মনে আছে। নিহা মাথা নাড়ল, দেখে আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এই ছোট বাচ্চাটা একদিন বড় হয়ে পৃথিবীর সেরা প্রতিভাবান একজন মানুষ হবে! আমি বাচ্চাটাকে ছুঁয়ে দেখি?
রন হেসে বলল, অবশ্যই নিহা। এটা তোমার বাচ্চা-তুমি শুধু ছুঁয়ে দেখবে না তুমি ইচ্ছে করলে তাকে কোলে নেবে। তাকে বুকে চেপে ধরবে। তার গালে চুমু খাবে।
নিহা খুব সাবধানে শিশুটিকে একবার স্পর্শ করে। তারপর তাকে কোলে তুলে নেয়। বুকে চেপে ধরে শিশুটির গালে তার মুখ স্পর্শ করে। সে তার বুকের ভেতর এক বিচিত্র কম্পন অনুভব করে এটি তার সন্তান, নিজের সন্তান!
শিশুটিকে বুকে চেপে ধরে নিহা যখন রনের সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসছিল ঠিক তখন তারা দেখতে পায় করিডোর ধরে উগুরু এগিয়ে আসছে। উরু তার মুখের দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল ভেদ করে হাসি ফুটিয়ে বলল, জানতে পারলাম আজকে আপনারা আপনাদের সন্তানকে নিতে আসছেন। তাই আমি নিজেই দেখতে চলে এলাম।
রন হাসিমুখে বলল, আমি সেটা বুঝতে পারছি! আপনি আপনার ডিজাইন করা বাচ্চাটিকে দেখতে চাইবেন সেটা খুবই স্বাভাবিক।
হ্যাঁ। উগুরু মাথা নাড়ল। আমি এখন পর্যন্ত যত শিশু ডিজাইন করেছি তার মাঝে এই শিশুটি সবচেয়ে চমকপ্রদ। আটটি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য এর মাঝে বিকশিত করা হয়েছে। বর্তমানে যে মানদণ্ড দাঁড়া করা হয়েছে তার হিসেবে আপনার এই শিশুটি পুরো আশি পয়েন্টের একটি শিশু!
রন হাসতে হাসতে বলল, আমি আপনাদের এই পয়েন্টের হিসেব বুঝি না। ধরে নিচ্ছি আশি পয়েন্টের শিশু বলতে একজন প্রতিভাবান শিশু বোঝানো হয়।
উরু মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত আশি পয়েন্টের শিশু খুব বেশি ডিজাইন করা হয় নি। উগুরু তার পকেট থেকে একটা খাম বের করে রনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, এই যে এখানে আমার কোম্পানির সার্টিফিকেটের একটা কপি। মূল সার্টিফিকেট রয়েছে জাতীয় ডাটাবেসে যখন খুশি তখন আপনি সেটা ব্যবহার করতে পারবেন! এই সার্টিফিকেটের কারণে আপনার এই শিশুটির জীবনের অনেক কিছুই খুব সহজ হয়ে যাবার কথা।
নিহা মাথা নেড়ে বলল, অনেক ধন্যবাদ।
উগুরু গলা লম্বা করে নিহার কোলে ধরে রাখা শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছেন? আমাদের সিমুলেশন বাচ্চাটির যে চেহারা তৈরি করেছিল তার সাথে হুবহু মিলে গেছে?
সিমুলেশনে বাচ্চার চেহারা কেমন ছিল নিহার মনে নেই তবুও সে ভদ্রতা করে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। উগুরুর হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়েছে সেরকম ভঙ্গি করে বলল, ও আচ্ছা-সার্টিফিকেটের সাথে আমি একটা ক্রিস্টাল দিয়ে দিয়েছি।
কী ক্রিস্টাল?
আপনাদের বাচ্চার প্রোফাইল আছে এখানে। তার ক্রোমোজোমে আমরা যে বিশেষ জিনগুলো দিয়েছি সেগুলো বিকশিত করার জন্যে কী করতে হবে তার ঘুঁটিনাটি সব নির্দেশ দেয়া আছে।
নিহা ভুরু কুঁচকে বলল, সেগুলো নিজে থেকে বিকশিত হবে, না আমাদের কিছু করতে হবে?
অবশ্যই আপনাদের কিছু কাজ করতে হবে তা না হলে কেমন করে হবে! তার ভেতরে শিল্পী হবার জিন যাচ্ছে কিন্তু যদি সে ব্যাপারে আপনি তাকে উৎসাহ না দেন সে তো কখনো তার সেই প্রতিভাটাকে কাজে লাগাবে না!
ও আচ্ছা!
উগুরু আবার মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বলল, আপনার হাতে আপনি যে বাচ্চাটিকে ধরে রেখেছেন সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান বাচ্চার একজন। কিন্তু এই বাচ্চাটি তার সেই প্রতিভাকে ব্যবহার করবে কি করবে না সেটা কিন্তু নির্ভর করছে আপনাদের দুজনের ওপর!
আমাদের ওপর?
হ্যাঁ, তার কোন বয়সে কীভাবে উদ্দীপনা দিতে হবে তার সবকিছু ক্রিস্টালে বলে দেয়া আছে। কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।
রন মাথা নাড়ল, বলল, না। সমস্যা হবে না আমরা অনেক ইউনিট খরচ করে আমাদের সন্তানকে ডিজাইন করেছি। আমরা সেটি কিছুতেই বৃথা যেতে দেব না।
উগুরু তার দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল ভেদ করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, আমি মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকব আপনাদের সন্তানের সাফল্যের খবর শোনার জন্যে!
নিহা বলল, তার জন্যে আপনাকে মনে হয় অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
হ্যাঁ। আমি তার জন্যে অনেক দিনই অপেক্ষা করব। আমার শুধু তার নামটি জানতে হবে।
নিহা বলল, আমরা আমাদের ছেলের নাম রেখেছি নীল।
রন হেসে যোগ করল, নিহার সাথে মিল রেখে নীল।
চমৎকার। উরু বলল, আমি মিডিয়ার দিকে লক্ষ রাখব নীলের খবরের জন্যে। আমার সিমুলেশন আমাকে বলে দেবে কখন তার খবর মিডিয়াতে আসবে!
০৭.
উগুরুর দেয়া ক্রিস্টালে রাখা সিমুলেশন অনুযায়ী নীলের দাঁত ওঠার কথা পাঁচ মাসে সত্যি সত্যি তার নিচের মাঢ়ী থেকে ছোট দুটো দাঁত উঁকি দিল ঠিক যখন তার বয়স পাঁচ মাস। সিমুলেশন অনুযায়ী নীলের দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটার কথা এগার মাসে, সত্যি সত্যি এগার মাস দুই দিন বয়সে সে টলতে টলতে কয়েক পা হেঁটে ফেলল। সিমুলেশন থেকে নিহা আর রন জানতে পারল নীল দুই বছর এক মাস থেকেই কথা বলতে শুরু করবে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি সত্যি দেখা গেল নীল ঠিক দুই বছর এক মাস কয়েক দিন বয়স থেকে আধো আধো বুলিতে কথা বলতে শুরু করেছে। ঠিক একইভাবে দেখা গেল সিমুলেশনের সাথে মিল রেখে নীল দুই বছর তিন মাস বয়স থেকে মোটামুটি সত্যিকারের ছবি আঁকতে শুরু করল। তিন বছর বয়স থেকে নীল পড়তে শুরু করল এবং চার বছর বয়স থেকে সে গণিতের প্রাথমিক বিষয়গুলো চর্চা করতে শুরু করল।