ওদেরকে এই গ্রহে নামিয়ে দিয়ে ফিরে যেতাম।
কেন? নামিয়ে দিতে কেন?
যে সব প্রাণীদের ওমিক্রন রশি দিয়েও কাবু করা যায় না, তারা গ্যালাক্সি-ওয়ানের নিরাপত্তার এক বিরাট হুমকি।
কিন্তু এরা বুদ্ধিমান প্রাণী।
বুদ্ধিমান প্রাণী বলেই এরা বিপজ্জনক।
এদেরকে এই গ্রহে নামিয়ে দিতে চাইলে ওরা রাজি হবে?
না, এরা রাজি হবে না। এই প্রান্তহীন গ্রহে এদের কিছু করার নেই। আমাদের সঙ্গে এসে এরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে বলা চলে।
প্রাণীগুলিকে তোমার কেমন লাগছে সিডিসি?
চমৎকার! এদের দাবা খেলা শিখিয়ে আমি একবার বুদ্ধির শক্তি পরীক্ষা করিয়ে দেখতে চাই।
সিডিসি।
বলুন স্যার।
তুমি এ জাহাজের ক্যাপ্টেন হলে কী করতে?
আমি এদের মেরে ফেলতে চেষ্টা করতাম।
এদের মেরে ফেলবার পেছনে তোমার কী কী যুক্তি আছে?
আমার তিনটি যুক্তি আছে। কিন্তু আপনাকে একটি শুধু বলব।
বল।
স্যার, আপনি জানেন না যে আরো দুজায়গায় মানুষের সঙ্গে কল্পনাতীত বুদ্ধিমান প্রাণীর দেখা হয়েছে। সেখানেও নিওলিথি সভ্যতা ছিল। দুজায়গাতেই মহাকাশযানের নাবিকরা বুদ্ধিমান প্রাণীগুলিকে জাহাজে তুলে নিয়ে আসছিল। এবং দুটি ক্ষেত্রেই হাইপারডাইভের আগে আগে মহাকাশযান দুটি বিনষ্ট হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ওদের মিল লক্ষ করেছেন?
ঐ ক্ষেত্রেও প্রাণীগুলি মাকড়সা জাতীয় ছিল?
না, তা ছিল না।
নিওলিথি সভ্যতার সঙ্গে প্রাণীগুলির কী সম্পর্ক?
আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার মতো যথেষ্ট তথ্য আমার জানা নেই।
সিডিসি।
বলুন স্যার। নিওলিথি সভ্যতা সম্পর্কে আরো জানতে চাই।
আমাদের লাইব্রেরিতে একটি মাইক্রোফিল্ম করা বই আছে–অজানা সভ্যতা—সেটি পড়ে দেখতে পারেন। তাছাড়া যা যা জানতে চান, আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
ক্যাপ্টেন সুইচ টিপে সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন। বেরিয়ে এলেন হলঘরেলাইব্রেরি থেকে বইটি নিতে। লাইব্রেরি তৃতীয় স্তরে। অনেকখানি হাঁটতে হবে।
তৃতীয় স্তরে ঢাকবার মুখেই তাঁর দেখা হল লীর সঙ্গে। তিনি সহজ স্বরে বললেন, হ্যালো।
ক্যাপ্টেন।
কিছু বলবেন?
আপনি মনে হচ্ছে একটি বইয়ের খোঁজে যাচ্ছেন?
ক্যাপ্টেন ইতস্তত করে বললেন, কোত্থেকে জানলেন।
আপনার মস্তিষ্কের কম্পন থেকে। আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি, আমরা আপনাদের চিন্তার ধারা বেশ খানিকটা বুঝতে পারি।
হ্যাঁ, তা অবশ্যি বলেছেন।
আপনি যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, আমিও সে বিষয়ে জানতে চাই।
আপনি নিশ্চয়ই মাইক্রোফি পড়তে জানেন না। নাকি জানেন?
না, জানি না। তবে আপনি যখন পড়বেন, তখন আমি যদি আশেপাশে থাকি, তাহলেই সব বুঝতে পারব।
নিওলিথি সভ্যতা সম্পর্কে আপনার আগ্রহের কারণ কি?
আমরা কোত্থেকে এসেছি তা জানতে চাই। ক্যাপ্টেন, আমরা এই গ্রহের অধিবাসী নই। আমাদের অন্য কোনো জায়গা থেকে এনে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। আমাদের গরণা, নিওলিথি সভ্যতার সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে।
আপনি কি ঘরগুলির ভেতর কখনো গিয়েছেন?
