ম্যানেজিং ডিরেক্টর তার সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি রেগে উঠছ কেন?
রাগব না? এরকম কথা শুনলে রাগ হয় না?
দেখ-আমরা গোপনে তার কথা শুনছি। পুরো কাজটা বেআইনি। এরকম বেআইনি কাজ করলে কিছু বেফাঁস কথা শুনতে হয়। তা ছাড়া প্রফেসর তো মিথ্যে বলে নি। এরকম হাস্যকর একটা এক্সপেরিমেন্টের জন্যে আমরা এত টাকা ঢালছি-তার কাছে মনে হতেই পারে আমরা বোকা। গাধা টাইপের।
কিন্তু কী জন্যে ঢালছি সেটা তো জানে না।
না। জানার কথা না। সে কেমন করে জানবে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার এটা একটা রাস্তা। কোম্পানির কোটি কোটি টাকা আমরা হালাল করে নেব এই চার পয়সার প্রফেসরকে স্বল্প কিছু টাকা দিয়ে। সরকারি মানুষদের বোকা বানানো খুবই সোজা। তবে গোয়েন্দা বাহিনীর নূতন ডিরেক্টর নাকি একটু ত্যাঁদড় টাইপের, শুধু তার থেকে একটু সতর্ক থাকতে হবে।
.
গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান একটা নিঃশ্বাস ফেলে ইলেকট্রনিক ডিভিশনের কম বয়সী অফিসারকে জিজ্ঞেস করল, পুরোটা রেকর্ড করেছ?
জি স্যার করেছি।
কত বড় সাহস! আমাকে বলে ত্যাঁদড় টাইপের। নূতন ইলেকট্রিক সারভেইলেন্সের যন্ত্রপাতির খবর তো রাখে না তাই এরকম আজেবাজে কথা বলে। যদি জানত আমি সব কোম্পানির সব ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে চোখে চোখে রাখছি-তা হলে এদের সবার পেটের ভাত চাল হয়ে যেত!
ইলেকট্রনিক ডিভিশনের অফিসার বলল, জি স্যার।
একদিক দিয়ে ভালোই হল।
কী ভালো হল স্যার?
এই যে তার পুরো কথাবার্তা রেকর্ড হয়ে থাকল। এই ম্যানেজিং ডিরেক্টর ব্যাটাকে কালকে ডেকে আনব! এইখানে বসিয়ে তাকে এই পুরো ডিডিওটা দেখিয়ে বলব-সোনার চাঁদ এখন বল কে ত্যাঁদড়? তুমি না আমি!
কিন্তু স্যার তা হলে তো জেনে যাবে আমরা সবাইকে সারভেইলেন্সে রেখেছি।
জানুক। না জানলে সে আমাকে টাকাপয়সা দেবে? সবাই আখের গুছিয়ে নিয়েছে। আর আমি এখনো কিছু করতে পারলাম না। এই তো সুযোগ—
ইলেকট্রনিক ডিভিশনের অফিসার বলল, কিন্তু স্যার, আমাদের প্রেসিডেন্ট বলেছেন এটা গোপন রাখতে। সারভেইলেন্সের কথা সবাই জেনে গেলে দেশে হইচই হতে পারে-
গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান টেবিলে থাবা দিয়ে বললেন, আরে! গুল্লি মারো প্রেসিডেন্টের। বুড়ো হাবড়া একটা প্রেসিডেন্ট–
.
প্রেসিডেন্ট দেয়ালে লাগানো মনিটরের দিকে তাকিয়ে টেবিলটা খামচে ধরে নিজের মনে বিড়বিড় করে বললেন, আমি বুড়ো হাবড়া? তুমি কত বড় গর্দভ যে আমার সম্পর্কে এরকম কথা বল? তুমি জান না-আমি পরপর তিনবার এই দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছি? কেউ কি ঘাস খেয়ে একটা দেশের তিনবার প্রেসিডেন্ট হয়?
বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট তার অফিসের নরম চেয়ারে শরীর ডুবিয়ে দিয়ে মনিটরে গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের ধূর্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মানুষটাকে কীভাবে শাস্তি দেয়া যায় তার নানা ধরনের পরিকল্পনা প্রেসিডেন্টের মাথায় খেলতে থাকে।
.
তোমার কী মনে হয়? প্রেসিডেন্ট কী রকম শাস্তি দেবে?
মেরে ফেলবে। নিশ্চয়ই মেরে ফেলবে।
মেরে তো ফেলবেই। কীভাবে মারবে?
দাঁড়াও, মাথাটার ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখি
একটি মহাজাগতিক প্রাণী প্রেসিডেন্টের মাথায় উঁকি দিয়ে তার নিউরনগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। কোন পরিবেশে মানুষ কী করে সেটা সে ভালো করে জানতে চায়।
অনেক দিন থেকেই তারা পৃথিবী নামে একটা গ্রহের মানুষদের নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করছে।
কাবিনের জীবনের একটি দিন
কাবিনের স্ত্রী মুলান ম্লান মুখে বলল, আমাদের কিন্তু টেনেটুনে বড় জোর এক সপ্তাহ চলবে।
মাত্র এক সপ্তাহ? কাবিনের বুক কেঁপে উঠল, কিন্তু সে সেটা বুঝতে দিল না। মুখে এক ধরনের শান্তভাব বজায় রেখে বলল, তার মাঝে কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
কীভাবে হবে?
কাবিন জোর করে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, শুধু কি আমাদের এক সপ্তাহের মতো ব্যবস্থা আছে? আমাদের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে, সবারই এক অবস্থা। সারা পৃথিবীতে এখন এই নিয়ে হইচই হচ্ছে।
হইচই হয়ে কী লাভ? যদি কাজ না হয় তা হলে হইচই করে কী হবে?
কাজ হবে। নিশ্চয়ই কাজ হবে। সাধারণ মানুষ একবার খেপে গেলে কোনো উপায় থাকে না।
মুলান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কিশানের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন ছেলেটার জন্ম দিলাম।
নূতন করে আর কী অমঙ্গল হবে? সারা পৃথিবী জুড়েই কি অমঙ্গল হচ্ছে না?
কাবিন কোনো কথা বলল না। মাথায় টুপিটা বসিয়ে ঘাড়ে ঝোলাটা নিয়ে মুলানের দিকে তাকিয়ে খানিকটা অন্যমনস্কভাবে হাত নেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
পথে একটু পরে পরেই মানুষের জটলা, সবার ভেতরে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ, মনে হয় একটা বিস্ফোরণের পথ খুঁজছে। পার্কের সিঁড়িতে একজন মানুষ হাত নেড়ে কথা বলছিল, তাকে ঘিরে একটা ছোট ভিড় জমে গেছে। কাবিন একটু এগিয়ে যেতেই মানুষটার গলার আওয়াজ শুনতে পেল, সে চিৎকার করে বলছে, এই যে ভাই, তোমরা দেখেছ আমাদের অবস্থা? বিশ্বাস হয় নিজের চোখকে? আমরা এখন একদিন একদিন করে বেঁচে আছি। অন্য মানুষের লোভের মূল্য দিচ্ছি আমরা। আমি, তুমি আর অন্যেরা। কেন আমাদের তাদের লোতের জোগান দিতে হবে? কেন?
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর ভেতর থেকে কয়েকজন গলা উঁচিয়ে বলল, কেন? কেন?