যে কোনো রাশিকেই এক কিংবা সেই রাশি দিয়ে ভাগ দেয়া যায়।
তা যায়। ঐ দুটি রাশি ছাড়া অন্য কোনো রাশি দিয়ে ভাগ দেয়া যাবে না।
মা মারা যাবার আগে আগে অনেক কিছুই ওরা শিখে ফেলল। আবার অনেক কিছু শিখতে পারল না। মা বলতেন, বেশির ভাগ জিনিসই শিখতে হয় নিজের চেষ্টায়। তোমরা দীর্ঘজীবী! অনেক সময় পাবে শেখার। মৃত্যুর আগে আগে বলে গেলেন,
একটি কথা সব সময় মনে রাখবে, তোমরা থাকবে একসঙ্গে। তোমাদের তিন জনের মিলিত শক্তি হচ্ছে অকল্পনীয় শক্তি। আরেকটি কথা, ঘরগুলির রহস্য বের করতে চেষ্টা করবে।
তাঁর মৃত্যু দেখে ওদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্যে মা মৃত্যুর ঠিক আগে আগে ওদের একটি সমস্যা নিয়ে ভাবতে বললেন, মৃত্যু কী? তারা সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকল, বুঝতেই পারল না কখন মা মারা গেলেন।
নীম বেরিয়ে আসতে দেরি করল। অনেকখানি দেরি করল। সূর্য তখন প্রায় মাথার উপর। লী কিছুই বলল না। নীম খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, চল ফিরে যাই।
তোমার যা দেখার দেখা হয়েছে?
হয়েছে।
কী দেখলে?
আজকে প্রথম বারের মতো একটা জিনিস লক্ষ করলাম।
বল শুনি।
এই ঘরগুলি আকাশছোঁয়া।
আমার তো মনে হয় এ তথ্যটি আমরা প্রথম থেকেই জানি।
এই ঘরগুলির দেয়াল অসম্ভব মসৃণ।
এইটিও আমরা প্রথম থেকেই জানি।
আমার মনে হয় এ রকম করা হয়েছে, যাতে আমরা দেয়াল বেয়ে উঠতে না পারি।
লী চুপ করে রইল। নীম বলল, আমি ভেতরে গিয়ে আজকে কী করেছি জান?
না। জানতে চেষ্টা করি নি।
এই ঘরের যে কম্পনাঙ্ক, সেই কম্পনাঙ্ক আমি আমার সুখ কাঁপিয়েছি।
লী স্তম্ভিত হয়ে গেল। যদি সত্যি তাই হয়, তাহলে ঘরটির ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ার কথা।
নীম বলল, ঘর ভাঙাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। যাতে তুমি আঘাত না পাও, সেজন্যই তোমাকে নিয়ে ঢুকি নি। কিন্তু ঘর ভাঙে নি। কেন ভাঙে নি জান?
না।
ভাঙে নি, কারণ ছটি ঘর আলাদা আলাদা করে এমনভাবে তৈরি করা, যাতে সামগ্রিক কম্পনাঙ্ক অনেক নিচে নেমে গেছে। আমরা এত নিচে নামতে পারি না। তুমি কি কিছু বুঝতে পারছ, লী?
পারছি। যারা এই ঘরগুলি তৈরি করেছে, তারা আমাদের হাত থেকে এদের রক্ষা করবার জন্যেই এরকম করেছে, এই বলতে চাও তুমি?
হ্যাঁ।
তারা তাহলে কোথায়?
