প্রথম সম্ভাব্য কারণ : অনুসন্ধানী স্কাউটশিপটি অদ্ভুত প্রাণীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং তারা যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। সে সম্ভাবনা অবশ্যি খুবই কম। প্রথমত স্কাউটশিপটি অনেক উঁচু দিয়ে উড়ছে। অদ্ভুত প্রাণীগুলি বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক শক্তিকে প্রভাবিত করতে পারলেও এদের কোনো প্রযুক্তিবিদ্যা নেই। এরা উড়ে-যাওয়া একটি স্কাউটিশিপের ক্ষতি হয়তোবা করতে পারবে না।
দ্বিতীয় কারণটি সিডিসি যথেষ্ট কুণ্ঠার সঙ্গে ব্যাখ্যা করল। সিডিসি বলল, আমি পুরান তথ্যাদির উপর নির্ভর করে দ্বিতীয় সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করছি। ইন্টার গ্যালাকটিকা আর্কাইভে বলা হয়েছে, যে ধ্বংসপ্রাপ্ত নিওলিথি সভ্যতার পঞ্চাশ হাজার গজের কাছাকাছি যখন কোনো স্কাউটশিপ বা মহাকাশযান যায় তখন তার যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ, এই গ্রহে নিওলিথি সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আছে?
আমি সম্ভাবনার কথা বলছি।
জন ফেন্ডার বলল, আমরা সহজেই তোমার সম্ভাবনা প্রমাণ করতে পারি। আমাদের কাছে নিওলিথি সুরের বেশ কিছু রেকর্ড আছে। রেকর্ডগুলি বাজানো হলে যে তিনটি প্রাণী আমাদের কাছে আছে; ওরা সেই সুর চিনতে পারবে।
তা ঠিক।
কম্পিউটার সিডিসি বলল, আমি জানতাম, আপনারা এই সিদ্ধান্তে আসবেন। এই মুহূর্তে তৃতীয় স্তরে নিওলিথি সুর বাজানো হচ্ছে। ত্রিমাত্রিক পর্দা চালু করলে আপনার প্রাণী তিনটির উপর নিওলিথি সুরের প্রভাব লক্ষ করতে পারবেন।
স্রুরা তার ঘরের দরজা খোলা রেখেছে।
তার ধারণা হয়েছে প্রাণীগুলি ভয়াবহ নয়। এরা দেখতে কুৎসিত, শক্তিশালী রেডিয়েশনেও এদের কিছু হয় না, তবু খুব সম্ভব নিরীহ। এখন পর্যন্ত ওরা কারোর কোনো ক্ষতি করে নি। ওদের মধ্যে এক জনের সঙ্গে তার বেশ ভাব হয়েছে। সেটির পায়ে কোনো আঘাত লেগেছে বা কিছু হয়েছে। একটি পা সব সময় সাবধানে গুটিয়ে রেখে চলাফেরা করে। সে প্রায়ই তার ঘরে এসে চুপচাপ বসে থাকে। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিকে তাকায়।
আজও সে এসেছে। এবং অন্যদিনের মধ্যে উঠে বসেছে চেয়ারে। স্রুরা হাসিমুখে বলল, কি বন্ধু, আবার এসেছ। হুঁ। আজকে কী নিয়ে আলাপ করি? তুমি তো আবার আলাপে অংশ নিতে পার না।
প্রাণীটি মনে হল মাথা নাড়াল। যেন কথাবার্তা সব বুঝতে পারছে। স্রুরা বলল, ই, তোমার পা একটি মনে হচ্ছে জখম হয়েছে। আমি অবশ্য এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। কারণ আমি ডাক্তার নই, আমি একজন হাইপারডাইভ ইঞ্জিনিয়ার। হাইপারডাইভ কী, জানতে চাও?
