তাদের সামনে এখন অনেক সমস্যা। সমস্যা মানেই হচ্ছে আনন্দ। কত কিছু ভাববার আছে এখন। আহ্ কি আনন্দ। অয়ুর পায়ে অসম্ভব যন্ত্রণা, কিন্তু তাতে কিছুই আসে যায় না।
কিম দুয়েন নিজের ব্যক্তিগত ঘরে একা-একা বসে ছিল। আজ সরাসরি প্রচুর ঝামেলা গিয়েছে। এখন খানিকটা বিশ্রাম করা যেতে পারে। তার ঘরের বাইরে দুটি ছোট ছোট লাল বাতি জ্বলছে, যার মানে হচ্ছে বিশেষ কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তাকে বিরক্ত করা যাবে না।
কিম দুয়েন একটি সিগারেট ধরিয়ে কম্পিউটার সিডিসির সবুজ বোতাম টিপে দিল। ঘুমুবার আগে সে সাধারণত সমস্ত দিনের ঘটনা নিয়ে কম্পিউটার সিডিসির সঙ্গে কথাবার্তা বলে। হালকা ধরনের কথাবার্তা–জটিল হিসাব-নিকাশ নয়। কোনো কোনো দিন দু-এক দানা দাবা খেলা হয়। প্রায় সময়ই কিম দুয়েনের মনে থাকে না যে, সে কথাবার্তা বলছে একটি কম্পিউটারের সঙ্গে যার মস্তিষ্ক ল্যাববারেটরিতে সিনক্ৰিয়ন কপোট্রন দিয়ে তৈরি। যার লজিক আছে, কিন্তু অনুভূতি নেই। আজ নিম্নলিখিত কথাবার্তা হল।
হ্যালো সিডিসি।
হ্যালো ক্যাপ্টেন। দাবা খেলবে নাকি এক দান?
না। আজ খুবই ক্লান্ত।
বুঝতে পারছি। ক্লান্ত হবারই কথা এবং খুব চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে।
কিম দুয়েন ঈষৎ সচকিত হয়ে বলল, চিন্তিত হওয়ার কারণ কী?
যে কোনো অজানা বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎকারের মধ্যে চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। আলফা সেঞ্চুরির সুসভ্য প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের প্রথম সাক্ষাৎকারের কথা মনে আছে তো?
কিম দুয়েন গম্ভীর হয়ে বলল, মনে আছে। কিন্তু সিডিসি, তুমি একটি জিনিস ভুল করছে, এরা বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। নীচুস্তরের জীব। খাদ্য যোগাড় করতে গিয়েই এদের সমস্ত বুদ্ধিবৃত্তি ব্যয় হয়।
এখানে তুমি একটি ভুল করছ কিম দুয়েন। প্রাণীগুলি যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং খাদ্যের জন্যে এরা কিছুই করে না।
তার মানে?
এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তুমি জান, আমি অনুমান করে কিছু কখনো বলি না।
সাইকিয়াট্রি বিভাগ কিন্তু আমাকে লিখিত নোট দিয়েছে যে, ওরা হলডেন টেস্ট পাশ করতে পারে নি।
হলডেন টেস্ট বুদ্ধিমত্তা মাপার জন্যে একটি চমৎকার ব্যবস্থা, কিন্তু তোমার মনে থাকা উচিত, হলডেন নিজেই বলেছেন। কোনো প্রাণী যদি অসম্ভব বুদ্ধিমান হয়, তা হলে হলডেন টেস্ট তার কাছে অর্থহীন মনে হবে।
প্রাণীগুলি অসম্ভব বুদ্ধিমান, এ রকম কোনো প্রমাণ কি পেয়েছ?
না, এখননী পাই নি।
এমন কোনো কারণ কি ঘটেছে, যার জন্যে তোমার মনে হয় প্রাণীগুলি বিপজ্জনক হতে পারে?
না ঘটে নি। প্রাণীগুলি শান্ত প্রকৃতির, তবে–
তবে কি?
তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাদের চার দরজা আটকে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্যে।
মনে আছে।
তুমি নিশ্চয়ই জান, আজ এক সেকেন্ডের বারো ভাগের এক ভাগ সময়ের জন্যে আমাদের কেন্দ্রীয় ইলেকট্রিসিটি ছিল না।
আমি জানি।
এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার নয় কি?
হ্যাঁ, খুবই অস্বাভাবিক।
তুমি হয়তো এখনো খবর পাও নি, আমাদের প্রকৌশলী বিভাগের কাছেও একটা সমস্যা আছে। তারা তা নিয়ে বর্তমানে চিন্তাভাবনা করছে।
কি সমস্যা?
আমাদের পাওয়ার লাইনের ইলেকট্রিসিটিতে এ পর্যন্ত পনের বার সাইকেল বদল হয়েছে। যেন কেউ সাইকেল বদলে কিছু একটা পরীক্ষা করছে।
তুমি বলতে চাও, ঐ প্রাণীগুলি এসব করছে?
আমি কিছু বলতে চাই না। প্রমাণ ছাড়া আমি কখনো কিছু বলি না। আমি শুধু তোমাকে একটি সম্ভাবনার কথা বলছি।
কিম দুয়েন সিডিসির সুইচ অফ করে প্রকৌশলী বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করল।
কিম বলছি, সাইকেল বদলাবার একটি খবর শুনলাম।
তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় স্যার। সেজন্যেই আপনাকে জানানো হয় নি। জোসেফসান জাংশনের ত্রুটির জন্যে এরকম হতে পারে।
জোসেফসান জাংশানের কোনো ত্ৰুটি কি ধরা পড়েছে?
না স্যার, তা ধরা যায় নি।
তবে?
কিম দুয়েন খানিকক্ষণ উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করল। তারপর গম্ভীব মুখে যোগাযোগ করল সিকিউরিটি বিভাগের সঙ্গে।
হ্যালো, সিকিউরিটি?
বলুন স্যার।
যে প্রাণীগুলিকে আমরা পরীক্ষার জন্যে ল্যাবরেটরিতে এনেছি, সেগুলিকে মেরে ফেলার জন্যে নির্দেশ দিচ্ছি।
স্যার, আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না।
বুঝতে না পারার কোনো কারণ তো দেখছি না। আণবিক ব্লাসটার দিয়ে ওদের মেরে ফেলুন।
এই জাতীয় নির্দেশ আপনি একা-একা দিতে পারেন না, স্যার। বিজ্ঞান একাডেমির অনুমোদন লাগবে।
মহাকাশযান যদি কোনো বিপদের মুখে পড়ে, তাহলে সর্বাধিনায়ক হিসাবে একাডেমির অনুমোদন ছাড়াই আয়ি যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি আইনের এই ধারাটি মনে আছে?
জি স্যার, আছে?
বেশ। এখন যা বলেছি করুন। দায়িত্ব শেষ করবার পর আপনি নিজে এসে আমার সঙ্গে দেখা করবেন।
ঠিক আছে, স্যার।
আরেকটি কথা, আপনার কাছ থেকে আমি একটি লিখিত জবাবদিহি চাই।
স্যার, আমি বুঝতে পারছি না আপনি কী চাচ্ছেন।
আমি জানতে চাই, ঠিক কী কারণে আমার নির্দেশ পাওয়া সত্ত্বেও আপনি তা মানতে দ্বিধাবোধ করলেন, বিজ্ঞান একাডেমির প্রশ্ন তুললেন।
স্যার, আমি ভাবলাম এগুলি দুর্লভ প্রাণী হতে পারে। মেরে ফেলাটা হয়তো ঠিক হবে না।
এগুলি দুর্লভ প্রাণী নয়। আমরা মাত্র দু ঘণ্টার মধ্যে তিনটি প্রাণী ধরেছি।
আমরা ধরি নি স্যার। ওরা নিজ থেকে ধরা দিয়েছে।
হুঁ। আপনার নাম কি?
আমার নাম সুগিহারা স্যার। আমার ক্রমিক নম্বর ফ-২৩৭।