সুগিহারা, প্রাণীগুলিকে কি দেখেছেন?
দেখেছি স্যার।
এ জাতীয় কুৎসিত প্রাণীর জন্যে আপনার এত মমতার কারণ কি?
প্রাণীগুলি দেখতে কেমন, সেটা বড় কথা নয়। আলফা সেঞ্চুরির সুসভ্য প্রাণীরা অত্যন্ত সুদর্শন ছিল।
সুগিহারা।
জি, স্যার।
আপনি প্রাণীগুলিকে মেরে ফেলুন। আর আপনাকে যে কৈফিয়ত দিতে বলেছিলাম, তা দেবার প্রয়োজন নেই।
ঠিক আছে, স্যার।
হঠাৎ প্রচণ্ড শক্তিশালী ওমিক্রন রশির দুটি ধারা প্রাণীদের উপর ফেলা হল। সিলঝিন নির্মিত খাঁচাটি অসহনীয় উত্তাপে দেখতে দেখতে মোমর মতো গলে গেল।
সুগিহারা নিজে গিয়ে কিম দুয়েনের কাছে খবর দিল, আণবিক ব্লাস্টার ব্যবহার করা হয়েছে। সুগিহারার মুখ স্নান চোখ বিষন্ন। ক্যাপ্টেন সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করল। সহজ সুরে বলল, মানুষকে প্রায়ই অনেক হৃদয়হীন কাজ করতে হয়। সুগিহারা কিছু বলল না। কিম দুয়েন খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কিছু বলতে চান আমাকে।
জ্বি স্যার, চাই।
বলুন। প্রাণীগুলি মারা যায় নি। ওমিক্রন রশ্মি ব্যবহারের পরেও বেঁচে আছে।
মহাকাশযান গ্যালাক্সি-ওয়ানের বিপদ সংকেতসূচক ঘন্টা বাজতে শুরু করল।
গ্যালাক্সি-ওয়ানের নিয়ন্ত্রণকক্ষ
গ্যালাক্সি-ওয়ানের নিয়ন্ত্রণকক্ষে জরুরি মীটিং বসেছে। একটি জরুরি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তিনটি প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বাধীনতাবে। এখন পর্যন্ত তারা কারোর কোনো ক্ষতি করে নি। তাই বলে যে ভবিষ্যতেও করবে না, তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিয়েশনও এদের কিছুমাত্র কাবু করে নি। ছোটাছুটি করছে উৎসাহের সঙ্গে।
ক্যাপ্টেন কীম গম্ভীর মুখে বললেন, বর্তমান পরিস্থিতির উপর একটি রিপোর্ট দেয়ার জন্যে আমি কম্পিউটার সিডিসিকে বলেছি। আলোচনা শুরু করার আগে আমি সিডিসির রিপোর্টটি শুনতে চাই। আপনারাও মন দিয়ে শুনুন।
আমি সিডিসি বলছি। বর্তমান সমস্যাটি একটি জটিল এবং ভয়াবহ সমস্যা। তিনটি অসাধারণ বুদ্ধিমান প্রাণী গ্যালাক্সি-ওয়ানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন, আমি বুদ্ধিমান শব্দটির আগে অসাধারণ বিশেষণটি ব্যবহার করেছি। আপনাদের কারো কারো আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে এমন সব প্ৰমাণ আছে, যা সন্দেহাতীতভাবে বলবে প্রাণীগুলি বুদ্ধিমান।
প্রথম প্রমাণ : প্রাণীগুলি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করছে গ্যালাক্সি–ওয়ান কী করে কাজ করে। কোনো একটি অদ্ভুত উপায়ে এরা ইলেকট্রনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেই ক্ষমতাবলে এরা গ্যালাক্সি-ওয়ানের প্রতিটি যন্ত্রপাতির ইলেকট্রন-প্রবাহ প্রভাবিত করেছে। অবশ্য খুব অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু করেছে।
দ্বিতীয় প্রমাণ : তারা একটি ট্রেসারেক্ট তৈরি করেছে। কোনো ত্রিমাত্রিক বস্তু দিয়ে ট্রেসারেক্ট তৈরি করা যায় না, কিন্তু এরা করেছে। তিন নম্বর কক্ষে হলডেন কিউব দিয়ে তৈরি ট্রেসারেক্টটি এখনো আছে। আপনারা কি আর কোনো প্রমাণ চান?
