রুমানা মাথা নাড়ল, বলল, সেটা এলিয়েন হয়ে গেল?
উঁহু। সেটা হল না। আরেকটু শুনুন তা হলে বুঝবেন। তেঁতুলের বিচি তো আর বেশি দেয়া সম্ভব না তাই প্যাটার্নটা হবে খুব সিম্পল। খুব সহজ সরল। এখন যদি কেউ আপনাকে একটা মানুষের মস্তিষ্ক দেয়, দিয়ে বলে এটার সব নিউরন, তার সকল সম্ভাব্য সিনান্স কানেকশন দিয়ে তুমি একটা প্যাটার্ন সাজাও-তা হলে আপনি চিন্তা করতে পারবেন আপনি কী অসাধারণ প্যাটার্ন বানাতে পারবেন?
রুমানা বলল, শুনেই আমার গা ঘিনঘিন করছে। মানুষের মগজ ছিঃ!
সাজ্জাদ আবার হা হা করে হাসল, হেসে বলল, আসলে আমি মাথা কেটে মগজ বের করে হাত দিয়ে তার নিউরন ঘাঁটাঘাঁটি করার কথা বলছিলাম না! আমি অন্যভাবে বলছিলাম। যেমন-এখন আমি আপনার সাথে কথা বলছি, আপনার মস্তিষ্কে নূতন নূতন সিনান্স কানেকশন হচ্ছে। যখন আপনি একটা বই পড়েন তখন আপনার মস্তিষ্কে নূতন সিনান্স কানেকশন তৈরি করে। যখন আপনি সুন্দর একটা গান শোনেন সেটা আপনার মস্তিষ্কে নূতন সিনান্স কানেকশন তৈরি করে। বলা যায় একটা নূতন প্যাটার্ন তৈরি করে।
রুমানা ভুরু কুঁচকে বলল, তার মানে একটা গান আসলে একটা এলিয়েন?
উঁহু আমি ঠিক তা বলি নি। একটা গানের স্মৃতি কিংবা শৈশবের কোনো একটা ঘটনার স্মৃতি যেরকম মস্তিষ্কে থাকতে পারে সেরকম একটা এলিয়েনও মানুষের মস্তিষ্কে থাকতে পারে।
রুমানা কোনো কথা না বলে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে রইল।
সাজ্জাদ বলল, এলিয়েনের সুবিধেটুকু বুঝতে পারছেন? তার নিজের হাত পা নাক মুখের দরকার নেই। সে আমার হাত পা নাক মুখ ব্যবহার করতে পারে।
রুমানা মাথা নাড়ল, মানুষকে যখন জিনে ধরে তখন যেরকম হয়
সাজ্জাদ হাসল, জিনে ধরায় কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কি না আমি জানি না।
আপনার থিওরিটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?
আছে। সাজ্জাদ হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ঋদি না থাকত তা হলে এইভাবে পুলিশ মিলিটারি ঘেরাও করে আমাকে খুঁজত?
তারা খবর পেল কেমন করে?
সায়েন্টিফিক কমিউনিটি তো আমাদের কথা জানে। অনেক দিন থেকে খুঁজছে। যে এলিয়েনটা আমার কাছে এসেছে তার ক্যারিয়ারটা ধরা পড়ে গিয়েছিল।
রুমানা বলল, যদি সত্যিই এটা হয়ে থাকে। তা হলে আপনি আমাকে এটা বলছেন কেন? আমি যদি আপনাকে ধরিয়ে দিই।
সাজ্জাদ হাসল, আপনি ধরিয়ে দেবেন না।
আপনি কেমন করে এত নিশ্চিত হলেন?
শুধু যে ধরিয়ে দেবেন না তা না। আপনি আসলে আমাকে সাহায্য করবেন যেন আমি ধরা না পড়ি।
রুমানা অবাক হয়ে বলল, আমি আপনাকে সাহায্য করব?
হ্যাঁ। সাজ্জাদ মাথা নাড়ল, আপনি এলিয়েটাকে আপনার মস্তিষ্কে করে নিয়ে যাবেন। পুলিশ মিলিটারি মহিলাদের ছেড়ে দিচ্ছে। আপনাকেও ছেড়ে দেবে। ওদের কাছে খবর আছে যে এলিয়েনের ক্যারিয়ার একজন পুরুষ মানুষ।
রুমানার মুখ এবারে একটু শক্ত হয়ে গেল। বলল, দেখেন আপনার এই গল্প বলার স্টাইলটা বেশ মজার। কিন্তু সেটাকে বেশি টেনে নেবার চেষ্টা করবেন না।
সাজ্জাদ বলল, একটু আমার কথা শুনুন। শেষ কথাটা
রুমানা সাজ্জাদের দিকে তাকাল, কী শেষ কথা?
সাজ্জাদ ফিসফিস করে বলল, মানুষের চোখ আসলে মস্তিষ্কের একটা অংশ। দুজন যখন একজন আরেকজনের দিকে তাকায় তখন এই চোখের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কের যোগাযোগ হতে পারে। এই মুহূর্তে আমার মস্তিষ্কের সাথে আপনার মস্তিষ্কের যোগাযোগ হয়েছে। আমি আসলে আপনার মস্তিষ্কে প্রবেশ করছি।
রুমানা বিস্ফারিত চোখে সাজ্জাদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। সে অবাক হয়ে দেখল তার সামনে থেকে সবকিছু ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। সে শুধু দুটি চোখ দেখতে পাচ্ছে। ঝকঝকে ধারালো চোখ। সেই চোখ দুটো ধীরে ধীরে বিশাল এক শূন্যতায় রূপ নেয়। মনে হয় সেখানে কোনো আদি নেই কোনো অন্ত নেই যতদূর চোখ যায় এক বিশাল শূন্যতা। সেই ভয়াবহ শূন্যতায় বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার করে ওঠে। হঠাৎ করে সেই মহাজাগতিক শূন্যতার মাঝে বিন্দু বিন্দু আলোর ছটা দেখা যায়, লাল নীল সবুজ- পরিচিত আলোর বাইরে বিচিত্র সব রঙ, সেই রঙ কেউ কখনো দেখে নি। আলোর বিন্দুগুলো ধীরে ধীরে একটা রূপ নিতে থাকে। সেই বিচিত্র রূপ খুব ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করে। রুমানার মনে হয় তার সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত একটি অতিপ্রাকৃত দৃশ্য, সেটি নড়ছে। প্রথমে ধীরে তারপর তার গতি বাড়তে থাকে। পুরো দৃশ্যটি নড়তে থাকে, কাঁপতে থাকে, ঘুরতে থাকে, একসময় প্রচণ্ড বেগে পাক খেতে খেতে তার চেতনার মাঝে প্রবেশ করতে থাকে। রুমানার মনে হয় সে বুঝি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে। মনে হয় অতল অন্ধকারে ডুবে যাবে কিন্তু সে বুঝতে পারল কেউ একজন তাকে ধরে রেখেছে। খুব ধীরে ধীরে সেই ঘূর্ণায়মান নকশা, সেই বিচিত্র রঙের আলোর বিন্দু অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথমে আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতা তারপর ধীরে ধীরে সেখানে তার পরিচিত জগৎ ফিরে আসে। সে দেখে সাজ্জাদ তাকে ধরে রেখেছে।
রুমানা ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে সাজ্জাদের দিকে তাকাল। শুকনো মুখে বলল, আমার কী হয়েছিল?
কিছু হয় নি।
হয়েছে। আপনি আমাকে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করেছেন।
আমি কিছু করি নি। সাজ্জাদ মাথা নাড়ল, বলল, আমি হিপনোটিজম জানি না।