পারছি।
অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। আপনি আমাদের অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
আপনারা কারা?
আপনি এবং আমরা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দুই প্রান্তের অধিবাসী। আপনার বাসস্থান যাকে আপনি পৃথিবী বলেন তার দূরত্ব আমাদের এখান থেকে প্রায় এক কোটি আলোকবর্ষ।
আমি এখনে কী করে এলাম?
এই প্রশ্নের জবাব আমাদের জানা নেই। বিজ্ঞানীরা একটি থিওরি দিয়েছে—সেই থিওরি আপনি চাইলে আপনাকে বলতে পারি।
আমি থিওরি বুঝব না—আমি বলতে গেলে একজন মূৰ্খ মানুষ। বি.এ পাস করেছি থার্ড ডিভিশনে। তাও প্রথমবারে পাস করতে পারিনি, ইংরেজিতে রেফার্ড ছিল।
এই থিওরি যে কেউ বুঝতে পারবে। আপনি পারবেন। বিজ্ঞানীরা মাঝে মাঝে নিজেদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কিছু থিওরি তৈরি করেন। এটিও সে জাতের থিওরি। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রকৃতির অতি সুশৃঙ্খল নিয়মেও মাঝে মধ্যে ভুল হয়ে যায়। ভুল করে প্রকৃতি। আপনার ক্ষেত্রেও এরকম ভুল হয়েছে। যার জন্যে অকল্পনীয় দূরত্ব থেকে আপনি উপস্থিত হয়েছেন এখানে। তবে প্ৰকতি অতি দ্রুত তার ভুল ঠিক করে। আপনার ক্ষেত্রেও তাই করবে বলে আমাদের ধারণা। আপনি যেখান থেকে এসেছেন আবার সেখানে ফিরে যাবেন। প্রকৃতি এই ব্যবস্থা করবে। আমাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। আমাদের জ্ঞানবিজ্ঞান অতি উন্নত হওয়া সত্ত্বেও আমরা আপনাকে ফেরত পাঠাতে পারছি না।
যদি প্রকৃতি তার ভুল ঠিক করতে না পারে তাহলে কী হবে?
আপনাকে এখানেই থেকে যেতে হবে।
স্যার, আমার কোন অসুবিধা নেই। দেশ-বিদেশ দেখার আমার খুব শখ।
আপনার এই শখ আমরা মেটানোর চেষ্টা করছি। পর্দায় আপনি আমাদের এই গ্রহ দেখতে পাবেন। তার প্রতিটি সুন্দর জায়গা আপনাকে দেখানো হবে। তবে যে কোন মুহুর্তে আপনি হয়ত আপনার জায়গায় ফিরে যাবেন। দয়া করে আমাদের কথা মনে রাখবেন। আপনার দেশের বিজ্ঞানীদের বলবেন আমাদের কথা।
আমি বললে লাভ হবে না, স্যার। কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। তাছাড়া আমি কোন বিজ্ঞানীকে চিনি না। একজনকে শুধু চিনি–আব্দুস সোবহান খিলগাঁও হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক। বোটানিতে এম.এসসি. ফার্স্ট ক্লাস।
শুনুন মতিন সাহেব, আপনার এই গ্রহে আগমন একটি বিরাট ঘটনা। এই উপলক্ষে সমগ্র গ্রহে একদিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। এই গ্রহের প্রতিটি প্রাণী বসে আছে ত্রিমাত্রিক টিভি সেটের সামনে। এই মুহূর্তে সবাই দেখছে আপনাকে। এই গ্রহে আপনার আগমন চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এই গ্রহের সবচে বড় সড়কটির নাম রাখা হচ্ছে আপনার নামে—সড়কের দুমাথায় থাকবে আপনার দুটি ইরিডিয়ামের মূর্তি।
আমাকে লজ্জা দেবেন না, স্যার।
লজ্জা দেয়ার কোন ব্যাপার নেই। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার এই গ্রহে আগমন যে কত বড় ঘটনা তা বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছায়াপথে একই ধরনের দুটি প্রাণের উদ্ভব হয়েছে এটা যে কত বড় ঘটনা আপনি তা অনুমান করতে পারবেন না।
একই ধরনের প্রাণী না স্যার আঙুলে বেশকম আছে।
এই তফাৎ সামান্য অতি সামান্য।
একটা ছোট কথা জিজ্ঞেস করি, স্যার?