সেই সমস্যা নিয়ে আমাদের তিন জনকে একসঙ্গে ভাবতে বসতে হবে।
লী এবং নীম নিঃশব্দে ফিরে চলল। লী ভেবে রেখেছিল নীমকে খুব একচোট গালমন্দ করবে। কিন্তু কিছুই করল না, অত্যন্ত দ্রুতপায়ে ফিরে চলল অয়ুর কাছে। তিন জন মিলে আবার ফিরে আসা দরকার। ঘরগুলির মাথার উপর গিয়ে দেখা দরকার কী আছে সেখানে। অনেক সমস্যা জমে গেছে। ভাবতে বসা প্রয়োজন।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, জন্তুটি নিঃশব্দে খাঁচায় ঢুকে পড়ল। জন ফেন্ডার এবং জনি কুলম্যান বড়ই অবাক হল। কোনো জন্তুকে খাঁচায় ঢোকানো অত্যন্ত পরিশ্রমের ব্যাপার। প্রচুর যান্ত্রিক সহায়তা প্রয়োজন। প্রথমে একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক চক্র তৈরি করা হয়, সেই চক্ৰ ক্ৰমাগত ছোট করে
চার মুখের সামনে আনা হয়। জন্তুটি যত বুদ্ধিমান, তাকে খাঁচায় ঢাকানো ততই মুশকিল। এ ক্ষেত্রে কোনো কিছুরই প্রয়োজন হল না। খাচার মুখ খোলামাত্র জন্তুটি খাচায় ঢুকে পড়ল। বৈদ্যুতিক চক্র তৈরি করার প্রয়োজনও হল না। জনি কুলম্যান চেঁচিয়ে বলল, চার দরজা বন্ধ করে দাও।
কম্পিউটার সিডিসি বলল, যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে। খাচার দরজা বন্ধ হচ্ছে না।
কি জাতীয় গোলোযোগ?
সেকেন্ডারি মেগনেটিক ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না।
এরকম হবে কেন?
মনে হচ্ছে কারেন্ট ফ্লো করছে না। ভেরিয়াক দুটি অকেজো। পরীক্ষা করা হচ্ছে।
আমরা এখন কী করব?
অপেক্ষা করবে। আমরা ক্রটি সারাতে না পারলে অন্য আরেকটি খাঁচা পাঠাবে।
জনি কুলম্যানের বিরক্তির সীমা রইল না। কতক্ষণ এরকম অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। জন্তুটি মনে হচ্ছে দিব্যি সুখে ঘুমিয়ে পড়েছে। গাছের ডালের মতো যেসব বিচিত্র জিনিস তার মাথার দুপাশ দিয়ে বের হয়েছিল, সেগুলি আর দেখা যাচ্ছে না। শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলেছে। নাকি? জন ফেন্ডার বলল, প্রাণীটি বুদ্ধিমান নয়।
কী দেখে বলছ?
প্রাণীটি ঘুমিয়ে পড়েছে। এ রকম অস্বাভাবিক অবস্থায় কোনো প্রাণী ঘুমিয়ে পড়তে পারে না।
ঘুমুচ্ছে, বুঝলে কী করে?
চোখ বন্ধ। মাথার শুঁড়গুলিও নেই। নড়াচড়া করছে না।
তুমি কি নিঃসন্দেহ যে প্রাণীটি ঘুমুচ্ছে?
না। তা ছাড়া অসংখ্য প্ৰাণী আছে যারা কখনো ঘুমায় না। স্নায়ুবিক বিশ্রামের তাদের প্রয়োজন নেই।
১৮টা পঁচিশ মিনিটে গ্যালাক্সি-ওয়ান থেকে জানানো হল যে চাটির দরজা ঠিক করা সম্ভব হয় নি। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অন্য একটি খাঁচা পাঠানো হচ্ছে। জন্তুটিকে নতুন খাঁচায় ঢোকানোর জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক।
প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগেই দেখা গেল ঠিক একই রকম দেখতে আরো দুটি প্রাণী এসে উপস্থিত হয়েছে এবং কিছুমাত্র দ্বিধা না করে ঢুকে পড়েছে খাচায়। ঢোকামাত্রই খাচার দরজা বন্ধ হয়ে গেল। জনি বলল, এসব কী হচ্ছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এই দুটি আবার কোত্থেকে এল?
জন ফেন্ডার বলল, তুমি নিশ্চয়ই আশা কর নি, একটিমাত্র এরকম প্রাণী এই গ্রহে?
লক্ষ লক্ষ এ রকম কুৎসিত প্রাণী এখানে, তাও আশা করি নি। আর ভাব দেখে মনে হচ্ছে সবাই খাচায় ঢুকে পড়বে।
মোটেই অস্বাভাবিক নয়। নিম্নশ্রেণীর প্রাণীরা প্রায়ই দলপতিকে অনুসরণ করে।