ক্যাপ্টেন রন খ্রাউসের দিকে তাকিয়ে বলল, খ্রাউস, তোমার কথামতো আমরা চেষ্টা করেছি। তারা এখন তোমার সাথে এই খেলাটি খেলতে চাইছে না!
খ্রাউস উত্তেজিত মুখে বলল, কিন্তু এই খেলা তাদের খেলতে হবে। খেলতেই হবে– তা না হলে আমরা কিছুতেই তাদের স্পর্শ করতে পারব না! তাদের আবার বল। যেভারে হোক সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে হলেও ডান দিকের একটা বাতি জ্বালাতে হবে! জ্বালাতেই হবে।
ক্যাপ্টেন রন একটু অবাক হয়ে ব্রাউসের দিকে তাকিয়ে রইল, কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ সে একটু অস্বস্তি অনুভব করতে থাকে। সে কমিউনিকেশন অফিসার রাটুলের দিকে তাকিয়ে বলল, রাটুল আরেকটা বার্তা পাঠাও।
কী পাঠাব?
লিখো যেভাবেই হোক তোমাদের ডান দিকের বাতিটি জ্বালাতে হবে। অত্যন্ত জরুরি।
রাটুল ক্ষীপ্র হাতে বার্তাটি পাঠিয়ে দেয় এবং কিছুক্ষণের মাঝেই একটা উত্তর চলে আসে, আমাদের অত্যন্ত জ্বালানি সংকট কিন্তু তোমাদের অনুরোধে আমরা আমাদের ডান দিকের একটা জিনন ল্যাম্প জ্বালাচ্ছি।
মহাকাশযানটি তখন এত কাছাকাছি চলে এসেছে যে তার নকশাকাটা দেয়ালটিও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তার গঠনটি এত বিচিত্র যে দেখে মনে হয় এটি বুঝি মহাকাশযান নয়, এটি বুঝি কোনো বিমূর্ত শিল্পীর হাতে গড়া বিশাল একটি ভাস্কর্য।
খ্রাউস চোখ বড় বড় করে মহাকাশযানটির দিকে তাকিয়ে ছিল, ভেতরকার উত্তেজনা হঠাৎ করে সবাইকে স্পর্শ করেছে। সবাই দেখল ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা মহাকাশযানটিতে একটা জিননের নিষ্প্রভ বাতি জ্বলে উঠল। আশ্চর্যের ব্যাপার সেটি মহাকাশযানটির ডান দিকে জ্বলে ওঠে নি সেটি জ্বলে উঠেছে বাম দিকে।
খ্রাউস মহাকাশযানের চেয়ারের হাতলটি খামচে ধরে চিৎকার করে উঠে বলল, থামাও! থামাও মহাকাশযান। থামাও!।
ক্যাপ্টেন রন অবাক হয়ে বলল, কী হয়েছে? কেন থামাব?
খ্রাউস হাত দিয়ে মহাকাশযানটা দেখিয়ে বলল, এটা প্রতি পদার্থের তৈরি।
ক্যাপ্টেন রন হতচকিতের মতো সামনে তাকিয়ে রইল, সে দেখতে পেল খুব ধীরে ধীরে দুটি মহাকাশযান এগিয়ে আসছে, আর কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই একটা আরেকটাকে স্পর্শ করবে। কোনোভাবেই সে এখন তার মহাকাশযানকে থামাতে পারবে না। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, সামনের মহাকাশযানটি প্রতি পদার্থের তৈরি। যখন একটি আরেকটিকে স্পর্শ করবে মুহূর্তের মাঝে দুটি মহাকাশযানই ভয়ংকর বিস্ফোরণে অদৃশ্য হয়ে যাবে, থাকবে শুধু অচিন্তনীয় শক্তি।
মহাকাশযানের সবাই স্থির দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে রইল। খ্রাউস ভেবেছিল সবাইকে বলবে, সেই বিংশ শতাব্দীতে রিচার্ড ফাইনম্যান কৌতুক করে বলেছিলেন যদি কখনো কোনো মহাজাগতিক মানুষ করমর্দন করার জন্যে ভুল হাত এগিয়ে দেয় তার সাথে করমর্দন কোরো না–সেই মানুষ সম্ভবত প্রতি পদার্থে তৈরি। কিন্তু কেউ খ্রাউসের সেই গলাটি শুনতে আগ্রহী হয় নি। পদার্থের বেলায় যেটি ডান দিক প্রতি পদার্থের বেলায় সেই ডান দিক উল্টো দিকে।
মহাকাশে পদার্থ ও প্রতি পদার্থের তৈরি দুটো মহাকাশযানের সংস্পর্শে বিস্ফোরণের কারণে যে শক্তির সৃষ্টি হয়েছিল সেটি কয়েক আলোকবর্ষ দূর থেকে দেখা গিয়েছিল।
সাহস
মহাকাশযানের অধিনায়ক জিজ্ঞেস করলেন, তুমি প্রস্তুত?
অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মহাকাশযানের ক্রু ইগর কাঁপা গলায় বলল, জি ক্যাপ্টেন, আমি প্রস্তুত।
তা হলে যাও, আশা করি শত্রুর সাথে এই যুদ্ধে তুমি জয়ী হবে।
ইগর তবু দাঁড়িয়ে থাকে, অগ্রসর হয় না। অধিনায়ক জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?
ভয় করছে। মহাজাগতিক এই প্রাণীর সাথে যুদ্ধ করতে যেতে আমার ভয় করছে ক্যাপ্টেন।
তোমার কোনো ভয় নাই ইগর। ক্যাপ্টেন তার হাতের রিমোট কন্ট্রোল স্পর্শ করে বললেন, তোমার ভয় আমি দূর করে দিচ্ছি।
রিমোট কন্ট্রোল স্পর্শ করে মহাকাশযানের অধিনায়ক ইগরের মস্তিষ্কে বিশেষ কম্পনের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ পাঠাতে শুরু করলেন। একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন, এখনো ভয় করছে?
ইগর মাথা নাড়ল, না ক্যাপ্টেন। এখন আর মোটেও ভয় করছে না।
তা হলে যাও, যুদ্ধ করতে যাও।
ইগর হঠাৎ ঘুরে মহাকাশযানের অধিনায়কের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কেন যুদ্ধ করতে যাব? তুমি নিজে কেন যাও না?
অধিনায়ক চমকে উঠে বললেন, কী বলছ তুমি?
আমি তোমাকে ভয় পাই নাকি? মোটেও ভয় পাই না! ইগর অস্ত্রটা মহাকাশযানের অধিনায়কের গলায় লাগিয়ে বলল, ক্যাপ্টেন, তুমি যাও যুদ্ধ করতে। তা না হলে তোমার মাথা আমি ছাত করে দেব।
ক্যাপ্টেন কিছু বোঝার আগেই ইগর তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে ক্যাপ্টেন বুঝতে পারল রিমোট কন্ট্রোলে ইগরের সাহসের বোতামে তিনি ভুল করে একটু বেশি জোরে চাপ দিয়ে ফেলেছেন। তার এখন বেশি সাহস হয়ে গেছে!
সিনাপ্সুঘুটিয়া
যন্ত্রটার নাম সিনাপ্সুঘুটিয়া–যে কোনো স্বাভাবিক মানুষই এই যন্ত্রের নাম শুনে আঁতকে উঠবে, এবং এই নামটা উচ্চারণ করার চেষ্টা করলে তাদের দুই চারটা দাঁত ভেঙে যাবার অবস্থা হবে। কিন্তু মিয়া গিয়াসউদ্দিনের সেরকম কিছুই হল না, সে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। লেখাপড়া করলেও বিজ্ঞান খুব ভালোভাবে বোঝে। ইন্টারনেট থেকে সে কখনোই সুন্দরী নারীদের কেচ্ছাকাহিনী ডাউনলোড করে নাই-সুযোগ পেলেই বিজ্ঞানের জিনিসপত্র ডাউনলোড করে পড়েছে। কোন কমোজমে কয়টা জিন জিজ্ঞেস করলে সে বলে দিতে পারে, সব মিলিয়ে কয়টা কোয়ার্ক এবং আজব কোয়ার্ক কতটুকু আজব সেটাও সে বলে দিতে পারে। তাই সিনাপ্সুঘুটিয়া নাম দেখেই সে বুঝে ফেলল এটা মস্তিষ্কে ব্যবহার করার একটা যন্ত্র, বাইরে থেকে স্টিমুলেশান দিয়ে এই যন্ত্র মানুষের মাথায় সিনান্সকে ঘুঁটে ফেলতে পারবে–যার অর্থ তাকে বুঝিয়ে দিতে হল না।