মহামান্য কিহি ঘাসের উপর পা দিয়ে সামনে হেঁটে যেতে থাকেন, তাকে একটা লোকালয়, একটা জনপদ খুঁজে বের করতে হবে। পৃথিবীর পূর্ণাঙ্গ মানুষকে নিজের চোখে দেখতে হবে। তার কৌতূহল আর বাধ মানতে চাইছে না। হঠাৎ মহামান্য কিহি এক ধরনের সতর্ক শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন-খানিকটা দূরে কয়েকটি চতুষ্পদ প্রাণী তাদের চারপায়ের ওপর ভর করে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কী বিচিত্র এই প্রাণীটি আর কী বিচিত্র তার দৃষ্টি, তার সময়ে কখনো তিনি এই ধরনের কোনো প্রাণী দেখেন নি।
প্রাণীগুলো এক ধরনের হিংস্র শব্দ করতে করতে হঠাৎ চারপায়ে ভর করে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং হঠাৎ করে মহামান্য কিহি বুঝতে পারেন এগুলো আসলে মানুষ। ভয়াবহ আতঙ্কের একটা শীতল স্রোত ভঁর মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায় তার ভবিষ্যতের মানুষের এটি কোন ধরনের পরিণাম? মানুষগুলো একটু কাছে এলে তিনি বুঝতে পারেন। মাদের সন্তান জন্ম দেবার কষ্ট লাঘব করার জন্যে এদের মাথা ছোট করে দেয়া হয়েছিল, সেজন্যে মস্তিষ্কের আকারও ছোট হয়েছে। এখন তারা আর বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ নয়, তারা এখন বুদ্ধিবৃত্তিহীন পশু। তারা সবাই উলঙ্গ, কাপড় পরার প্রয়োজনীয়তাটুকু পর্যন্ত অনুভব করে না। শরীরের ওজন সঠিকভাবে ছড়িয়ে দেবার জন্যে তারা এখন চার হাত-পায়ে ছোটাছুটি করে। বিবর্তনে মানুষ একবার দুই পায়ে দাঁড়িয়েছিল এখন উল্টো বিবর্তনে আবার তারা চার পায়ে ফিরে গেছে। মহামান্য কিহি এই মানুষগুলোর দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। তাদের ভেতরে আরো অনেক সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সেগুলো বোঝার আগেই মানুষগুলো তাকে ধরে ফেলল-তারা তাদের হাতগুলো এখনো ব্যবহার করতে পারে। শক্ত হাতে তাকে ধরে ফেলে হিংস্র শব্দ করতে করতে মানুষগুলো দাঁত দিয়ে কামড়ে তার কণ্ঠনালি ছিঁড়ে ফেলল।
মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তিনি তাদের চোখের দিকে একবার তাকাতে পেরেছিলেন, বোধহীন পত্র হিংস্র চোখ, কিন্তু সেগুলো ছিল নিখুঁত অক্টোপাসের চোখ।
এক্সপেরিমেন্ট
মধ্যবয়স্ক প্রফেসর মহিলাটিকে বললেন, এই যে এটা হচ্ছে ডায়াল আর এটা হচ্ছে সুইচ। ডায়ালটা যত বেশি ঘোরাবেন ভোল্টেজ তত বেশি হবে। যখন সুইচ টিপে ধরবেন তখন ঐ মানুষটা ইলেকট্রিক শক খাবে।
নির্বোধ ধরনের মহিলাটি জিজ্ঞেস করল, ঐ মানুষটা কি আমাকে দেখতে পাবে?
না, আপনাকে দেখতে পাবে না।
ইলেকট্রিক শক দিলে কি মানুষটার কষ্ট হবে?
অবশ্যই কষ্ট হবে? প্রফেসর হা হা করে হেসে বললেন, ইলেকট্রিক শক খেলে মানুষের কষ্ট হয় জানেন না?
