গুস্তাভ তার গোঁফে হাত বুলিয়ে বলল, কঠিন প্রশ্ন করেছ।
কেন? এটা কঠিন প্রশ্ন কেন?
তার কারণ আমার পিকআপের চেসিস বাইশ সনের, ইঞ্জিন ছাব্বিশ সনের, ফুয়েল সিস্টেম তেইশ সনের, ট্রান্সমিশন চব্বিশ সনের আর চাকাগুলো এই সেদিন লাগিয়েছি-তা হলে তোমরাই বল গাড়িটা কোন বছরের।
কিয়া হিহি করে হেসে বলল, সবগুলো বছর যোগ দিয়ে গড় করে ফেলতে হবে।
নীল বলল, আমি আগে কখনো এরকম গাড়ি দেখি নাই।
গুস্তাভ হাসতে হাসতে বলল, তোমরা যেখান থেকে এসেছ সেখানে এরকম গাড়ি দেখার কথা না। শুধু গাড়ি না আরো অনেক কিছু দেখার কথা না!
রিকি এগিয়ে এসে বলল, আমাদের হাতে সময় বেশি নাই। চল আমরা শুরু করে দিই, আমাদের কিন্তু অনেক দূর হাঁটতে হবে। আগে কোথায় যাবে বল।
সবাই চিৎকার করে তাদের পছন্দের জায়গার কথা বলতে যাচ্ছিল নীল হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিল, বলল, না। এভাবে হবে না। একেকজনের পছন্দ একেক জায়গায় কাজেই সেভাবে হবে না। রিকি ঠিক করুক সে আমাদের কোথায় নিতে চায়। আমরা সবাই রিকির পিছু পিছু যাব।
ঠিক আছে।
রিকি হচ্ছে আমাদের লিডার।
সবাই চিৎকার করে বলল, রিকি হচ্ছে আমাদের লিডার।
রিকি বনের রাস্তাটা দেখে বলল, আমরা এই পথ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বনে ঢুকে যাব। সেখান দিয়ে পাহাড়ে উঠে প্রথমে গ্লাইডারে উড়ব। তারপর সেখান থেকে হ্রদে গিয়ে ভেলা। ঠিক আছে?
সবাই সমস্বরে বলল, ঠিক আছে।
গুস্তাভর পিকআপটা চলে যাওয়া পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করে তারপর তারা বনের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে। প্রথমে মাতিষা মৃদু স্বরে এবং একটু পরে গলা ছেড়ে গান গাইতে থাকে-সবাই তার সাথে গলা মেলায়।
নির্জন বনভূমি হঠাৎ করে কিছু শি গানের সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে।
১৫.
প্রিন্সিপাল কেটির মুখ মুহূর্তে ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। সে আর্তকণ্ঠে বলল, কী বলছ তুমি?
ড্রাইভার বলল, আমি ঠিকই বলছি প্রিন্সিপাল। বাসটা যাবার কথা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে-সেটা চলে এল রেলস্টেশনে।
প্রিন্সিপাল কেটি ক্রুদ্ধ গলায় বলল, তুমি কোথায় বাস নিয়ে যাচ্ছ সেটি দেখবে না?
কখনোই তো দেখি না, জি.পি.এস আমাদের নিয়ে আসে। কেমন করে যে গন্তব্যটা পাল্টে গেল!
প্রিন্সিপাল কেটির মাথায় তখন হাজারো রকম আশঙ্কার কথা উঁকি দিচ্ছে, সে ঠিক করে চিন্তা করতে পারছিল না। বিড়বিড় করে বলল, তুমি বাচ্চাগুলোকে নামতে দিলে কেন?
আমি কী নামতে দিয়েছি? কিছু বোঝার আগেই ইলেকট্রনিক দরজা খুলে সবাই নেমে গেল। বলল শপিংমলে যাচ্ছে।
শপিংমল? এই বাচ্চারা শপিংমলে কেন যাবে?
