নিহা লাজুক মুখে বলল, আমরা কি একসাথে অনেক কিছু চাইতে পারি না? একই সাথে সুন্দর চেহারা এবং প্রতিভাবান এবং মেধাবী!
অবশ্যই চাইতে পারেন। একটি শিশুর জীবনের নীলনকশা থাকে তার জিনে। ক্রোমোজোমগুলোর মাঝে সেগুলো লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আমরাও সেগুলো বের করার চেষ্টা করছি। কোন ক্রোমোজোমে কোন জিনটার মাঝে একটা শিশুর কোন বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে সেটা আমাদের চাইতে ভালো করে কেউ জানে না। আপনারা বলবেন, আমরা সেই জিনটা আপনাদের পছন্দমতো পাল্টে দেব।
নিহা মাথা নেড়ে বলল, চমৎকার!
উগুরু তার আঙুলের সাথে জুড়ে থাকা লেখার মডিউলটা স্পর্শ করে বলল, তা হলে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করি, এটি নিশ্চয়ই আপনাদের প্রথম সন্তান?
হ্যাঁ। রন বলল, আমরা মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সন্তান নেয়ার সরকারি অনুমতি পেয়েছি।
ছেলে না মেয়ে? কী চান আপনারা?
রন সোজা হয়ে বলল, ছেলে। অবশ্যই ছেলে। কথা শেষ করে সে নিহার দিকে তাকিয়ে বলল, তাই না নিহা?
নিহা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ আমরা প্রথম সন্তান হিসেবে একটি ছেলে চাই।
তার শারীরিক গঠনের ব্যাপারে আপনাদের নির্দিষ্ট কিছু চাওয়ার আছে?
নিহা বলল, হ্যাঁ। লম্বা আর সুগঠিত।
চুলের রঙ?
সোনালি।
চোখ?
নীল। অবশ্যই নীল। নিহা মাথা নেড়ে বলল, মেঘমুক্ত আকাশের মতো নীল।
গায়ের রঙ?
তামাটে। ফর্সা রঙ যখন রোদে পুড়ে একটু তামাটে হয় সেরকম।
উগুরু অন্যমনস্কভাবে তার দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলল, গত শতাব্দীর কিছু চলচ্চিত্র অভিনেতা, কিছু ক্রীড়াবিদের জিনোম আমাদের কাছে আছে। আমরা অ্যালবামগুলো দেখাচ্ছি। আপনারা তার মাঝে থেকে বেছে নিতে পারেন।
নিহা বড় বড় চোখ করে বলল, সত্যি?
সত্যি।
রন নিহার দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু আমাদের সন্তান কি দেখতে আমাদের মতো হওয়া উচিত না? চলচ্চিত্র অভিনেতার মতো কেন হবে?
নিহা হিহি করে হাসতে থাকে এবং তার মাঝে উগুরু বলে, আপনাদের সন্তান। আপনাদের মতোই হবে-আমরা শুধু সেটাকে বিন্যস্ত করে দেব! চুলের রঙ, চোখের রঙ এই সব। আমাদের সিমুলেশান প্যাকেজ আপনাদের দেখিয়ে দেবে সে দেখতে কেমন হবে! ছোট থাকতে কেমন হবে বড় হলে কেমন হবে!
নিহা বলল, আমি আমার শখের কথা বলতে পারি?
অবশ্যই। অবশ্যই বলতে পারেন।
আমি চাই আমার ছেলে দেখতে যেরকম সুদর্শন হবে ঠিক সেরকম তার ভেতর অনেক গুণ থাকবে। সে ছবি আঁকতে পারবে। গান গাইতে পারবে তার ভেতরে লেখার ক্ষমতা থাকবে। পৃথিবীর বর্তমান সময়টা হচ্ছে বিজ্ঞানের সময়-তাই আমি চাই তার ভেতরে যেন বিজ্ঞানের মেধা থাকে। সে যেন সত্যিকারের গণিতবিদ হয়। একই সঙ্গে আমি চাই সে যেন। হয় তেজস্বী আর সাহসী। তার ভেতরে যেন একটা সহজাত নেতৃত্বের ভাব থাকে।
রন হা হা করে হেসে বলল, সোজা কথায় তুমি চাও তোমার ছেলে হবে একজন মহাপুরুষ!
নিহা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, কেন? তাতে দোষের কী আছে? আমি কি চাইতে পারি যে আমার ছেলে একজন মহাপুরুষ হোক?
উগুরু বলল, অবশ্যই চাইতে পারেন। আগে সেটি ছিল মায়েদের স্বপ্ন-এখন সেটি আর স্বপ্ন নয় এখন সেটি আমাদের হাতের মুঠোয়।
নিহা উৎসুক চোখে বলল, তা হলে আমি কি সত্যি সত্যি এরকম একজন সন্তান পেতে পারি?
অবশ্যই পারেন। উগুরু মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, আমরা গত কয়েক শতাব্দীর পৃথিবীর সব বড় বড় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা, দার্শনিক, নেতা, নেত্রীর জিনোম সগ্রহ করেছি। তাদের ভেতরে ঠিক কোন জিনটি আলাদাভাবে তাদের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটিয়েছে সেটা আলাদা করেছি। সেই জিনটি বিকশিত করতে হলে আর অন্য কোন জিনের সহযোগিতার দরকার আমরা সেগুলোও বের করেছি। কাজেই আপনারা যেটা চাইবেন আমরা সেটা আপনাদের সন্তানের মাঝে দিয়ে দেব!
নিহা জ্বলজ্বলে চোখে বলল, সত্যি সত্যি সেটাই দিতে পারবেন?
অবশ্যই! উগুরু মাথা নেড়ে বলল আমাদের কাছে আইনস্টাইন থেকে শুরু করে নেলসন ম্যান্ডেলা, জ্যাক নিকলসন থেকে শুরু করে মাও জে ডং টনি মরিসন থেকে শুরু করে বিল গেটস সবার জিনোম আছে। উগরু হঠাৎ মাথা ঝুঁকিয়ে নিচু গলায় বলল, আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। আমরা হিটলারের জিনোমও সগ্রহ করেছি!
হিটলার? কেন? হিটলার কেন?
এমনিই। হতেও তো পারে কোনো একজন নিও নাৎসি কেউ তার সন্তানের ভেতর হিটলারের ছায়া দেখতে চাইবে! যাই হোক যেটা বলছিলাম আপনারা ঠিক কী চাইছেন বলে দেন আমরা আপনার সন্তানকে ডিজাইন করে দেব। সবচেয়ে বড় কথা আপনারা যে সন্তানটি পাবেন সে হবে সম্পূর্ণভাবে নীরোগ-তাকে কোনো রোগ-ব্যাধি আক্রমণ করবে না। তা ছাড়া
তা ছাড়া কী?
আমাদের কোম্পানি থেকে আমরা আপনাদের সার্টিফিকেট দেব।
সার্টিফিকেট?
হ্যাঁ উগুরু মাথা নেড়ে বলল, আপনি নিশ্চয়ই জানেন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এই জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমরা যদি একটি শিশু ডিজাইন করে তাকে সার্টিফিকেট দেই সেটা সব জায়গায় গ্রহণ করা হয়। আপনাদের সন্তান স্কুলে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পাবে। লেখাপড়ায় তাকে সবচেয়ে আগে নেয়া হবে-যখন সে তার জীবন শুরু করবে তখন তার ধারেকাছে কেউ থাকবে না। একজন সন্তানের জন্যে এর চাইতে বড়। বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না।