তার কারণ আমরা সেটা হতে দিয়েছি। আমরা তাদের লম্বা জিবকে সহ্য করেছি। তোমরা বল, তোমরা কি আরো সহ্য করতে চাও? ধুকে ধুকে মরতে চাও?
অনেকে চিৎকার করে বলল, চাই না! চাই না!
যদি না চাও তা হলে কিন্তু রাস্তায় নামতে হবে। মানুষটা হাত তুলে চিৎকার করে বলল, বল, তোমরা রাস্তায় নামতে রাজি আছ কি না?
অসংখ্য মানুষ চিৎকার করে বলল, আছি। আছি।
চল তা হলে। সবাই মিলে যাই।
একজন জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাব?
প্রথমে কংগ্রেস ভবনে। সেটা ঘেরাও করতে হবে। সিনেটরদের জিজ্ঞেস করতে হবে তারা আমাদের রক্ষা করবে নাকি আমরা নিজেদের রক্ষা করব?
একজন চিৎকার করে বলল, সিনেটররা ধ্বংস হোক।
অসংখ্য মানুষ চিৎকার করে বলল, ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক।
পার্কের সিঁড়িতে আধবুড়ো একজন মানুষ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কংগ্রেস ভবন ঘেরাও করে কোনো লাভ নেই।
তা হলে কী ঘেরাও করতে হবে?
ঘেরাও করার সময় চলে গেছে। আধবুড়ো মানুষটা হাত তুলে চিৎকার করে বলল, এখন আমাদের ছিনিয়ে নেয়ার সময়।
অসংখ্য মানুষ চিৎকার করে বলল, ছিনিয়ে নাও। ছিনিয়ে নাও।
আধবুড়ো মানুষটা উন্মত্তের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ভাইয়েরা আমার! তোমাদের যদি বুকে বল থাকে, তা হলে চল আমরা কোম্পানি দখল করে তার মজুত করে রাখা সবকিছু লুট করে নিই।
দেখতে দেখতে মানুষের ভিড় অনেক বেড়ে গেছে, তার ভেতর থেকে ক্রোধোন্মত্ত মানুষ হুংকার দিয়ে বলল, ছিনিয়ে নাও! লুট করে নাও! পুড়িয়ে দাও।
কিছু বোঝার আগেই কাবিন আবিষ্কার করল বিশাল একটা জনস্রোতের সাথে সে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষজন চিৎকার করছে, হাত-পা শূন্যে ছুঁড়ে বুকের ভেতর চেপে থাকা। ক্রোধটি প্রকাশ করছে, সূর্যটা গনগনে হয়ে উপরে উঠছে আর তার প্রচণ্ড উত্তাপে সবার ক্রোধকে যেন শতগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। জনস্রোতটা যতই এগুতে থাকে ততই ফুলে ক্ষেপে উঠতে থাকে, পুঞ্জীভূত ক্রোধ ততই বিস্ফোরণোন্মুখ হতে থাকে।
সিনেটর কাজিস্কী টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল, এরা কারা। কী করছে?
সেক্রেটারি মেয়েটি নিচের ঠোঁটটি দাঁতে কামড়ে থেকে একটা নিঃশ্বাস আটকে রেখে বলল, পাবলিক।
পাবলিক? পাবলিক এমন খেপেছে কেন? কোথায় যাচ্ছে?
প্রথমে ঠিক করেছিল কংগ্রেস ভবন ঘেরাও করবে।
সিনেটর কাজিস্কী চমকে উঠে বলল, সর্বনাশ। তারপর?
তারপর ঠিক করেছে অক্সিরন কোম্পানি ঘেরাও করবে।
অক্সিরন? অক্সিরন কেন?
