কী করে হচ্ছে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, তবে হচ্ছে।
আরো কিছু আছে?
আছে, তবে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা ঠিক হবে না।
ঠিক না হলেও বলে ফেল।
প্রাণীটির শরীরে একটি চৌম্বক শক্তি থাকার সম্ভাবনা আছে।
নিশ্চতভাবে কখন জানা যাবে?
যখন প্রাণীটি এগিয়ে আসবে।
জন ফেন্ডার শুকনো মুখে বলল, চৌম্বক শক্তিটি কি শক্তিশালী?
যথেষ্ট শক্তিশালী।
জন ফেডার খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তোমার কি মনে হয় প্রাণীটি বুদ্ধিমান?
সিডিসি সঙ্গে সঙ্গে বলল, প্রাণীটি বুদ্ধিমান হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে যেসব তথ্য আমার কাছে আছে, তা থেকে এই মুহূর্তে কিছু বলা ঠিক হবে না।
মহাকাশযান সময় ১৫/৩৫ মিনিটে দ্বিতীয় স্কাউটশিপটি নামল। জন্তুটি লফিয়ে উঠল না, বা ভয় পেয়ে পালিয়েও গেল না। স্কাউটশিপ থেকে পা বাড়াবার সঙ্গে সঙ্গে জন ফেভারের মনে হল–প্রাণীটির নাম অয়ু, প্রাণীটির আরো দুটি বন্ধু আছে। একজনের নাম লী, অন্যজনের নাম নীম। এরা তিন জন ছাড়া এই গ্রহে অন্য কোনো প্রাণী নেই।
এই রকম মনে হওয়ার পেছনে কোনো কারণ নেই। তবু জন ফেডারের মনে হল, এ সব তথ্যের প্রতিটিই সত্য। জন ফেভার কাঁপা গলায় বলল, হ্যালো জনি, ঐ জটির নাম অয়ু নাকি?
হ্যাঁ, ওর নাম অয়ু।
জন ফেভার গম্ভীর হয়ে বলল, কী করে জানলে ওর নাম অয়ু? কথা বলেছ নাকি ওর সঙ্গে?
না, কথা বলি নি।
কথা না বলেই বুঝতে পারলে?
জনি থেমে থেমে বলল, তা পারলাম এবং আমার মনে হয় তুমি বুঝতে পেরেছ।
জন ফেভার গম্ভীর হয়ে বলল, ব্যাপার কি জানি।
ব্যাপার তো তোমারই জানার কথা। তুমি জীববিজ্ঞানের লোক।
তা ঠিক। তা ঠিক।
জন ফেন্ডারম্যান স্কাউটশিপ থেকে অনেকখানি এগিয়ে গেল প্ৰাণীটির দিকে, তারপর স্পষ্ট স্বরে বলল,
হ্যালো আয়ু।
লী ও নীম নিঃশব্দে হাঁটছিল
লী ও নীম নিঃশব্দে হাঁটছিল।
হাঁটবার সময় এরা সচরাচর কথা বলে না। লুখগুলি শরীরের ভেতর লুকানো থাকে। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া বের করে না।
সকালবেলার দিকে তারা ঘরগুলির সামনে এসে দাঁড়াল। ঝড় নেই। শান্ত ভাব চারদিকে। লী বলল,
আজ কোন ঘরটির ভেতর প্রথম ঢুকবে?
নীম জবাব না দিয়ে প্রথম ঘরটির ভেতর ঢুকে পড়ল। এই ঘরটি সবচে উঁচু। প্রায় আকাশছোয়া। লী বেশ অবাক হল। তারা কখনও একাএকা কোথাও যায় না। আজ নীম এরকম করল কেন? লী ডাকল, নীম, নীম।
নীম সাড়াশব্দ করল না। লী খানিকক্ষণ ইতস্তত করে প্রথম ঘরটির ভেতরে ঢুকল। আশ্চর্য, এই প্ৰকাণ্ড হল ঘরের কোথাও নীম নেই। তাহলে সে কি দ্বিতীয় ঘরে চলে গেছে। দ্বিতীয় ঘরেও তাকে পাওয়া গেল না। শুধু তাই নয়, ছটি ঘরের কোনটিতেই নীম নেই।
লী অবশ্য অনায়াসে তাকে খুঁজে বের করতে পারে। লুখগুলি বের করে রাখলেই জানা যাবে কোথায় লুকিয়ে আছে নীম। কিন্তু লীর ইচ্ছা করছে। না। নীম এ রকম করল কেন?
