মনে হয় না। মাংস রান্না করতে বলব?
দরকার নেই। তুই একটা কাজ করতে মা, এই অংকটাই কম্পিউটারে করে দেখ আরো বেশি ডিজিট পাওয়া যায় কী না।
কেন বাবা?
এম্নি মা ।No particular reason.
রাতে খেতে গিয়ে
রাতে খেতে গিয়ে আনিসুর রহমান খান চমকৃত হলেন। মাছ ছাড়াও দু ধরনের মাংস আছে। মুরগির ঝাল ফ্রাই, গরুর কলিজা ভুনা। একজন ডাক্তার হিসেবে কলিজা ভুনার মত হাই কোলেস্টেরল ডায়েট খাওয়া একেবারেই উচিত না; কিন্তু যাবতীয় হাই কোলেস্টেরল ডায়েট তার অতি পছন্দ।
রুমানা বললেন, তুমি জেনিফারকে দিয়ে পাই এর ভ্যালু বের করাচ্ছ কেন?
আনিসুর রহমান বললেন, বাইশকে সাত দিয়ে ভাগ দিতে বলেছি।
এটা হল পাই। পরিধি ডিভাইডেড বাই ব্যাস। পরিধি হচ্ছে 2πr আর ব্যাস হচ্ছে 2r ভাগ করলে থাকে π.
তুমি এতসব জাননা কীভাবে?
রুমানা বললেন, তুমি প্রায়ই ভুলে যাও যে আমি ফিজিক্স পড়েছি।
আনিসুর রহমান বললেন, এটাতো ফিজিক্স না এটা হল ম্যাথ।
রুমানা বললেন, চুপ করে খাও তো। কোনটা ফিজিক্স কোনটা ম্যাথ তা নিয়ে তোমার গবেষণা করতে হবে না।
আনিসুর রহমান বললেন, পাই বস্তুটার মান কত?
মান হল ৩.১৪।
তা হবে কেন এটা তো পয়েন্ট ওয়ান ফোরে শেষ হয় না, চলতেই থাকে।
চলতে থাকলেই সব সংখ্যা নিতে হবে? দরকারটা কী?
আনিসুর রহমান বললেন, তা ঠিক কোন দরকার নেই। পণ্ডশ্রম। একেবারেই পণ্ডশ্ৰম।
রুমানা বললেন, তুমি ডাক্তার মানুষ তুমি পাই নিয়ে হৈ চৈ করছ কেন?
আনিসুর রহমান বললেন, হৈ চৈ করছি কোথায়? হৈ চৈ করছি না।
রান্না কেমন হয়েছে?
অসাধারণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যা হয় তাই হয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কলিজা ভুনা আজ রাতে খেলাম।
ইলিশ মাছের ডিমের চেয়েও ভাল হয়েছে?
এইতো এক সমস্যায় ফেললে শ্যাম রাখি না রাধা রাখি।
রুমানা বললেন, তুমি ডাক্তার মানুষ। ডাক্তারি নিয়ে থাকে। পাই এর মান, বাংলা সাহিত্য এই সবে যাবার দরকার নেই। শ্যাম রাখি না রাধা রাখি বলে কিছু নেই। বাক্যটা হল শ্যাম রাখি না কুল রাখি।
সরি।
সরি বলারও কিছু নেই। শুধু শুধু সরি বলছ কেন?
