জনি গম্ভীর হয়ে বলল,
প্রাণীগুলি মোটেই নিম্নশ্রেণীর নয়। আমার মনে হয় প্রথম প্রাণীটি ইচ্ছা করে দরজা খোলা রেখেছিল, যাতে অন্য দুটি এসে উঠতে পারে এবং সুযোগ বুঝে আমাদের সর্বনাশ করতে পারে।
তুমি শুধু শুধু ভয় পাঞ্ছ জনি। এরা নিরীহ প্রাণী। হিংস্র নয়। হিংস্র হলে আমাদের আক্রমণ করে বসত।
আক্রমণ করে নি, কারণ এরা বুদ্ধিমান। এরা সুযোগের জন্যে অপেক্ষা করবে।
জন ফেন্ডার হেসে উঠল। জনি বলল, তিনটি প্রাণীকে এক সঙ্গে মহাকাশযানে নিয়ে আমরা হয়তো বোকামি করছি।
জান, সে দায়িত্ব তোমার নয়। কেন শুধু শুধু ভাবছ?
জীববিদ্যা গবেষণাগারের একপ্রান্তে প্রাণী তিনটিকে রাখা হল। ঘরটি সিলঝিন সংকরের তৈরি। বায়ুর চাপ ০.৯৫ এটমসফিয়ার। বায়ুমণ্ডলীয় গঠন এমন রাখা হয়েছে যাতে প্রাণীগুলির কিছুমাত্র অস্বস্তি না হয়। খাদ্য এবং পুষ্টি বিভাগের উপর ভার পড়েছে, কী ধরনের খাদ্য প্রাণীটি গ্রহণ করে তা বের করা। সাইকিয়াট্রি বিভাগকে বলা হয়েছে প্রাণীটির বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে। রিপোর্টে যদি প্রাণীটিকে বুদ্ধিমান বলা হয়, তবেই তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হবে।
গ্রহটিতে একটি নিরীক্ষা পরীক্ষাগার খোলা হয়েছে। পরীক্ষাগারের দায়িত্ব হচ্ছে, মাকড়সা জাতীয় এই প্রাণীগুলি ছাড়া অন্য কোনো প্রাণের বিকাশ হয়েছে কি না, সে সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা। গ্রহটি ১২ টাইপ। এই জাতীয় গ্রহে প্রাণের উদ্ভব হয় না। কিন্তু যেহেতু এক শ্রেণীর প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে, সেহেতু এই নিরীক্ষা পরীক্ষাগার।
মাকড়সা জাতীয় প্রাণীগুলিকে মহাকাশযানে নিয়ে যাবার পরপরই তাদের ঘুমন্ত ভাব কেটে যায়। তারা মাথার দুপাশের বিচিত্র শিকড়ের মতো জিনিসগুলি বের করে অস্থিরভাবে ছুটোছুটি করতে থাকে। কিন্তু অবস্থাটি সাময়িক। খানিকক্ষণ পর এরা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। চুপচাপ নিঝুম। কিন্তু আবার জেগে উঠে আগের মতো ছুটোছুটি করতে থাকে। আবার নিঝ্ঝুম।
তাদের এ পর্যন্ত ছ রকমের খাবার দেয়া হয়েছে। প্রোটিন, ফ্যাট এবং সেলুলোজ জাতীয় খাবার। প্রতি বারই তারা গভীর আগ্রহে খাবারের চারপাশে ভিড় করেছে। কিন্তু খাবার স্পর্শও করে নি। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আবার সেই আগের মতো ঘুমন্ত অবস্থা।
সাইকিয়াট্রি বিভাগ থেকে বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার জন্যে প্রথম পরীক্ষাটির ব্যবস্থা করা হল। এটি একটি সহজ পরীক্ষা (হলড্রেন ক্রিয়েটিভি টেস্টটাইট হইসি)। যার বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করা হবে, তাকে চৌষট্টিটি স্কয়ার দেয়া হয় এবং অন্য এক জন প্রাণীটির সামনে ঠিক একই ধরনের চৌষট্টিটি স্কয়ার নিয়ে বসে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সেগুলি নিয়ে একটি ত্রিভুজ, একটি আয়তক্ষেত্র এবং একটি সিলিন্ডার তৈরি করা হয়। এরপর এগুলিকে সমানুপাতিকভাবে বিভিন্ন ভাগ করে প্রাণীটিকে দেখানো হয়। সাধারণত নিম্নশ্রেণীর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীরা বেশ কিছু দূর পর্যন্ত অনুসরণ করতে পারে। মধ্যম শ্রেণীর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীরা সমানুপাতিক ভাগ পর্যন্ত করতে পারে। শেষ দুটি পর্যায় শুধু বুদ্ধিমান প্রাণীরাই করতে পারে।
মাকড়সা শ্রেণীর প্রাণী তিনটি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে স্কয়ারগুলি নাড়াচাড়া করতে লাগল। কিন্তু তার পরপরই স্কয়ারগুলি এক পাশে সরিয়ে রেখে দিব্যি ঘুমুতে গেল।
হলডেনের দ্বিতীয় টেস্টেও একই ব্যাপার হল। গোলাকার বল পাঁচটিকে নিয়ে তারা খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করে এক পাশে রেখে ঘুমুতে গেল।
সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হল–প্রাণীগুলির প্রাথমিক পর্যায়ের বুদ্ধিও নেই বলেই মনে হচ্ছে। সাইমেন্সের টেস্টগুলি না করা পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
লীর একটি মাত্র চিন্তা–এসব কি?
