খোঁজখবর নিয়ে গিয়াস বুটিকের দোকানে মেয়েকে দেখতে পেল এবং মেয়েকে এক নজর দেখে তার আর চোখের পলক পড়ে না। দুধে আলতায় গায়ের রঙ, রেশমের মতো চুল, চোখের মাঝে অতলান্তের গভীরতা, ঠোঁটগুলো ফুলের পাপড়ির মতো, ঠোঁটের ফাঁকে দাঁতগুলো মুক্তার মতন ঝকঝক করছে। গিয়াস মেয়ের দিকে তাকাল, মেয়েটিও তার দিকে তাকিয়ে মোহিনী ভঙ্গিতে একটু হাসল, এবং সেই হাসি দেখে গিয়াসের বুকের ভেতর নড়েচড়ে গেল। গিয়াস ফিসফিস করে বলল, তুমি কি আমার হবে?
মেয়েটি চোখের ভুরুতে বিদ্যুৎ ছুটিয়ে বলল, কেন নয়?
.
কাজেই যথাসময়ে ধুমধাম করে বিয়ে হল। সুন্দরী বউ খুবই লাজুক, লম্বা ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। সব অনুষ্ঠানের শেষে বাসর রাতে বউয়ের মুখের ঘোমটা তুলে গিয়াস ভয়ে চিৎকার করে ওঠে, তার বউয়ের জায়গায় যে বসে আছে তার চেহারা পুরোপুরি বানরের মতো! গিয়াস তোতলাতে তোতলাতে বলল, তু-তু-তুমি?
হ্যাঁ আমি।
তুমি কে?
আমি তোমার বউ।
কিন্তু তোমাকে তো অন্যরকম দেখেছি। অপরূপ সুন্দরী!
আবার হয়ে যাব।
কীভাবে?
নূতন বউ তরমুজের বিচির মতো কালো দাঁত বের করে হেসে বলল, কাল সকালেই মায়ের দোকানের সিনাপ্সুঘুটিয়াটা বাসায় এনে লাগিয়ে দেব!
মিয়া গিয়াসউদ্দিন তোতলাতে তোতলাতে বলল, সি-সি-সি-? এতদিন যে যন্ত্রটার নাম সে অবলীলায় বলে এসেছে হঠাৎ করে সেই নামটা তার মুখেই আসতে চাইল না।
স্মৃতি
শপিংমল থেকে বের হয়েই রুমানা দেখল অনেক মানুষের ভিড়। মানুষগুলো কেন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে বোঝার জন্য সে একটু মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করল। মানুষের ভিড়ে কিছু দেখা যায় না। মনে হল সামনে কয়েকটা পুলিশের গাড়ি। শুধু পুলিশ নয় মিলিটারিও আছে–তারা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে তারা মানুষগুলোকে সার্চ করছে।
রুমানার একটু তাড়াহুড়ো ছিল, এখন এই ঝামেলা থেকে কখন বের হতে পারবে কে জানে। পুলিশ আর মিলিটারি মিলে কী খুঁজছে সেটাই বা কে বলতে পারবে?
আসলে পুলিশ আর মিলিটারি আমাকে খুঁজছে। রুমানা কানের কাছে ফিসফিস করে বলা কথাগুলো শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠে মানুষটার দিকে তাকাল। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছরের হাসিখুশি চেহারার একজন মানুষ। মাথায় এলোমেলো চুল, চোখে কালো একটা সানগ্লাস। মানুষটা দীর্ঘদেহী এবং সুদর্শন, দুএকদিন শেভ করে নি বলে গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি কিন্তু সেজন্যে তাকে খারাপ লাগছে না। একটা নীল শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে আছে, ফর্সা রঙে তাকে খুব মানিয়ে গেছে।
মানুষটা ঠাট্টা করছে কি না রুমানা বুঝতে পারল না, আমতা-আমতা করে বলল, আপনাকে খুঁজছে?
হ্যাঁ।
আপনি কী করেছেন?
