কেন? তোমরা জান না আমাদের সবার একটা করে সিমুলেশন আছে?
হ্যাঁ জানি। ডিজাইনাররা তোমাদের সবার জন্যে একটা করে সিমুলেশন দিয়েছে!
আমাদের কাজকর্ম যদি সিমুলেশনের সাথে না মেলে তা হলে আমার মা খুব ঘাবড়ে যায়। কালো চুলের মেয়েটি বড়দের মতো ভঙ্গি করে বলল, সেটা খুবই ঝামেলার ব্যাপার!
প্রিন্সিপাল কেটি বলল, কিন্তু সিমুলেশনের সাথে মিলবে না কেন? অবশ্যই মিলবে। তোমরা তো জানো তোমাদের অনেক যত্ন করে ডিজাইন করা হয়েছে! তোমরা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে প্রতিভাবান বাচ্চা!
লাল চুলের একটা মেয়ে ঠোঁট উল্টে বলল, কী জানি! এত কিছু বুঝি না! সবাই শুধু বলে প্রতিভাবান! প্রতিভাবান। আমি তো এত কিছু বুঝি। আমি তো সেরকম কিছু দেখি না।
ছোট ছোট করে চুল ছাটা একটা ছেলে বলল, আমিও সে রকম কিছু দেখি না। ছেলেটা তার পাশে বসে থাকা সোনালি চুলের ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি বুঝ নীল?
নীল গম্ভীর মুখে বলল, কেমন করে বুঝব? সেটা বোঝার জন্যে আমাদের দরকার একজন সাধারণ মানুষ। তার সাথে তুলনা করলে না হয় বুঝতাম!
প্রিন্সিপাল কেটি বলল, এই যে আমি! আমার কোনো প্রতিভা নেই। আমি খুব সাধারণ-আমার সাথে তুলনা কর!
নীল খুক করে একটু হেসে বলল, তুমি তো বড় মানুষ! বড় মানুষদের আমি একেবারে বুঝতে পারি না!
পাশে বসে থাকা একটা মেয়ে বলল, আমিও বুঝতে পারি না!
অনেকেই সায় দিয়ে বলল, আমিও পারি না!
কালো চুলের মেয়েটা বলল, আমার কী মনে হয় জান?
কী?
বড় মানুষেরা আসলে একটু বোকা!
কথাটা মনে হয় সবারই খুব পছন্দ হল, সবাই জোরে জোরে মাথা নেড়ে হিহি করে হাসতে রু করে। নীল সবার আগে হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের বোকা বলেছি বলে তোমরা কিছু মনে কর নি তো?
প্রিন্সিপাল কেটি হাসিমুখে বলল, না। আমরা কিছু মনে করি নি!
হাসি-খুশি শিক্ষিকা এতক্ষণ চুপ করে বাচ্চাদের ছেলেমানুষি কথা শুনছিল এবারে সে মুখ খুলল। বলল, বাচ্চারা তোমরা তো বোকা আর বুদ্ধিমান নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ তাই না? আমি দেখতে চাই তোমরা আসলে ব্যাপারটা বুঝ কি না! আমরা আগামী কয়েক দিন বিভিন্ন রকম প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করব। আজকে এনেছি একটা মাছ। সারা দিন এই মাছটাকে নিয়ে সময় কাটাব-এই মাছটার বুদ্ধিমত্তা কীভাবে কাজ করে সেটা বোঝার চেষ্টা করব। আগামীকাল আনব একটা গিরগিটি এক ধরনের সরীসৃপ। এর পরের দিন আনব একটা পাখি। তার পরের দিন একটা ছোট কুকুরের বাচ্চা-একটা স্তন্যপায়ী প্রাণী। সবশেষে আনব একটা শিম্পাঞ্জি। তোমরা দেখবে কীভাবে একটা প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে।
নীল হাততালি দিয়ে বলল, কী মজা।
হ্যাঁ। অনেক মজা। হাসি-খুশি শিক্ষিকা বলল, চল তা হলে আমরা কাজ শুরু করে দিই। কোন প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা কী রকম সেটা বোঝার জন্যে কিছু এক্সপেরিমেন্ট ঠিক করে ফেলি।
কালো চুলের মেয়েটি বলল, এই মাছটাকে নিয়ে কী করা যায় সেটা আমি ঠিক করে ফেলেছি!
শিক্ষিকা বলল, হ্যাঁ আমরা সেটা শুনব।
প্রিন্সিপাল কেটি কানার দিকে তাকিয়ে বলল, বাচ্চারা ক্লাস করুক। চল, আমরা যাই।
চল। ক্ৰানা প্রিন্সিপাল কেটির পিছনে পিছনে ক্লাস ঘর থেকে বের হয়ে এল। করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রিন্সিপাল কেটি বলল, ক্রানা। আমার মাথায় একটা অসাধারণ আইডিয়া এসেছে।
কী?
এই বাচ্চাগুলো এখন বিভিন্ন প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করছে। মাছ, সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী-সবশেষে একটা শিম্পাঞ্জি। আমার কী মনে হয় জান? শিম্পাঞ্জিতে থেমে গিয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলে কেমন হয়?
আরো এক ধাপ?
হ্যাঁ। সবশেষে আনা হবে এই বাচ্চাদের বয়সী একটা মানবশিশু। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে ডিজাইন করা মানবশিশু নয় একেবারে সাধারণ মানবশিশু।
সাধারণ?
হ্যাঁ। প্রিন্সিপাল কেটি উত্তেজিত গলায় বলল, একেবারে সাধারণ একটা মানবশিশু। সেই শিশুটার সাথে তারা যদি একটা দিন কাটাতে পারে তা হলে এই বাচ্চারা বুঝতে পারবে তারা কত প্রতিভাবান! বুদ্ধিমত্তা কাকে বলে তার একটা বাস্তব ধারণা হবে!
ক্ৰানা ইতস্তত করে বলল, কিন্তু
কিন্তু কী?
কিন্তু সেরকম বাচ্চা তুমি কোথায় পাবে? আর যদি খুঁজে পেয়েও যাও তাদের বাবা মা কেন রাজি হবে শিম্পাঞ্জির পাশাপাশি নিজের বাচ্চাকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে!
প্রিন্সিপাল কেটি বলল, নিম্নাঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলোর মাঝে খোজাখুঁজি করলেই এরকম একটা বাচ্চা পাওয়া যাবে। আর বাচ্চাটাকে আনার সময় আমরা কি কখনো বলব যে তাকে আনছি শিম্পাঞ্জির পরের স্তর দেখানোর জন্যে? আমরা বলব তাকে আনছি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের জন্যে! বড় বড় কথা বলে বাবা-মাকে রাজি করিয়ে ফেলব।
ক্রানা মাথা নাড়ল, বলল, আইডিয়াটা খারাপ না। এই বাচ্চাদের তাদের সমবয়সী একটা সাধারণ বাচ্চা দেখা দরকার।
প্রিন্সিপাল কেটি বলল, তা হলে দেরি করে কাজ নেই। তুমি খোজাখুজি শুরু করে দাও। বেশি দরিদ্র মানুষকে বাচ্চা নেয়ার অনুমতি দেয়া হয় না–তাই হতদরিদ্রদের মাঝে না খুঁজে একটু নিম্নবিত্তদের মাঝে খোঁজ কর।
ক্রানা বলল, তুমি চিন্তা কোরো না, কেটি। আমি খুঁজে বের করে ফেলব।
১০.
খাবার টেবিলে তিনা বলল, আজকে খুব বিচিত্র একটা চিঠি এসেছে।