আনিসুর রহমান বললেন, সরি বলার জন্যে সরি।
রাতটা তার খুব ভাল কাটল। তিনজন মিলে ফ্রাইডে দ্যা থার্টিন ছবিটা দেখলেন। ছবি দেখে ভীত হবার আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করে রাতে ঘুমুতে গেলেন। ঘুম খুব ভাল হল না। সারাক্ষণই স্বপ্ন দেখলেন তিনি বাইশকে কখনো সাত দিয়ে ভাগ দিচ্ছেন, কখনো তিন দিয়ে ভাগ দিচ্ছেন আবার কখনো বা পাঁচ দিয়ে দিচ্ছেন। রাতে কয়েকবার তার ঘুম ভাঙল। এ রকম কখনো হয় না। তিনি ঘুমের ট্যাবলেট ছাড়াই এক ঘুমে রাত পার করার মানুষ।
পরের তিন সপ্তাহ
পরের তিন সপ্তাহ আনিসুর রহমানের অতি ব্যস্ততায় কাটল। তিনি ব্যাঙ্গালোরে একটি সেমিনারে টেন্ড করতে গেলেন। ফিরে এসে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ফাইন্যাল পরীক্ষার একটারনাল একজামিনার হিসেবে রাজশাহী গেলেন। রুমানার এক খালাতো বোনের হুট করে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চিটাগাং গেলেন। তবে এর ফাঁকে ফঁাকে পাই বিষয়ক কিছু তথ্য সংগ্রহ করলেন। যেমন
১. এই সংখ্যাটির মান এখনো নির্ণয় করা যায়নি। অতি শক্তিমান কম্পিউটারের সাহায্যে চেষ্টা করা হয়েছে। সংখ্যা দশমিকের পর চলতেই থাকে। কখনো পৌনঃপুনিক আসে না।
২. মহান গ্রিক অংকবিদ পিথাগোরাসের ধারণা পাই প্রকৃতির একটি রহস্যময় বিষয়। যিনি এই রহস্য উদ্ধার করতে পারবেন তিনি প্রকৃতির একটা বড় রহস্য উদ্ধার করতে পারবেন।
৩. আমেরিকান এষ্ট্ৰনমার কার্ল সেগান পাই-এর রহস্য নিয়ে একটি বই লিখেছেন। যে বইয়ের বিষয়বস্তু হচ্ছে পাই-এর মানে ঈশ্বর কিছু বলতে চাচ্ছেন। এটা তাঁর ভাষা।
তিনি এর মধ্যে হারুন অর রশিদ নামের ছেলেটির খোঁজ বের করারও চেষ্টা করলেন। সমস্যা হল ছেলেটির নাম ছাড়া তাঁর আর কিছুই মনে নেই। ছেলেটার বাবা একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিল সেই কার্ড তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কোথায় যেন তার একটা দোকান বা শো-রুম আছে বলেছিল। জায়গাটার নাম মনে করতে পারলেন না। শুধু মনে আছে সেই দোকানে ভদ্রলোকের এক আত্মীয় বসে যার চেহারা ফিল্মের কোন নায়ক বা নায়িকার চেহারার মত। এই তথ্য দিয়ে কাউকে খুঁজে বের করা নিতান্তই অসম্ভব ব্যাপার। তারপরেও তিনি তার এ্যাসিসটেন্টকে দায়িত্ব দিয়েছেন—ঢাকার সব কটা স্কুলে সে যাবে সেখানে হারুন অর রশিদ নামে এগারো বার বছরের কোন ছেলে আছে কী না খোঁজ করবে। সেই অনুসন্ধানেও কোন ফল হচ্ছে না।
আনিসুর রহমানের জীবন যাপন পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তিনি এখন আর রাত সাড়ে দশটায় বাসায় ফেরেন না। তিনি ফেরেন রাত এগারোটায়। এই আধঘণ্টা সময় গভীর নিষ্ঠায় পাই-এর মান বের করার চেষ্টা করেন।
হলুদ মলাটের একশ পৃষ্ঠার একটা বাঁধানো খাতা তিনি কিনেছেন। খাতার পাতার অর্ধেকের বেশি লিখে ফেলেছেন। অংক এখনো চলছে। কাজটা করে তিনি আনন্দ পাচ্ছেন। দশটা বাজার পরপরই তিনি অস্থির বোধ করেন কখন অংক শুরু করবেন। খাতাটা তিনি বাড়িতে নেন না। অতি মূল্যবান বস্তুর মত চেম্বারে ড্রয়ারে তালাবন্ধ করে রাখেন। খাতা বিষয়ে বা অংক বিষয়ে তিনি কারো সঙ্গেই কোন কথা বলেন না। মাঝে মাঝে তার স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করেন, তোমার কি কোন সমস্যা যাচ্ছে! তোমাকে সব সময় অস্থির লাগে কেন?