মানুষটা একটু হেসে চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলল, চোখগুলো খুব সুন্দর, কেমন জানি ঝকঝক করছে। সেটা ছাড়াও চোখের মাঝে অন্য কিছু একটা আছে যেটা রুমানা চট করে ধরতে পারল না। মানুষটা বলল, আমি আসলে কিছুই করি নি।
আপনি যদি কিছুই না করবেন তা হলে পুলিশ মিলিটারি খামোখা আপনাকে খুঁজছে কেন?
মানুষটা এদিক-সেদিক তাকাল। তারপর নিচু গলায় বলল, আমি আসলে একজন এলিয়েন।
রুমানা কথাটা স্পষ্ট করে ধরতে পারল না, বলল, আপনি কী?
এলিয়েন। মানুষটা ব্যাখ্যা করে, মহাজাগতিক প্রাণী।
রুমানা কিছুক্ষণ মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কী হেসে ফেলবে নাকি গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়বে, বুঝতে পারল না। কিছুক্ষণ মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলল, এলিয়েন?
হ্যাঁ।
পৃথিবীতে বেড়াতে এসেছেন?
মানুষটা মাথা চুলকে বলল, অনেকটা সেরকম।
কেমন লাগছে পৃথিবীতে?
মানুষটা হেসে ফেলল, বলল, আপনি আসলে আমার কথা বিশ্বাস করেন নি, তাই না? ভাবছেন ঠাট্টা করছি।
খুব ভুল হয়েছে?
না ভুল হয় নাই। আসলে এটা তো বিশ্বাস করার ব্যাপার না। আমি নিজেই প্রথমে বিশ্বাস করি নি।
রুমানা ভুরু কুঁচকে বলল, আপনি নিজে? একটু আগে না আপনি বলেছিলেন আপনি এলিয়েন?
হ্যাঁ, সেটাও সত্যি। আমি আসলে সাজ্জাদ। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু একই সাথে একজন এলিয়েন।
রুমানা বলল, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি কোথা থেকে নিয়েছেন? মঙ্গল গ্রহে? মঙ্গল গ্রহের ডিগ্রি পৃথিবীতে একসেন্ট করে?
সাজ্জাদ নামের মানুষটা, কিংবা এলিয়েনটা শব্দ করে হাসল, বলল, আপনার গুড সেন্স অফ হিউমার।
কেন? এলিয়েনদের সেন্স অফ হিউমার থাকে না?
আসলে এলিয়েন নিয়ে মানুষের অনেক রকম মিস-কনসেপশন আছে। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা এলিয়েন হলেই সেটা দেখতে ভয়ংকর কিছু হবে।
রুমানা মাথা নাড়ল, বলল, ভয়ংকর না হলেও অন্য রকম হবে। এক্স ফাইলে দেখেছি। সাইজে ছোট, মাথাটা বড়, চোখগুলো এরকম টানা টানা। সবুজ রঙের_
সাজ্জাদ বলল, আমিও দেখেছি। ভেরি ইন্টারেস্টিং লুকিং।
কিন্তু আপনি বলছেন সেটা সত্যি না?
আসলে আমরা তো সব সময়েই কিছু একটা দেখি যেটা ধরা যায়, হেঁয়া যায়। তাই যেটা ধরা-ছোঁয়া যায় না-যেটা হয়তো এক ধরনের প্যাটার্ন, এক ধরনের ইনফরমেশান, সেটা আমরা কল্পনা করতে পারি না।
তার মানে এলিয়েনটা একটা প্যাটার্ন?
জিনিসটা আরো জটিল কিন্তু ধরে নেন অনেকটা সত্যি।
রুমানা ভুরু কুঁচকে বলল, কীসের প্যাটার্ন?
সাজ্জাদ বলল, কেউ যদি আপনাকে কয়েকটা তেঁতুলের বিচি দেয় আপনি সেটা দিয়ে একটা প্যাটার্ন বানাতে পারবেন না? কোনো একটা তারার মতো সাজালেন, কিংবা বৃত্তের মতো সাজালেন-