আমি এখন তোমাদের রহস্য জানি। আমিতো সমাধান করেছি।
স্যার আমি জানি। এই জন্যেইতো আপনার কাজ পুড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে।
আমাতেই তো সব শেষ হচ্ছে না। আবারো একজন আসবেন।
আমরা লক্ষ রাখি। কিছুই আমাদের লক্ষের বাইরে নয়।
মনসুর সাহেবের ঘুম পাচ্ছে। চোখ আর মেলে রাখতে পারলেন না। মনে হচ্ছে। এটাই শেষ ঘুম। ফিবোনাক্কি বলল-স্যার শুনুন। তিনি বললেন, শুনছি।
আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার। আমি যা করেছি আমার জগতের দিকে তাকিয়ে করেছি। আপনিও নিশ্চয়ই আপনার পৃথিবী, আপনার প্রিয় জগৎ রক্ষার জন্যে যা করণীয় তা করবেন। করবেন না স্যার?
হ্যাঁ করব।
স্যার আমি কি কিছু করতে পারি আপনার জন্যে।
আমার সময় শেষ—এই শেষ সময়ে তুমি কি করবে?
আপনার মস্তিষ্কে অনেক সুখ স্মৃতি আছে। তার একটি দেখতে দেখতে যেন আপনার জীবনের ইতি হয় সেই ব্যবস্থা করব।
তার প্রয়োজন নেই ফিবোনাক্কি।
আপনার জন্যে কিছু একটা করতে ইচ্ছা হচ্ছে স্যার। আমাকে দয়া করে অনুমতি দিন আপনার মস্তিষ্কের অতি গোপন একটা জায়গা থেকে মিষ্টি একটা স্মৃতি আমি বের করে আনি—আপনার ভালো লাগবে। আপনার খুব ভালো লাগবে।…
মনসুর সাহেব কিছু বলার আগেই ঝমঝুম শব্দ শুনতে পেলেন। বৃষ্টির শব্দ। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ছে। তিনি দেখলেন তিনি তাদের গ্রামের বাড়িতে শোবার ঘরে আধাশোয়া হয়ে আছেন। হাতে একটা বই। গভীর রাত। পাশের টেবিলে হারিকেন জ্বলছে। হারিকেনের ক্ষীণ আলোয় তিনি বৃষ্টির রাতে বই পড়ছেন দরজা ঠেলে কে ঢুকছে? আরে রূপা না! হাঁ রূপা। তাঁর কিশোরী বধূ। আহা কতদিন পর দেখলেন রূপাকে। এত সুন্দর মেয়ে। এত মিষ্টি চেহারা। রূপা বলল—এই বৃষ্টি হচ্ছে! বৃষ্টিতে ভিজবে?
না না-পাগল হয়েছ দুপুর রাতে বৃষ্টিতে ভিজব কি? তোমার কি সব পাগলামি।
রূপা মন খারাপ করে বসে আছে। তার চোখ ভিজে উঠেছে। ফিবোনাক্কি এই স্মৃতি কেন দেখাল। এই স্মৃতি তাঁর জীবনের দুঃখময় স্মৃতির একটি। তিনি সে রাতে স্ত্রীর সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে যাননি। এইসব ছেলেমানুষি তার চরিত্রে ছিল না।
তিনি দেখছেন অভিমানে রূপার চোখ ভিজিয়ে উঠতে শুরু করেছে। তখন তিনি বই ফেলে দিয়ে বললেন—চল যাই ভিজি। রূপা আনন্দে হেসে ফেলল।
ঘটনা এ রকম ঘটে নি। তিনি রূপাকে অগ্রাহ্য করে সে রাতে বই পড়েছেন—এখানে ঘটনা বদলে যাচ্ছে। ফিবোনাক্কি তাঁর স্মৃতি পাল্টে দিচ্ছে
তিনি দেখছেন–রূপাকে নিয়ে উঠোনে নেমে গেছেন। ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রূপা হাসছে খিলখিল করে…আহ কী সুন্দর স্মৃতিকী মধুর স্মৃতি। ফিবোনাক্কি চমক্কার একটি স্মৃতি তৈরি করে তাঁকে উপহার দিচ্ছে। তিনি গাঢ় স্বরে বললেন—ধন্যবাদ ফিবোনাক্কি। ধন্যবাদ।
রূপার হাত ধরে তিনি বৃষ্টিতে ভিজছেন। এক একবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই আলোয় দেখছেন জলভেজা আশ্চর্য মায়াবী এক মুখ…তিনি আবারো বললেন—ধন্যবাদ ফিবোনাক্কি।