১, ১, ২, ৩
প্রথম এবং চতুর্থ সংখ্যার যোগফল ৪।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফল ৩।
না মাথাটা তো ঠিকই আছে। মাথায় তেমন সমস্যা হয়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে চোখও সেরে গেছে। চোখ থেকে পানি পড়া বন্ধ হয়েছে। যুবকটি হঠাৎ বলে বসল,
ফিবোনাক্কি রাশিমালার বড় বৈশিষ্ট্য হল আপনি যে নিয়মের কথা বলছেন সে নিয়মের কিছু কিছু ব্যতিক্রম আছে। এই ব্যতিক্রমগুলিই হল রাশিমালার বৈশিষ্ট্য…
তুমি ফিবোনাক্কি রাশিমালা জান?
হ্যাঁ জানি, তবে এই রাশিমালা নিয়ে আমি তেমন উৎসাহী নই। আমার উৎসাহ অন্য জায়গায়।
কোথায়?
আপনি নিজে যে রাশিমালা তৈরি করেছেন সেই রাশিমালায়…
আমি তো কোনো রাশিমালা তৈরি করিনি…
করতে যাচ্ছেন। আপনার রাশিমালার প্রথম সংখ্যাটি শূন্য। দ্বিতীয়টি শূন্য শূন্য…
মনসুর সাহেব রাগী গলায় বললেন আমি কোনো রাশিমালা তৈরি করিনি। আমি করছি ফিবোনাক্কি নিয়ে…
ফিবোনাক্কিকে আপনি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন। আপনার মূল চিন্তা নতুন রাশিমালা এবং এই রাশিমালার নিয়ম-কানুন…
মনসুর সাহেব অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বললেন—তুমি নিতান্তই মূখের মতো কথা বলছ। প্রথমত শূন্য কোনো রাশিমালার সংখ্যা হতে পারে না। শূন্য হচ্ছে একটা প্রতীক, যে প্ৰতীক আমরা ব্যবহার করি কোনো সংখ্যার অবস্থান নির্দেশের জন্যে। যেমন ৮ একটি সংখ্যা। এর অবস্থান এককের ঘরে। এই আটকে আমরা দশকের ঘরে নিয়ে যেতে চাই। আটের ডানে একটি শূন্য বসাই। আট হয়ে গেল আশি। তার অবস্থানের পরিবর্তন হল।
আপনার কথা মেনে নিচ্ছি—তারপরেও শুনুন, শূন্য যদি শুধু কোনো প্রতীকই হয় তাহলে কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে আপনি গুণফল শূন্য লিখতে পারেন না। আপনি লিখতে পারেন না–
৩ x ০ = ০ বা
৪ X ০ = ০
একই সঙ্গে আপনি বলছেন শূন্য একটি প্রতীক, আবার সঙ্গে সঙ্গে শূন্যকে গাণিতিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগাচ্ছেন, তা কি করে হয়?
মনসুর সাহেব চুপ করে গেলেন, অকাট্য যুক্তি। এবং ভালো যুক্তি। যুবকটি শব্দ করে হাসল।
মনসুর সাহেব বললেন, তোমার যুক্তি মেনে নিলাম। ধরলাম, শূন্য একটি সংখ্যা হতে পারে। কিন্তু শূন্য/শূন্য তো সংখ্যা হতে পারে না।
কেন পারবে না? হতে পারে। এই পৃথিবীর একজন মহান আঙ্কিক শূন্য/শূন্য অনেকবার ব্যবহার করেছেন। একে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন।
কার কথা বলছ?
স্যার আইজাক নিউটন। তিনি ক্যালকুলাস বের করেন।
সেখানে শূন্য/শূন্য কোথায়?
আছে। তো dy/dx শূন্য / শূন্য ছাড়া আর কিছুই না। dy হচ্ছে y-এর অতিক্ষুদ্র অংশ। প্রায় শূন্য। তেমনি dy হল x-এর অতি ক্ষুদ্র অংশ, প্রায় শূন্য। অর্থাৎ তিনি কাজ করেছেন প্রায় শূন্য/প্রায় শূন্য নিয়ে। আপনি কাজ করছেন শূন্য/শূন্য নিয়ে। এই একটি কারণেই আমার আপনার কাছে আসা।
তুমি কে? আমার কোনো নাম নেই এবং আমি আমার অবস্থান আপনাকে এই মুহূর্তে ব্যাখ্যাও করতে পারছি না…
কোত্থেকে এসেছ? আমি এসেছি শূন্য থেকে।
শূন্য থেকে?
জ্বি স্যার, শূন্য থেকে। শূন্য সংক্রান্ত রাশিমালার প্রতি এ কারণেই আমার এত আগ্রহ।
তোমার নাম কি?
আপনি বারবার নামের মধ্যে ফিরে যাচ্ছেন। যে এসেছে শূন্য থেকে তার নাম থাকতে পারে না। তারপরেও কথাবার্তা চালানোর সুবিধার জন্যে আপনার যদি একান্তই নামের প্রয়োজন হয় আপনি আমাকে একটা নাম দিতে পারেন। আপনার পছন্দসই কোনো নাম…আপনি আমাকে ফিবোনাক্কি ডাকতে পারেন।
ফিবোনাক্কি?
জি। তবে যদি এই নামটা কঠিন মনে হয় তাহলে আরো সহজ কোনো নামে ডাকতে পারেন স্যার, নিউটন নামটা কি আপনার কাছে সহজ মনে হয়?
নিউটন?
হ্যাঁ নিউটন। বিদেশী নাম যদিও তারপরেও নামটার এক ধরনের সহজ ভাব আছে। আপনি দেশী নামও রাখতে পারেন–রহিম, করিম, যদু, মধু…স্যার, আমরা এসে পড়েছি।
মনসুর সাহেব পাঞ্জাবির পকেটে গেটের চাবির জন্য হাত ঢুকালেন। চাবি নেই। বাঁধ থেকে যখন তিনি ছিটকে নিচে পড়ে গেছেন। তখন চাবিও নিশ্চয়ই পড়ে গেছে। গুদামঘরের গেটে যে বিশাল তালা ঝুলছে সেই তালা খোলা তাঁর কর্ম নয়।
স্যার কি চাবি খুঁজছেন?
হুঁ।
এই নিন চাবি।
মনসুর সাহেব যন্ত্রের মতো চাবি হাতে নিলেন। গেটের তালা খুলতে খুলতে বললেন, চাবি কোথায় পেলে?
আপনি যখন বাঁধের নিচে পড়ে গেলেন তখন পকেটের চাবিও ছিটকে পড়ে গেল। কাজে লাগবে বলে চাবি তুলে এনেছি।
তোমাকে ধন্যবাদ।
এক বোতল প্যালিকেন কালি ছিল, তা আনতে পারিনি। কালির বোতলটা ভেঙে গেছে।
ও।
আপনার সঙ্গে কাগজের যে প্যাকেট ছিল তাও আনতে পারিনি। ইচ্ছা করলে আনতে পারতাম কিন্তু কাদায়-পানিতে মাখামাখি হয়ে কাগজের যে অবস্থা—আনাটা অর্থহীন হত।
ও।
গেটের তালা খোলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু গেট সরানো যাচ্ছে না। জাম হয়ে আছে। ছেলেটি তাঁকে সাহায্য করল। দুজনে ঠেলে ঠেলে গেট সরালেন। ভালো পরিশ্রম হয়েছে। তিনি হাঁপাচ্ছেন। ছেলেটাও হাঁপাচ্ছে।
স্যার চলুন, ঘরে যাই। বাইরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা লাগাবেন। আপনার ঘরে কি বাড়তি কাপড় আছে? আমার কাপড় বদলাতে হবে।
তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। তুমি মন দিয়ে আমার কথা শোন।
আপনি বরং আমাকে একটা নাম দিয়ে দিন। নাম দিলে আপনার সুবিধা হবে। ফিবোনাক্কি ডাকেন। এই নাম আমার পছন্দ।
শোন ফিবোনাক্কি, তোমাকে আমি একটা গল্প বলব। গল্পটা তুমি খুব মন। দিয়ে শুনবে।