করুন।
আপনি বলেছেন প্রকৃতি ভুল করে। প্রকৃতির কি ভুল করা উচিত?
না উচিত নয়। হয়ত প্রকৃতি কোন ভুল করেনি। সে ইচ্ছা করেই আপনাকে এখানে এনেছে। অন্য কোথাও আপনাকে নিতে পারত। তা নেয়নি। এমন এক গ্রহে এনেছে যার তাপমাত্রা আপনার পৃথিবীর মত। যার অক্সিজেনের পরিমাণও আপনার গ্রহের অক্সিজেনের কাছাকাছি।
মতিন সাহেব পর্দা থেকে দৃষ্টি কিছুক্ষণের জন্যে ফিরিয়ে নিলেনতাকালেন চারদিকে। আশ্চর্য! কেউ নেই। শুধু বাদাম খাওয়া বাচ্চাটি বসে আছে। যে লোকগুলি যন্ত্র ঠিক করছিল তারাও নেই। চারদিকে সুনসান নীরবতা। মতিন সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, স্যার, ওরা কোথায়?
সবাইকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
কেন?
কারণ আমাদের বিজ্ঞানীদের ধারণা আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আপনার চারপাশের চৌম্বকক্ষেত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। বায়ুতে আয়নের পরিমাণ বাড়ছে।
ছোট বাচ্চাটিকে এখানে বসিয়ে রেখেছেন কেন?
আপনাকে যখন এখানে পাঠানো হয় তখন ছোট বাচ্চাটি আপনার পাশে ছিল। অবিকল আগের অবস্থা বজায় রাখার জন্য বাচ্চাটিকে আপনার পাশে রাখা হয়েছে।
এর কোন ক্ষতি হবে না তো?
সম্ভবত না। আপনাকে আমাদের উচ্চতর বিজ্ঞানের কিছু কথা শিখিয়ে দিতে পারলে ভাল হত। আপনি আপনার পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের তা শেখাতে পারতেন। ক্যানসারের চিকিৎসা কি শিখিয়ে দেব?
দরকার নেই, স্যার। ওরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না।
তারচেয়েও বড় কথা আপনি কিছু মনে রাখতে পারবেন না।
সত্যি কথা বলেছেন। আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বল।
চৌম্বকক্ষেত্রে বড় রকমের পরিবর্তন হয়েছে। আপনি সম্ভবত চলে যাচ্ছেন। পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকুন। দেখুন, আমাদের গ্ৰহ দেখুন—শেষবারের মত দেখুন।
মতিন সাহেব পর্দার দিকে তাকিয়ে রইলেন। মুগ্ধ বিস্ময়ে এই বিচিত্র গ্রহ দেখলেনদেখলেন তার ভূগর্ভস্থ বিশাল নগরী, দেখলেন তুষারঢাকা পর্বতমালা, দেখলেন বনভূমি, দেখলেন এই গ্রহের প্রাণদায়িনী সূর্য যার আলো কিঞ্চিৎ নীলাভ।
তাকে শুনানো হল তাদের শ্ৰেষ্ঠতম সঙ্গীত। দেখানো হল মহান সব শিল্পকর্ম। আত্ কী অপূর্ব অভিজ্ঞতা! মতিন সাহেব ইরিডিয়ামের তৈরি তাঁর দুটি মূৰ্তিও দেখলেন। কী বিশাল মূর্তি। আগামী লক্ষ বছর এই মূর্তির কিছু হবে না। এই গ্রহের অদ্ভুত সুন্দর মানুষগুলি তার মূর্তির দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকাবে।