কম বয়সী একটা মেয়ে খুট করে দরজাটা খুলে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, এস, এস। তোমরা ভেতরে এস, আমরা তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছি।
মেয়ের মুখের হাসি এবং কথাটুকু মেপে মেপে বলা কিন্তু তারপরেও ভঙ্গিটাতে এক ধরনের আন্তরিকতা ছিল, দরজার অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রন এবং তার কম বয়সী স্ত্রী নিহা সেটা অনুভব করতে পারে। রন নিহার হাত ধরে ঘরের ভেতরে ঢুকে চারদিক একনজর দেখে বলল, বাহ! কী সুন্দর।
ঘরের ভেতরটুকু খুব সুন্দর করে সাজানো, কোয়ার্টজের জানালা দিয়ে অনেক দূরের পর্বতমালাকে দেখা যায়। ঘরের অর্ধস্বচ্ছ দেয়ালের ভেতর থেকে এক ধরনের কোমল আলো বের হয়ে ঘরটাকে মায়াময় করে রেখেছে। প্রশস্ত ঘরের মাঝামাঝি কালো গ্রানাইটের একটা টেবিল, টেবিলটাকে ঘিরে কয়েকটা আরামদায়ক চেয়ার। কম বয়সী মেয়েটি দুটো চেয়ার একটু টেনে সরিয়ে এনে রন এবং নিহাকে বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে বলল, তোমরা কী খাবে বল। আমাদের কাছে বিষুবীয় অঞ্চলের সতিকারের কফি আছে। তোমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি আল্পস পর্বতের ঢালে জন্মানো আঙুরের রস আছে। যদি স্নায়ু উত্তেজনক কোনো পানীয় চাও আমরা সেটাও দিতে পারি।
রন মাথা নেড়ে বলল, আমার কিছুই লাগবে না। আমাকে একটু পানি দিলেই হবে। এই শুকনো সময়টাতে একটু পরপরই কেমন যেন গলা শুকিয়ে যায়।
নিহা বলল, আমি বিষুবীয় এলাকার কফি খেতে পারি। এটা সত্যিকারের কফি তো?
কম বয়সী মেয়েটি বলল, হ্যাঁ এটা সত্যিকারের কফি। তুমি এক চুমুক খেলেই বুঝতে পারবে।
নিহা হাসিমুখে বলল, চমৎকার!
তোমার কফিতে আর কিছু দেব? ভালো ক্রিম কিংবা কোনো ধরনের সিরাপ। সাথে আরো কিছু খেতে চাও?
নিহা হেসে বলল, না। আর কিছু লাগবে না। তোমার কথা শুনে মনে হতে পারে আমরা বুঝি নিম্নাঞ্চলের বুভুক্ষু মানুষ-তোমাদের এখানে কিছু খেতে এসেছি!
কম বয়সী মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠল যেন নিহা খুব মজার একটা কথা বলেছে। কথাটি আসলে হেসে ওঠার মতো কথা নয়। নিম্নাঞ্চলে অনগ্রসর মানুষেরা থাকে। এ বছর সেখানে খাবারের ঘাটতি হয়েছে। অনেক মানুষ সেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে-ব্যাপারটিতে কৌতুকের কিছু নেই।
রন বলল, আমরা কি তা হলে কাজের কথা শুরু করে দেব?
কম বয়সী মেয়েটি বলল, অবশ্যই। অবশ্যই কাজের কথা শুরু করে দেব। তোমরা এত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তোমাদের এক মিনিট সময় অপচয় করা রীতিমতো দওযোগ্য অপরাধ।
নিহা রনের দিকে তাকিয়ে একটু আদুরে গলায় বলল, রন। তুমি কিন্তু আমাকে তাড়া দিতে পারবে না। আমি কিন্তু আজকে সময় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি।
রন মুখে হাসি টেনে বলল, আমি তাড়া দেব না নিহা। একটা সন্তান বেছে নেয়া চাট্টিখানি কথা নয়-তুমি তোমার সময় নাও। তোমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে সন্তানটি ডিজাইন করে নাও।
কম বয়সী মেয়েটি বলল, আমি তা হলে আমাদের চিফ ডিজাইনারকে ডেকে আনছি। মেয়েটি গলা নামিয়ে বলল, আপনারা যেহেতু আমাদের কাছে এসেছেন আমি। অনুমান করছি আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের চিফ ডিজাইনার উগুরুর নাম শুনেই এসেছেন?
