আপনি কে? কী চান?
আমি কেউ না। আমি আসলে কিছু চাই না। সাজ্জাদ একটু হাসল, হেসে চোখে কালো চশমাটি পরে সে হেঁটে ভিড়ের মাঝে মিশে গেল।
রুমানা তার মাথাটা একটু ঝাঁকাল, মনে হচ্ছে মাথাটা ভার ভার হয়ে যাচ্ছে। কী বিচিত্র একটা অভিজ্ঞতা, কাউকে বললে বিশ্বাস করবে না। রুমানা এদিক-সেদিক তাকিয়ে সামনে হেঁটে যায়। কয়েকজন পুলিশ ভিড়ের মাঝে থেকে মহিলা, শিশু আর বৃদ্ধদের আলাদা করছে। তারা লাইন ধরে ধরে বের হয়ে যাচ্ছে। অন্যদের ডান পাশে একটা ছোট ঘেরা দেওয়া জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সাজানো। বড় বড় মনিটর, সেই মনিটরের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে কয়েকজন তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হয় কেউ কেউ বিদেশী, নিচু গলায় নিজেদের মাঝে কথা বলছে। পাশেই একটা অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খোলা, সেখানে নীল ওভার অন পরে কয়েকজন মানুষ অপেক্ষা করছে। তাদের ঘিরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিছু সেনাবাহিনীর মানুষ, মুখ পাথরের মতো ভাবলেশহীন। হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র।
পারল না। ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে এলাম।
রুমানা চমকে উঠল, কে কথা বলে?
অবাক হবার কিছু নেই রুমানা। আমি। আমি কথা বলছি। রুমানা এদিক-সেদিক তাকাল, কেউ নেই তার কাছে। হঠাৎ করে এক ধরনের আতঙ্ক তার মাঝে চেপে বসে।
ভয় পাওয়ার কিছু নেই রুমানা। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। শুধু তোমার মস্তিষ্কে থাকব। যখন সময় হবে অন্য কোথাও চলে যাব।
রুমানা ফিসফিস করে বলল, কে? তুমি কে?
আমি আর তুমি আসলে একই অস্তিত্ব। তাই না? ভেবে দেখ।
রুমানার হঠাৎ করে শৈশবের স্মৃতি ভেসে আসে। অসংখ্য স্মৃতি। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে সেখানে একটা বন্য পশু পুড়ছে। অর্ধদগ্ধ মাংসের টুকরো টেনে নিচ্ছে সবাই। তার মা টেনে আনল একটু টুকরো। সে খাচ্ছে তার মায়ের সাথে পশুর মতোই। হঠাৎ করে মনে পড়ল বরফের হিমবাহের কথা। চারদিকে সাদা বরফ, তুষার পড়ছে, বাতাসের ঝাপটা, কে একজন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ধারালো পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করছে। সে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মানুষটার চোখের দিকে! ঘোড়ায় করে যাচ্ছে সে। তার চারপাশে হাজার হাজার ঘোড়সওয়ার। সবার হাতে ধারালো তরবারি। চিৎকার করছে অমানুষিক গলায়। তাকে বেঁধে রেখেছে। শীর্ণ অভূক্ত সে শুয়ে আছে মাটিতে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করছে সে। গর্ত যন্ত্রণার চিৎকার। ছোট একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পেল সে, জন্ম দিয়েছে একজন নবজাতকের। গুলি হচ্ছে বৃষ্টির মতো। রক্তাক্ত দেহে একজন কিশোর তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনুনয় করে বলছে তাকে বাঁচাতে। কত স্মৃতি, কত সহস্র স্মৃতি, কত লক্ষ বছরের। স্মৃতি!
কত দিন থেকে বেঁচে আছে সে?