তিনি হড়বড় করে বলেন, কই অস্থির নাতো।
রাতে মনে হয় তোমার ভাল ঘুম হয় না। প্রায়ই শুনি তুমি বিড়বিড় করছ।
আমার ঘুমের কোন সমস্যা নেই।
একজন ডাক্তার কি দেখাবে?
খামাখা কেন ডাক্তার দেখাব।
তাহলে চল কিছুদিন বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
চল যাই। কোথায় যেতে চাও?
মালয়েশিয়া যাবে? শুনেছি খুব সুন্দর জায়গা।
যেতে পারি।
আনিসুর রহমান পনেরো দিনের জন্যে সবাইকে নিয়ে মালয়েশিয়া গেলেন। খাতাটা সঙ্গে নিলেন না। পনেরো দিন আনন্দ করেই কাটালেন। দেশে ফিরে আবার সেই আগের রুটিন। তবে অংক করার সময় আরেকটু বাড়ালেন। এখন তিনি অংক করেন পঁয়তাল্লিশ মিনিট। বাসায় আগের মতই এগারোটায় ফেরেন। রোগী দেখেন পনেরো মিনিট কম।
ছয় মাসের ভেতর আনিসুর রহমানের খাতার সংখ্যা হল দশটা। অংক করার সময়ও বাড়ল। তিনি এখন ঘড়ি ধরে এক ঘণ্টা সময় দেন অংকের পেছনে। তাঁর বড় ভাল লাগে।
এক ডিসেম্বর মাসের কথা। জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। কোল্ড ওয়েভ শুরু হয়েছে। নেমেছে কুয়াশা। আনিসুর রহমান চেম্বারে বসে আছেন। রাত আটটা। দুজন রোগী ছিল তাদের দেখা শেষ হয়েছে। চেম্বারে আর কেউ নেই। আনিসুর রহমান তাঁর এ্যাসিসটেন্টকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নিজের মনে খুব আনন্দ। তিন ঘণ্টা টানা সময় পাওয়া গেছে। মন লাগিয়ে অংক করা যাবে। তিনি নতুন একটা খাতা বের করলেন। আর তখন তার মাথার ভেতর কেউ একজন কথা বলে উঠল। মেয়ের গলা। অতি মিষ্টি গলা তবে ভাঙা ভাঙা।
আনিসুর রহমান ভাল আছেন?
কে কে কে? আমরা আপনার নিবেদন দেখে খুশি হয়েছি।
কে? আপনারা কে?
এখন থেকে আমরা আপনার সঙ্গে সঙ্গে থাকব। আপনাকে অংক করতে সাহায্য করব।
আপনারা কে?
আমরা কে সেটা জরুরি না। যে অংকটা আপনি করছেন সেটা জরুরি।
আনিসুর রহমান হতাশ গলায় বললেন, আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
আজেবাজে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না। অংকটা করুন।
এই অংক কী কখনো শেষ হবে?
না।
যে অংক শেষ হবে না সেই অংক করে লাভ কী?
শেষ না হলেও একটা সিরিজ বের হয়ে আসবে। আমাদের প্রয়োজন সিরিজ। সিরিজও শেষ না।
সিরিজ কী?
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ একটা সিরিজ যেটা চলতে থাকে, আবার ২৪ ৬ ৮ ১০ আরেকটা সিরিজ। কোন সিরিজই শেষ হয় না।
একই অংক কি আপনারা অনেককে দিয়ে করাচ্ছেন? আমি যতদূর জানি হারুন অর রশিদও এই অংক করছে।
যেই মুহূর্তে আপনি শুরু করেছেন আমরা হারুনকে সরিয়ে দিয়েছি। তাকে অন্য কাজ দিয়েছি। তাকে সিরিজ করতে দিয়েছি।
হারুনের সঙ্গে কি যোগাযোগ করা যায়?
অবশ্যই যায় সে আমাদের সঙ্গেই আছে। একদিন আমরা আপনাকেও আমাদের মধ্যে নিয়ে নেব।
কবে?
সেটাতো এখননা বলতে পারছি না। হারুনের সঙ্গে কথা বলবেন।
হ্যাঁ। আরেকদিন কথা বলিয়ে দেব। কেমন?
আচ্ছা!
অংক করুন।
আচ্ছা।
ছেলেটা মারা গেছে
হারুন অর রশিদের খোঁজ পাওয়া গেছে। তার বাবা এসে খবর দিয়ে গেছেন। ছেলেটা মারা গেছে অক্টোবরের ১১ তারিখ। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা হয়েছিল। হাসপাতালে নিতে নিতেই সে মারা যায়। মৃত্যুর সময় তার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছিল।
ছেলের বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলল, স্যার আমি আপনার কাছে এসেছি, কারণ ছেলেটা প্রায়ই আপনার কথা বলত।
লোকটার হয়ত আরো অনেক কথা বলার ছিল। আনিসুর রহমান তাকে সুযোগ দিলেন না। মানুষের সঙ্গে কথা বলে তিনি এখন সময় নষ্ট করেন না। তিনি কাজ করে যান। কাজটা প্রয়োজন। অন্য সব কিছুই অপ্রয়োজনীয়।