তা হলে ঐ মানুষটা শক খেতে রাজি হয়েছে কেন?
দুটি কারণে। প্রথম কারণ হচ্ছে এটা একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। আমরা দেখতে চাচ্ছি একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি কত ভোল্টেজের ইলেকট্রিক শক কতক্ষণ সহ্য করতে পারে। এই মানুষটা সেই এক্সপেরিমেন্টে বসে ইলেকট্রিক শক খেতে রাজি হয়েছে।
গাধা টাইপের মানুষ?
খানিকটা বলতে পারেন। তবে দ্বিতীয় একটা কারণ আছে–এই মানুষটা যে এক্সপেরিমেন্টে বসতে রাজি হয়েছে সে জন্যে আমরা তাকে কিছু টাকাপয়সা দিব।
কত টাকা?
প্রফেসর হাসার ভঙ্গি করে বললেন, সেটা নাই বা শুনলেন। আমরা টাকার পরিমাণটা গোপন রাখছি।
নির্বোধ ধরনের মহিলাটি বড় চোখ বড় বড় করে বলল, অনেক টাকা নিশ্চয়ই?
মোটামুটি।
তা হলে মনে হয় মানুষটা গাধা টাইপের না। একটু চালু টাইপের।
আপনি সেটাও বলতে পারেন।
মহিলাটি ডায়াল এবং সুইচটা পরীক্ষা করে বলল, আচ্ছা খুব বেশি ইলেকট্রিক শক খেয়ে মানুষটা কি মরে যেতে পারে?
প্রফেসর বললেন, না, মারা যাবার কোনো আশঙ্কা নেই-মানুষটা কষ্ট পাবে, ভোল্টেজ যদি বেশি হয় তা হলে অমানুষিক কষ্ট, কিন্তু মারা যাবে না।
যদি মরে যায়?
মরবে না। আপনার কোনো ভয় নেই-আপনি নিশ্চিত মনে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে যান। তা ছাড়া মানুষটাকে দিয়ে বন্ড লিখিয়ে নিয়েছি। এই এক্সপেরিমেন্ট করার কারণে তার যদি শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় তা হলে আমরা তার জন্যে দায়ী হব না।
মহিলাটির চেহারায় সন্তুষ্টির ছাপ পড়ল, বলল, সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে কোর্টে কেস করতে পারবে না।
না পারবে না। মধ্যবয়স্ক প্রফেসর বললেন, তা হলে আমরা কাজ করি কী বলেন?
ঠিক আছে।
প্রফেসর বললেন, আপনার কাজ খুব সহজ। ডায়ালটা ঘোরাবেন আর সুইচ টিপে ধরবেন। ভেতরে রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা আছে সবকিছু রেকর্ড হয়ে যাবে। যখন এক্সপেরিমেন্ট শেষ হয়ে যাবে আমাদের ডাক দেবেন।
ঠিক আছে।
মহিলাটি ছোট জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল, মানুষটা একটা চেয়ারে বসে আছে, চোখেমুখে একটু বেপরোয়া ভাব, তবুও বোঝা যাচ্ছে একটু একটু ভয় পাচ্ছে। দুটো হাত চেয়ারের হাতলের সাথে আর পা চেয়ারের পায়ের সাথে বেল্ট দিয়ে বাঁধা, মানুষটা যেন হঠাৎ করে উঠে চলে যেতে না পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা। মানুষটার দুই হাতে দুইটা ধাতব স্ক্র্যাপ লাগানো সেখান থেকে ইলেকট্রিক তার বের হয়ে এসেছে, এই দুটি ইলেকট্রিক তার দিয়ে মানুষটাকে শক দেয়া হবে। গোলাপি রঙের একটা টি শার্ট আর জিনসের প্যান্ট পরে। আছে, মাথার চুল এলোমেলো, গায়ের রঙ বেশ ফর্সা। মুখে দু তিন দিনের না কামানো দাড়ি।