নিহা জোরে জোরে মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। তার নাম শুনেছি। নেটওয়ার্কে তার কাজের বর্ণনা পড়েছি। কিছু অসাধারণ কাজ আছে তার।
কম বয়সী মেয়েটি বলল, উগুরু যে বাচ্চাগুলো ডিজাইন করেছেন আমি লিখে দিতে পারি আজ থেকে বিশ বছর পরে তারা এই পৃথিবীটার দায়িত্ব নেবে। আর্টস বলেন, বিজ্ঞান বলেন, প্রযুক্তি বলেন, স্পোর্টস বলেন সব জায়গায় তারা হবে পৃথিবীর সেরা।
রন মাথা নাড়ল, বলল, সে জন্যেই আমরা এখানে এসেছি।
কম বয়সী মেয়েটি বলল, আপনারা বসুন, আমি উগুরুকে ডেকে আনছি।
উওরু নাম শুনে নিহার চোখের সামনে যে চেহারভেসে উঠেছিল মানুষটি দেখতে ঠিক সেরকম। মাথায় এলোমেলো হলদে চুল, মুখে দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল। কোটরাগত জ্বলজ্বলে দুটো চোখ। অত্যন্ত দামি পোশাক অত্যন্ত অগোছালোভাবে পরে থাকা এবং মুখে এক ধরনের নিরাসক্ত ঔদাসীন্য যেটাকে ঔদ্ধত্য বলে ভুল হতে পারে।
উগুরু রন এবং নিহার সামনে বসে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আমাদের কোম্পানিতে আপনাদের অভিবাদন
রন বলল, আমাদের সময় দেয়ার জন্যে আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
উগুরু বলল, আমি যেটুকু বুঝতে পারছি আপনি নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত মানুষ। প্রতিরক্ষা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সময় বলতে গেলে কিছুই থাকে না।
রন বলল, আমারও নেই। কিন্তু আমার স্ত্রীর জন্যে আমি আজকে সময় বের করে এনেছি।
চমৎকার। উরু একটু ঝুঁকে মুখে হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করে, কোনো একটি অজ্ঞাত কারণে তার মুখে সেটি পুরোপুরি ফুটে ওঠে না। সেই অবস্থাতেই উগুরু বলল, আমি নিশ্চিত আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের কোম্পানির কাজ প্রথম শ্রেণীর কাজ কিন্তু সেটি যে কোনো হিসেবে অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ।
রন মাথা নাড়ল, বলল, আমি জানি।
এর আগেও অনেকে আমার কাছে এসেছেন কিন্তু খরচের পরিমাণটা জানার পর পিছিয়ে গেছেন।
রনের মুখে সামরিক বাহিনীর মানুষের উপযোগী এক ধরনের কাঠিন্য ফুটে ওঠে, সে মাথা নেড়ে বলল, আমি পিছিয়ে যাব না।
চমৎকার! উগুরু আবার একটু হাসার চেষ্টা করল এবং তার হাসিটি এবারে বেশ খানিকটা সাফল্যের মুখ দেখল। উরু মুখের দাড়িটি অন্যমনস্কভাবে চুলকাতে চুলকাতে বলল, আপনারা কী ধরনের সন্তান চাইছেন? সফল শোবিজ তারকা? স্পোর্টসম্যান? নাকি অন্য কিছু?