না, তবে নীম একবার গিয়েছিল।
যান নি কেন?
আমাদের উপর নিষেধ ছিল। আমাদের মা নিষেধ করেছিলেন, যেন কখনো তার আশপাশে না যাই।
আপনার মায়ের কথা তো কখনো বলেন নি।
বলবার সুযোগ হয় নি।
ক্যাপ্টেন খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আসুন আমার সঙ্গে। আমি লাইব্রেরিতে বসেই পড়ব। আপনি থাকুন আমার পাশে।
ক্যাপ্টেন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এ বইটি ছাড়াও অন্য কোনো বই যদি আপনার পড়তে ইচ্ছা হয়, আপনি বলবেন, আমি ব্যবস্থা করব।
অসংখ্য ধন্যবাদ, ক্যাপ্টেন। আপনার জন্যে আমি কি কিছু করতে পারি?
ক্যাপ্টেন খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন, আছে, আমার একটি সমস্যা আছে। আমি যথাসময়ে আপনাকে সমাধান করতে দেব।
আমরা তিন জন মিলে সে সমস্যার সমাধান করব। নিশ্চয়ই আমরা করব।
অয়ুর পায়ের যন্ত্ৰণা
অয়ুর পায়ের যন্ত্ৰণা অসম্ভব বেড়ে গেছে। সে কিছুক্ষণের জন্যে জেগেছিল, ব্যথার তীব্রতায় অস্থির হয়ে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করল। নীম পরীক্ষা করে দেখল পা-টি-নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেটা তেমন ভয়াবহ নয়, কিন্তু ভয়াবহ হচ্ছে শরীরের অন্যান্য কোষগুলিও নষ্ট হতে শুরু করেছে। তার মায়েরও এ রকম হয়েছিল। এমন কিছু কি নেই, যা দিয়ে তীব্র ব্যাথার উপশম হয়? নীম অস্থির হয়ে উঠল। কিছু একটা করা প্রয়োজন, কিন্তু কিছু কি সত্যি করা যায়?
তারা এখানে একা। অসাধারণ চিন্তাশক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা কিছুই করতে পারে নি। দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী তারা একটি প্রাণহীন গ্রহে ঘুরে বেড়িয়েছে। শুধু ঘুরে বেড়ানো। উফ, শক্তি ও ক্ষমতার কী নিদারুণ অপচয়।
এর কি শরীর খুব খারাপ?
নীম দেখল, স্রুরা। এই লোকটির সঙ্গে অয়ুর ভালো চেনাজানা হয়েছে।
নীম বলল, ও মারা যাচ্ছে।
সে কি!
আমাদের মা নিজেও এভাবেই মারা গিয়েছিলেন।
নিশ্চয়ই এর চিকিৎসা আছে।
থাকলেও আমাদের জানা নেই।
আমি আমাদের মেডিকেল টিমকে বলছি, এসে দেখতে।
আমার মনে হয় না, এতে কোন লাভ হবে। আমাদের শরীরের সঙ্গে তোমাদের কোনো মিল নেই।
না থাকুক, আমি ওদের আনছি।
নিওলিথি সভ্যতার উপর লেখা বইটি আয়তনে ছোট। বৈজ্ঞানিক তথ্য বলতে বিশেষ কিছু নেই। কোনটি কবে আবিষ্কার হয়েছে, কোনটির কী রঙ, যে গ্রহগুলিতে সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাদের আবহাওয়া, মাটির গঠনপ্রকৃতি–এই সব বিশদ করে লেখা। কোনোটিতেই লেখা নেই ঘরগুলির ভেতরটা কেমন, যে আলো ঘর থেকে আসছে তার উৎস কী? তরঙ্গদৈর্ঘ্যইবা কী? বইটি লেখা হয়েছে সুখপাঠ্য উপন্যাসের কায়দায়, যেখানে যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য বেশি। তবে দুটি জিনিস জানা গেছে। (১) নিওলিথি সভ্যতা যেসব গ্রহে পাওয়া গেছে, সেসব গ্রহের প্রতিটিতে দুটি করে সূর্য আছে। (২) যে সৌরমণ্ডলে নিওলিথি সভ্যতা আছে, সেই সৌরমণ্ডলের কাছাকাছি আছে একটি ব্ল্যাক হোল।