সবার ধারণা অক্সিরন তাদের প্রোডাকশন কমিয়ে দিয়েছে, সবকিছু কালোবাজারিতে চলে গেছে। দাম বেড়ে আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে।
সিনেটর কাজিস্কী ইতস্তত করে বলল, কিন্তু মানে ইয়ে- বাক্যটা অসম্পূর্ণ রেখে সে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে বলল, মানুষগুলোর হাতে লাঠিসোটা কেন?
সবাই খুব রেগে আছে।
রেগে আছে? রেগে আছে কেন?
সেক্রেটারি মেয়েটি খুব কষ্ট করে মুখে স্বাভাবিক একটা ভাব ফুটিয়ে রেখে বলল, রেগে আছে কারণ কারো বাসায় একদিনের কারো বাসায় দুদিনের-বড় জোর এক দুই সপ্তাহের সাপ্লাই আছে।
সাপ্লাই না থাকলে কিনে নেবে, এটা নিয়ে এত হইচই করার কী আছে?
কেনার পয়সা নেই। দাম আকাশছোঁয়া।
সিনেটর কাজিস্কী তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, কী মুশকিল! এই লোকগুলো অক্সিরনে গিয়ে কী করবে?
ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বলছে মানুষগুলো ঠিক করেছে অক্সিরন কোম্পানি লুট করে পুরো কোম্পানি জ্বালিয়ে দেবে।
সিনেটর কাজিস্কী তার চেয়ারে প্রায় লাফিয়ে উঠল, কী বলছ তুমি?
জি স্যার! সেইটাই রিপোর্ট।
সর্বনাশ! পুলিশ মিলিটারি পাঠানো হয়েছে? সিকিউরিটি ফোর্স?
যাচ্ছে স্যার। কিন্তু
কিন্তু কী?
এই লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠেকানোর ক্ষমতা পুলিশ মিলিটারির নেই।
কেন থাকবে না? গুলি করবে। ক্রশফায়ার করবে।
সেক্রেটারি মেয়েটি শীতল চোখে সিনেটর কাজিস্কীর দিকে তাকিয়ে থাকে, সে নিজের ভেতরে এক ধরনের ঘৃণা অনুভব করে। বিষয়টি কারো অজানা নেই অক্সিরন কোম্পানির শেয়ারের বড় অংশের মালিক সিনেটর কাজিস্কীর পরিবার। তাই বুঝি কোম্পানিটাকে বাচানোর জন্যে এত সহজে মানুষকে ব্রাশফায়ারে গুলি করে মেরে ফেলার কথা বলতে পারে।
সিনেটর কাজিস্কী ছটফট করে টেলিভিশনের দিকে তাকায়, বিড়বিড় করে বলে, কী আশ্চর্য! মানুষগুলো দেখি পশু হয়ে যাচ্ছে? একজনের চেহারা দেখেছ? কী ভয়ংকর?
সেক্রেটারি মেয়েটি কোনো কথা বলল না। তার কথা বলার রুচি হল না।
.
অক্সিরন কোম্পানির সামনে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষেরা পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। একটা সঁজোয়া গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে একজন অফিসার মেগাফোনে চিৎকার করে বলল, সবাইকে এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এই মুহূর্তে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।
লক্ষ লক্ষ মানুষের চিৎকারে অফিসারের কণ্ঠ চাপা পড়ে গেল। সমুদ্রের গর্জনের মতো মানুষের হুংকার দিয়ে বলল, ধ্বংস হোক! ধ্বংস হোক! জ্বালিয়ে দাও! পুড়িয়ে দাও! ছিনিয়ে নাও ছিনিয়ে নাও!
নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষেরা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, সোজাসুজি জনতার দিকে তাক করে ধরে রাখে। সূর্যের আলোতে অস্ত্রের ধাতব নলগুলো চকচক করতে থাকে।
মাথায় একটা লাল রুমাল বাঁধা মধ্যবয়স্ক মানুষ লাফিয়ে একটা গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, সংগ্রামী বন্ধুরা আমার! তোমরা কি প্রাণ দিতে প্রস্তুত?