না। ক্যাপ্টেন, আপনি আমাদের ট্রেসারেক্টটি দেখাবার ব্যবস্থা করুন।
ক্যাপ্টেন সুইচ টেপামাত্র তিন নম্বর কক্ষটির ছবি ত্রিমাত্রিক পর্দায় ভেসে উঠল। জিনিসটি যে ট্রেসারেক্ট এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হলডেন কিউবগুলি (যেগুলি ট্রেসারেক্টের ষােলোটি কোণে বসে আছে) ঠিক কী উপায়ে ঘুরছে। কম্পিউটার সিডিসি আবার কথা বলা শুরু করল, আমি এখন আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অন্য একটি দিকে। এই প্রাণীগুলি কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এরা শক্তি কোথায় পায়? প্রশ্নটির উত্তরের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
সিডিসি কিছুক্ষণের জন্যে চুপ করে থাকল। সম্ভবত শুনতে চাইল কারোর কোনো বক্তব্য আছে কি-না। কেউ কথা বলল না।
প্রাণীগুলি বুদ্ধিমান হলেও, এরা এই প্রথম কোনো একটি বুদ্ধিমান প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছে বলে আমার ধারণা।
এই ধারণার পেছনে কী কী যুক্তি আছে তোমার?
আমার কাছে এই মুহূর্তে তিনটি প্রথম শ্রেণীর যুক্তি আছে। যুক্তিগুলি বলবার আগে আপনাদের একটি দুঃসংবাদ দিচ্ছি আমাদের যে অনুসন্ধানী দলকে এই গ্রহে নামান হয়েছিল, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমার ধারণা প্রাণীগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করেছে।
নিয়ন্ত্রণকক্ষের জরুরি মিটিং আধা ঘণ্টার জন্যে স্থগিত রাখা হল।
অনুসন্ধানী দলের প্রধান ডঃ জুরাইন অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করছিলেন। ডঃ জুরাইন গ্যালাক্সি-ওয়ানের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান। তিনি অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে আসতে চান নি। তিনটি অদ্ভুত প্রাণীকে কাছ থেকে পরীক্ষা করার সুযোগ ছেড়ে কে আসতে চায় অনুসন্ধানী দলের সঙ্গেতবু তাঁকে আসতে হয়েছে, কারণ এই গ্রহে আরো প্রাণী থাকার সম্ভাবনা। নানান ধরনের প্রাণী। শুধু এক শ্রেণীর প্রাণের বিকাশ হবে তা ভাবার কোনোই কারণ নেই। কাজেই ডঃ জুরাইনকে আসতে হয়েছে। এই গ্রহে প্রাণের বিকাশ কোন পথে হয়েছে, সেটা পরীক্ষা করার দায়িত্ব পড়েছে তার উপর। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত অন্য কোনো প্রাণীর দেখা পান নি।
গত বারো ঘণ্টা ধরে অনুসন্ধানী হেলিকপ্টার উড়ছে। খানাখন্দ এবং প্রকাণ্ড সব পাথর ছাড়া এখন পর্যন্ত কিছু চোখে পড়ে নি। না পড়ারই কথা। প্রাণের বিকাশ হবার জন্যে যা যা প্রয়োজন, তার কিছুই এ গ্রহে নেই। তাহলে প্রশ্ন হয়, ঐ প্রাণী তিনটি এল কোত্থেকে, আকাশ থেকে পড়ে নি নিশ্চয়ই।