বলাই বাহুল্য, এই লম্বাটে দুটিমাত্র পা-বিশিষ্ট প্রাণীগুলি অনেক জানে। যারা এমন একটি অদ্ভুত জিনিসে করে হঠাৎ এসে হাজির হতে পারে, তারা নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও এরা সমস্যা নিয়ে চিন্তা করছে না। এদের ভাবভঙ্গি এরকম, যেন কোথাও কোনো সমস্যা নেই। এদের কথার অর্থ বুঝতে পারলে ভালো হত। নীমকে বলা হয়েছে কথার অর্থ বের করতে। সে এখন শুধু একটিমাত্র সমস্যা নিয়েই ভাবছে। এরা প্রতিটি জিনিসকে একটি নাম দিয়ে ডাকে মহাকাশযান, রবট সিডিসি, সাইকিয়াট্রি বিভাগ। একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক কী করে, সেটিই এখন জানতে হবে। ব্যাপারটি জটিল নয়, সময়সাপেক্ষ। নীম এখানকার প্রতিটি জীবের (যাদের এরা মানুষ বলে ভাবছে) কথাবার্তা মন দিয়ে শুনছে এবং বিশ্লেষণ করছে।
এরা চৌষট্টিটি বস্তু দিয়েছে। উদ্দেশ্য কী, তা বোঝা যাচ্ছে না। এক জন অনেক কিছু বানিয়ে বানিয়ে দেখাল। এরা কি চায় তারাও সেরকম কিছু বানিয়ে বানিয়ে দেখাবে? তা কেন চাইবে নাকি তারা চায় এই সব বস্তুর কম্পনাঙ্ক কত তা বের করতে? নীম প্রতিটির কম্পনাঙ্ক কত তা বের করল। তারপর তিন জন মিলে ভাবতে বসল এই কম্পনাঙ্কগুলির অন্য কোনো অর্থ আছে কিনা। সমস্যাটি জটিল। সময় লাগল ভাবতে। কিন্তু উত্তর বের করার আগেই ওরা পাঁচটি গোলাকার বস্তু ঢুকিয়ে দিল। এদের ওজন এক নয়, কিন্তু কম্পনাঙ্ক এক। এটিও কি কোনো সমস্যা? ওরা আবার ভাবতে বসল।
অয়ুর উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, ওরা কে কী ভাবছে তা বের করার। এর জন্যে ভাষা জানবার প্রয়োজন হয় না। লুখ দুটিকে সম্পূর্ণ সক্রিয় করতে হয়। অয়ু নিবিষ্ট মনে তাই করে যাচ্ছে। প্রতিটি মানুষের কথা জানবার পরই সে সমস্যা নিয়ে ভাবতে বসবে। কিন্তু ইতিমধ্যে সে একটি অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করেছে, মানুষরা একে অন্যের মনের কথা বুঝতে পারছে না। ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। জনি নামের মানুষটি জন ফেন্ডারের খুব কাছে পঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছে জন ফেভার একটি মহামূৰ্খ–কিন্তু জন ফেন্ডার তা বুঝতে পারছে না।