লী ঘরের বাইরে এসে পা ছড়িয়ে বসে থাকল। তার কিছুই ভালো লাগছে না। ক্লান্তি লাগছে। এ রকম কলল কেন নীম? কত দীর্ঘকাল তারা একসঙ্গে আছে। সেই কবেকার কথা, অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে। মা ছিলেন বেঁচে। মায়ের চারপাশে তারা ঘুরঘুর করত। মা বলতেন,
আমার লক্ষ্মী সোনারা, তোমরা সবাই একসাথে থাকবে। একা-একা যাবে না কোথাও।
নীম চোখ ঘুরিয়ে বলত, একা-একা গেলে কী হয়?
একা-একা থাকলে অনেক ঝামেলা হতে পারে। যদি একসঙ্গে থাক, তাহলে তোমাদের তিন জনের সুখ একসঙ্গে থাকবে। যদি তারা এক মাত্রায় কাঁপে, তাহলে তোমরা অনেক কিছু করতে পারবে। আমাদের লুখ মহাশক্তিশালী।
কী করে কাঁপবে এক সঙ্গে?
তোমাদের নিজেদেরই তা শিখতে হবে। আমার লুখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি তোমাদের কিছু শেখাতে পারব না।
শুধু লুখ নয়, অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাঁর। মা চোখে দেখতেন না, হাঁটতে পারতেন না। তবু যে কত দিন বেঁচে ছিলেন, তাদের কত কিছুই না শেখাতেন। প্রথম শেখাৰ্পেন কী করে সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে হয়।
প্রথমে লুখগুলি শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে, তারপর কোনো একটি জায়গায়, যেখানে প্রচুর আলো আছে, সেখানে পা ছড়িয়ে ভাবতে বসবে। একজন কি ভাবছে অন্য জন তা বুঝতে চেষ্টা করবে না।
বুঝতে চেষ্টা করলে কী হয়?
ঠিকমতো ভাবা যায় না।
তাদের প্রথম সমস্যা দিলেন মা। সমস্যাটি অদ্ভুত—আমরা কে? কোত্থেকে এসেছি? দিনের পর দিন এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে লাগল। তারা। প্রথম মুখ খুলল আয়ু। সে বলল,
আমরা বুদ্ধিমান একটি প্রাণী।
মা বললেন, প্রাণী কি?
যারা ভাবতে পারে তারাই প্রাণী।
আমরা কোত্থেকে এসেছি?
আমরা কোনো জায়গা থেকে আসি নি। এখানেই ছিলাম।
মা দুঃখিত হয়ে বললেন, তোমরা এখনো ভাবতে শেখ নি। ভাবনাতে যুক্তি নেই তোমাদের।
ক্ৰমে ক্ৰমে তারা ভাবতে শিখল। কত অদ্ভুত অদ্ভুত সমস্যাই না মা দিতেন–(১) আলো আমাদের কাছে এত প্রিয় কেন? কেন আমরা আলো ছাড়া ভাবতে পারি না? (২) কেন ঘরগুলির কাছে আমাদের যেতে মানা?
তখনো তারা ঘরগুলি দেখে নি, শুধু মায়ের কাছে শুনেছে। দুটি ঘর আছে আকাশছোয়। সে ঘরের কাছে যেতে মানা। কেন মানা? মা তা বলবেন না। ভেবে বের করতে হবে।
যেদিন মায়ের শরীর একটু ভালো থাকত, সেদিনই নতুন কিছু বলতেন। একদিন তারা গুনতে শিখল। শেখামাত্রই মা একটি সমস্যা দিয়ে দিলেন পাঁচ সংখ্যার এমন দুটি রাশি বল, যাকে অন্য কোনো রাশি দিয়ে ভাগ দেয়া যায় না।নীম সঙ্গে সঙ্গে বলল,