হ্যালো কিম দুয়েন।
হ্যালো জনি।
কতক্ষণ লাগবে শক্তিবলয় তৈরি হতে?
নির্ভর করে কী ধরনের শক্তিবলয়, তার উপর।
প্রায় দুঘণ্টা ধরে বসে আছি আমি। এত দেরি হচ্ছে কেন?
3M শক্তির বলয় তৈরি হচ্ছে, এতে সময় লাগে জনি। তুমি কি আর কিছু বলবে?
হ্যাঁ বলব। আমার সঙ্গে আরো এক জন কারোর থাকা দরকার।
কি ব্যাপার, জনি, একা-একা ভয় লাগছে?
ভয়ের প্রশ্ন নয়। প্রথম অবতরণ কখনো একা না করার নির্দেশ আছে।
তুমি একা নামছ না। তোমার সঙ্গে আছে L2F12.
কিম দুয়েন, এটি তো একটা রোবট।
রোবট হলেও এতে একটি সিডিসি কম্পিউটারের মস্তিষ্ক আছে। নয় কি?
হ্যাঁ, তা আছে।
তাহলে ভয় পাচ্ছ কেন?
ভয় পাচ্ছি, এমন কথা তো বলি নি।
বলার অপেক্ষা রাখে না জানি। আমাদের এখানে আমরা তোমার হার্টবিট এবং ব্লাডপ্রেসার মাপতে পারছি।
কিম দুয়েন ফুর্তিবাজের ভঙ্গির্তে হেসে উঠল। জনি চুপ করে রইল।
হ্যালো জনি, ঠিক এই মুহূর্তে তোমার ব্লাডপ্রেসার কত জানতে চাও?
জনি ডায়াল—সুইচ অফ করে দিয়ে কপালের ঘাম মুছল। তার ভয় করছে ঠিকই, কিন্তু তার পেছনে কারণ আছে। মুশকিল হচ্ছে, কারণটি কাউকে বলা যাচ্ছে না। বলামাত্রই একটি মেডিকেল টিম বসবে। এক জন সাইকিয়াট্রিস্টকে বলা হবে জনি কুলম্যান, জু নাম্বার তিনশ; ভূতত্ত্ববিদ ও স্কাউট অভিযাত্রীর উপর একটি পূর্ণ মেডিকেল রিপোর্ট লিখতে। এসব হতে দেয়া যায় না।
জনি।
জনি কুলম্যান দেখল, সিডিসি রোবটটির মস্তিষ্ক চালু করা হয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে শক্তিবলয় তৈরি শেষ হয়েছে, স্কাউটশিপ এখন নিচে নেমে যাবে। জনি কুলম্যান রোবটটির দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে বলল,
হ্যালো সিডিসি।
তুমি কি ভয় পাচ্ছ জনি? তোমার হার্টবিট স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।
জনি শান্ত স্বরে বলল, আমি ভয় পাচ্ছি।
কারণটি কি আমি জানতে পারি?
জানতে পার। যেহেতু তুমি যাচ্ছ আমার সঙ্গে, সেহেতু তোমাকে আমার বলা উচিত।
বল। আমি শুনছি।
স্কাউটশিপে নিচে নামার সময় আমার মনে হল, এক জন কেউ যেন আমার জন্যে অপেক্ষা করছে।
হুঁ। সেটির একটি ছবিও যেন আমার মনে এল।
ছবিটি কি রকম?
কুৎসিত। জিনিসটির অনেকগুলি পা আছে।
তুমি দেখতে পেলে জিনিসটিকে।
না। ছবিটি আমার মনে হল।
আর কি জান জিনিসটি সম্পর্কে?
ওর নাম জানি।
নামটিও তোমার মনে হল?