প্রাণীটি মাথা নাড়ল। যেন সে সত্যি সত্যি জানতে চায়।
হাইপারডাইভ একটি অদ্ভুত জিনিস। আমরা এসেছি মি১৫ওয়ে গ্যালাক্সি থেকে। সেটি তোমাদের এই এড্রেমিডা নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে পাঁচ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে। হাইপারডাইভ ছাড়া এত দূর মানুষের পক্ষে আসা সম্ভব নয়। বুঝতে পারছ কিছু।
না, বুঝতে পারছি না, অসুবিধা হচ্ছে।
স্রুরা মনে করল, সে ভুল শুনছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল প্রাণীটির দিকে।
কে কথা বলছে? আমি, আমি বলছি। আমার নাম অয়ু।
স্রুরা কপালের ঘাম মুছলুকনো গলায় বলল, তোমরা আমাদের কথা বুঝতে পার?
কিছু কিছু পারি।
তোমরা কে?
তোমার প্রশ্ন বুঝতে পারছি না স্রুরা।
এই গ্রহে তোমাদের মতো কি আরো প্রাণী আছে?
না, এই গ্রহে অন্য কোনো প্রাণী নেই।
তোমরা আমাদের ভাষা শিখলে কি করে? শুনে শুনে শিখেছি।
শুনে শুনেই শিখে ফেললে?
হ্যাঁ। তুমি কিন্তু হাইপারডাইভ সংক্রান্ত বিষয়টি এখনো ব্যাখ্যা কর নি।
ঠিক এই মুহুর্তে তোমাকে বোঝাতে পারব কিনা জানি না।
চেষ্টা করে দেখ। আমরা যে কোনো যুক্তিপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারি।
হুঁ, তা পার। আমাকে মানতেই হবে তোমরা তা পার। তবে হাইপারডাইভ জানতে হলে তোমাকে চতুর্মাত্রিক সময় সমীকরণ জানতে হবে। তা কি তুমি জান?
না। তুমি আমাকে বুঝিয়ে দাও।
এখন নয়, এ ঘন নয়। আমার মাথা ঘুরছে। আমাকে কিছুক্ষণ ভাবতে দাও।
ঠিক আছে।
আমার এখনো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।
স্বল্প কী?
পরে বলব, পরে বলব।
স্রুরা দেখল অযু নামের প্রাণীটি নেমে যাচ্ছে। এই কদাকার কুৎসিত প্রাণীটির সঙ্গে সত্যি সত্যি এতক্ষণ কথা হল। স্রুরা কপালের ঘাম মুছল। সুইচ টিপে গ্যালাক্সি-ওয়ানের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। কিন্তু স্রুরার ইচ্ছা করছিল না।
অয়ু ঘর থেকে বেরিয়েই লীকে খুঁজে বের করল। মানুষদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, এটি তাকে জানান প্রয়োজন তৃতীয় স্তরে লম্ব করিডোরে কাউকে দেখা গেল না। অয়ু ধীর পায়ে ঐগাতে লাগল। শেষ প্রান্তে দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এদের দুজনের হাতেই দুটি অস্ত্র। কী জাতীয় অস্ত্র তা জানতে লুখগুলি বের করতে ইয়। কিন্তু সে সুযোগ পাওয়া গেল না। করিডোরের এ-প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত তীব্র আগুনের হকা বয়ে গেল। ব্যাপারটি পূর্ব পরিকল্পিত, এজন্যেই করিডোরে আজ একটি মানুষও নেই।
অয়ু তার পাগুলি গুটিয়ে ফেলল শরীরের ভেতর। উত্তাপের ফলে শরীরের অণুগুলির কম্পন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে, সেগুলি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। উত্তাপ ছড়িয়ে দিতে হবে চার দিকে। লুখগুলি শরীরের ভেতরে থাকায় বেশ অসুবিধা হচ্ছে। তার কষ্ট হতে থাকল। বাচার একমাত্র উপায় ঐ মানুষ দুটিকে মেরে ফেলা। কোনোই কঠিন কাজ নয়, অনায়াসে করা যেতে পারে।