রাণ দিতে প্রস্তুত?
প্রস্তুত প্রস্তুত!
কাবিন হতচকিতের মতো মাথায় লাল রুমাল বাধা মানুষটার দিকে তাকিয়ে ছিল। ঐ বিশাল জনস্রোত এক্ষুনি বাঁধভাঙা পানির মতো ছুটে যবে, তারপর কিছু বোঝার আগেই গুলি খেয়ে শত শত মানুষ মরে যাবে। দরিদ্র দুর্ভাগা মানুষ, তাদের মৃত্যুতে কার কী এসে যাবে? দেশের বা পৃথিবীর কী ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে? চোখের সামনে এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড সে কেমন করে দেখবে?
কিছু বোঝার আগেই কাবিন হঠাৎ করল সে লাফিয়ে লাল রুমাল বাধা মানুষটার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে সে হাত নেড়ে চিৎকার করে বলল, প্রিয় ভাইয়েরা! আমার একটা কথা শুনো–
মানুষেরা গর্জন করে উঠল, কী কথা?
আমার বাসায় একটি অসুস্থ শিশু আছে। সে আশা করে আছে আমি সারা জীবনের জন্যে তার দুশ্চিন্তা ঘুচিয়ে দেব। তার বদলে যদি আজ বিকেলে আমার লাশ পৌঁছানো হয় সে কি খুশি হবে?
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রুদ্ধ মানুষেরা চিৎকার করে বলল, তুমি কী বলতে চাও?
সেটা বলার আগে তোমরা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
কী প্রশ্ন?
তোমার বাসায় কি তুমি তোমার সন্তানদের রেখে এসেছ? তোমার স্ত্রীদের রেখে এসেছ? তারা কি তোমার লাশের জন্যে অপেক্ষা করছে?
উপস্থিত জনসমুদ্র হঠাৎ করে থমকে যায়। নিজেদের ভেতর নিচু স্বরে কথা বলতে থাকে। সেটা একটা গুঞ্জরনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। কাবিন গলা উঁচিয়ে বলল, তোমাদের স্ত্রী আর তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের লাশের জন্যে অপেক্ষা করছে না! তুমি আমি লাশ হয়ে গেলে অক্সিরনের কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা ভেতরে ঢুকে এই কোম্পানি জ্বালিয়ে দিলেও তাদের কোনো ক্ষতি হবে না-ইন্স্যুরেন্স থেকে তারা শেষ পাই পয়সা পর্যন্ত পেয়ে যাবে। তা হলে কেন আমরা এটা করতে চাইছি? যেটা করা দরকার সেটা কেন করছি না?
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষ চিৎকার করে বলল, কী করা দরকার?
অক্সিরনের বারোটা বাজিয়ে দেই না কেন? তাদের মেরুদণ্ড কেন ভেঙে দিই না।
কীভাবে ভেঙে দেব?
খুবই সোজা। তোমরা যারা দাঁড়িয়ে আছ সবাই হাত তুলে বল তোমরা জীবনে কখনো অক্সিরনের কিছু কিনবে না, তোমার মুখের কথাটি উচ্চারণ করার আগে তাদের শেয়ারে ধস নামবে। এক মিনিটের ভেতর কোম্পানির লাল বাতি জ্বলে যাবে।
সামনে দাঁড়ানো লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের ভেতর কথা বলতে থাকে। তারা পুরো ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছে না। কাবিন চিৎকার করে বলল, তোমরা যদি আমার কথা বিশ্বাস না কর, তা হলে এখনই সেটা পরীক্ষা করে দেখ! হাত তুলে আমার সাথে সাথে বল, আমরা জীবনে অক্সিরনের কোনো কিছু কিনব না!
লক্ষ লক্ষ মানুষ হাত তুলে বলল, আমরা জীবনে অক্সিরনের কোনো জিনিস কিনব না।
.
সিনেটর কাজিস্কী মাথার চুলে খামচে ধরে শূন্য দৃষ্টিতে সেক্রেটারি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছ? দেখছ কী হচ্ছে?
সেক্রেটারি মেয়েটি বলল, দেখছি। অক্সিরন কোম্পানিটা বাতাসের মতো উবে যাচ্ছে। দেখেন শেয়ারবাজারটা দেখাচ্ছে।
সিনেটর কাজিস্কী বিড়বিড় করে বলল, এর চাইতে অনেক ভালো ছিল যদি মানুষগুলো কোম্পানিটা জ্বালিয়ে দিত।
সেক্রেটারি মেয়েটি কোনো কথা না বলে শীতল দৃষ্টিতে সিনেটর কাজিস্কীর দিকে তাকিয়ে রইল।
.
মুলান হাসি হাসি মুখে কাবিনের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি টেলিভিশনে তোমাকে দেখেছি।
তাদের ছোট ছেলে কিশান বলল, আমিও দেখেছি।
কাবিন ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, সবাই দেখেছে।
মুলান বলল, তোমার অনেক বুদ্ধি।
সব বুদ্ধি সব সময় কাজে লাগে না-এটা কাজে লেগেছে।
কোম্পানিটা শেষ হয়ে গেছে?
হ্যাঁ। নিলামে বিক্রি হয়ে গেছে। নূতন ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব নিয়েছে। তারা আর বদমাইশি করবে না। মজুদ যা ছিল সব বিক্রি করে দিয়েছে।
কী মজা!
হ্যাঁ, আমি এক বছরের সাপ্লাই কিনে এনেছি।
মুলান হাসি হাসি মুখে বলল, এক বছর! এক বছর আমাদের কোনো চিন্তা করতে হবে না?
না। এক বছর আমাদের কোনো চিন্তা করতে হবে না।
ব্যাপারটা খুবই বিপজ্জনক জেনেও কাবিন তার মুখের উপর লাগানো অক্সিজেন মাস্কটি খুলে শিশুসন্তান কিশানের গালে চুমু খেয়ে আবার মাস্কটি পরে নেয়। তাদের সবার মুখেই অক্সিজেন মাস্ক লাগানো-পৃথিবীর মানুষ পুরো বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত করে ফেলেছে। কেউ এখন এই বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারে না, দোকান থেকে অক্সিজেন কিনে সেই অক্সিজেনে নিঃশ্বাস নিতে হয়।
মানুষ আগে যেরকম খাওয়ার জন্য খাবার কিনে রাখত, এখন সেরকম নিঃশ্বাস নেবার জন্যে বাতাস কিনে রাখে।
চাঁদ
আজহার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, শালা হারামজাদা।