আমি জানি না প্রিন্সিপাল কেটি। কী করতে হয় আপনি করেন।
প্রিন্সিপাল কেটি বলল, কী করব আমি জানি না তবে তুমি জেনে রাখ যদি এই বাচ্চাদের কারো কিছু হয় তা হলে তুমি আমি কিংবা এই স্কুলের কারো কিন্তু রক্ষা নাই। বুঝেছ?
কিছুক্ষণের মাঝেই স্কুল কম্পাউন্ডে অনেকগুলো পুলিশ, সেনাবাহিনীর এবং অভিভাবকদের গাড়ি এসে হাজির হল। প্রিন্সিপাল কেটি তার অফিসে অসহায়ভাবে বসে রইল এবং তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইল অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
রন সরাসরি অফিস থেকে চলে এসেছে। তার শরীরে পূর্ণ সামরিক পোশাক, এই পোশাকে তাকে একজন অপরিচিত মানুষের মতো দেখায়। তার মুখ পাথরের মতো কঠিন। সে চাপা এবং হিংস্র গলায় বলল, আপনারা দাবি করেন যে আপনাদের স্কুল আমাদের সন্তানদের পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়েছে। তা হলে কোথায় আপনাদের দায়িত্ববোধ? আমাদের ছেলেমেয়েরা কোথায়?
প্রিন্সিপাল কেটি দুর্বল গলায় বলল, আমি আপনাদের বলেছি-এই বারো জন শিশু পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান শিশু। এরা যদি কোনো একটা পরিকল্পনা করে কিছু একটা করে তা হলে আমরা দূরে থাকুক আপনারা সবাই মিলেও তাদের থামাতে পারবেন না।
আপনি বলছেন তারা পরিকল্পনা করে পালিয়ে গেছে?
হ্যাঁ। আমার তাই ধারণা। খুব ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তারা পালিয়ে গেছে।
রন অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, আমাদের সন্তানেরা এতদিন ঠিকভাবে থেকে হঠাৎ করে কেন খেপে উঠল? কেন তারা স্কুল থেকে পালিয়ে গেল? কী করেছেন আপনারা তাদের?
আমরা কিছুই করি নি! ঠিক যেভাবে তাদের লেখাপড়া করানোর কথা, যখন যেটা যেভাবে শেখানোর কথা হুবহু সেভাবে শিখিয়ে আসছি। পুরো ব্যাপারটা আমাদের কাছেও একটা রহস্য।
কাঁদো কাঁদো গলায় একজন মা বলল, আমারশান্তশিষ্ট মেয়ে পালিয়ে গেছে? আমি বিশ্বাস করতে পারি না। ভিডিফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে। কী আশ্চর্য।
ঠিক এরকম সময় পুলিশের এক কর্মকর্তার ভিডিফোন বেজে ওঠে, সে নিচু গলায়। কিছুক্ষণ কথা বলে হাসিমুখে ঘরের সবার দিকে তাকাল। বলল, খোঁজ পাওয়া গেছে।
খোঁজ পাওয়া গেছে? সত্যি? রন অবাক হয়ে পুলিশ কর্মকর্তার দিকে তাকাল। কোথায় আছে তারা।
স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা বারো জন কাছাকাছি একটা বিনোদন কেন্দ্রের টিকেট কিনেছে। আমি দুই প্লাটুন পুলিশ বিনোদন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।
একজন মা অবাক হয়ে বলল, বিনোদন কেন্দ্র? আমি তো চেষ্টা করেও আমার ছেলেকে কোনো দিন বিনোদন কেন্দ্রে নিতে পারি না। তারা দল বেঁধে এখন বিনোদন কেন্দ্রে গিয়েছে?
প্রিন্সিপাল কেটি মাথা নেড়ে বলল, আপনারা এই বাচ্চাদের খাটো করে দেখবেন না এরা সবাইকে বিভ্রান্ত করার জন্যে এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে-আসলে তারা বিনোদন কেন্দ্রে যায় নি। অন্য কোথাও গেছে।