হ্যাঁ।
কী নাম।
অয়ু।
স্কাউটশিপটি ভূমি স্পর্শ করা মাত্র সিডিসি বলল, তুমি মহাকাশযানে ফিরে যাবার পর অবশ্যই এক জন সাইকিয়াট্রিক্টের সঙ্গে দেখা করবে। জনি কথা বলল না। সিডিসি বলল, তুমি রাগ করলে না তো আবার। তোমরা মানুষরা অকারণেই রাগ কর। জনি চুপ করে রইল।
মহাকাশযান সময় ১৪টা ৩০ মিনিটে তারা দুজন স্কাউটশিপ থেকে বের হয়ে এল। প্ৰকাণ্ড সব পাথরে ঢাকা ঘন কৃষ্ণবর্ণের ধূলিকণা চারদিকে। একটি মৃত পৃথিবী, কঠিন এবং কিছু পরিমাণে ভয়ঙ্কর।
জনি স্কাউটশিপকে পেছনে ফেলে পঁচিশ গজের মতো এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। একটি সবুজাভ পাথরের আড়াল থেকে এটি কী বের হয়ে আসছে? স্পেস-স্যুটের আরামদায়ক শীতলতার মধ্যেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল।
জিনিসটি কুৎসিত। এগারোটি পা মাকড়শার মতো চারদিকে ছড়িয়ে আছে। শরীরের তুলনায় প্রকাণ্ড একটি মাথা। মাথার দুপাশে গাছের ঘন শিকড়ের মতো কী যেন বের হয়ে আছে, যেগুলি সারাক্ষণই এদিক-ওদিক নড়ছে। জিনিসটির কোনো চোখ নেই, মুখ নেই। গায়ের বর্ণ ধূসর নীল। জনি কুলম্যান জরুরি সুইচ টিপল। হ্যালো। হ্যালো। হ্যালো মহাকাশযান গ্যালাক্সি-ওয়ান। হ্যালো। সিডিসি, সিডিসি। হ্যালো সিডিসি।
জনি তার ডান হাতের আণবিক রাস্ট থ্রোয়ার কার্যকর করে জিনিসটির দিকে তাকাল, যেটি প্রায় এক শ গজ দূরে পা ছড়িয়ে বসে আছে। মাথার দুপাশের শিকড়ের মতো জিনিসগুলি ঘূর্ণায়মান গতিতে অতি দ্রুত ঘুরছে। জনি কুলম্যান কুল-কুল করে ঘামতে লাগল।
এ রকম অসম্ভব ঘটনাও ঘটে
এ রকম অসম্ভব ঘটনাও ঘটে।
অয়ু সমগ্র ব্যাপারটি চোখের সামনে ঘটতে দেখল। প্ৰকাণ্ড বড় জিনিস থেকে ছোট্ট জিনিসটি নেমে এল মাটিতে। তার মধ্যে দুটি কী যেন বসে আছে। তারা কে? দু জনের কম্পনাঙ্ক রকম। এক জনের মধ্যে আরে এ কি! অয়ুর মনে হল একজনের সমস্ত চিন্তাভাবনা সে বুঝতে পারছে।
এতে অবাক হবার কিছু নেই, অয়ু লী বা নীম দুজনের মনের কথাই বুঝতে পারে। কিন্তু যে জিনিসটির কথা সে বুঝতে পারছে, সে জিনিসটি অয়ু বা লীর মতো নয়। ওর একটি নাম আছে, জনি, কুলম্যান–অদ্ভুত নাম। জনি কুলম্যান অসম্ভব ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে কেন? ছোট্ট ঘর থেকে ভয়ে ভয়ে নামছে। তার সঙ্গে যে আছে, তার মনের কথা অয়ু কিছুই বুঝতে পারছে না। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, ঐটির মধ্যে আবার অসংখ্য তরঙ্গ। তরঙ্গগুলির দৈর্ঘ্য একেকটি একেক রকম। ওর নাম কি অয়ু বুঝতে পারছে না। তবে বুঝতে পারছে, তার সঙ্গে আকাশের মহাকাশযানটির সম্পর্ক আছে। অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে সম্পর্কটি রাখা হচ্ছে সর্বক্ষণ। অন্য লোকটি, যার নাম জনি কুলম্যান, সেও মাঝে মাঝে মহাকাশযানটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। তবে তা রাখা হচ্ছে অনেক বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গ দিয়ে। অর্থাৎ সে কথা বলছে। কথা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। তবে অয়ু যদি বেশ কিছু সময় এই সমস্যাটি নিয়ে চিন্তা করে, তাহলে বুঝতে পারবে। ইস, লী আর নীম যদি থাকত, তাহলে নিমিষের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান হত।