অয়ু এখন পর্যন্ত যা শিখেছে, তার সাহায্যে মানুষদের সঙ্গে সে কথা বলতে পারে, কিন্তু এখনই সে বলতে চায় না। ভাষাটি ভালোমতো জানা দরকার। তারও আগে জানা দরকার, ওরা তাদের এত ভয় করছে কেন। ভয় করার কী আছে?
অয়ু মনে মনে বলল, আমরা তো তোমাদের কোনো ক্ষতি করছি না। তোমাদের কাছ থেকে আমরা শিখতে চাই এবং তার বদলে আমরা তোমাদের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করব।
আমরা তোমাদের জন্যে যে জিনিসটি তৈরি করেছি যা দেখে তোমরা অবাক হচ্ছ এবং বলছ ট্রেসারেক্ট-এর চেয়ে অনেক অনেক অদ্ভুত জিনিস আমরা তোমাদের জন্যে তৈরি করে দেব। এত দিন আমরা এ সব তৈরি করি নি, আমরা জানতাম না এ সবের কোনো মূল্য আছে। এখন বুঝতে পারছি আছে।
অযু কথাবার্তা গুছিয়ে ভেবে রাখতে চেষ্টা করে। একদিন এসব কথা বলতে হবে। ওরা কি শুনবে তাদের কথা?
ওদের মনের ভাব ভালো নয়। সবাই চাহে কুৎসিত প্রাণীগুলি যেন শেষ হয়ে যায়। কেন এ রকম করছে ওরা? এত ভয় পাচ্ছে কেন? ভয়ের তো কিছুই নেই। ভয় কিসের?
এই মহাকাশযানের তিনটি স্তর আছে। অয়ুরা আছে সবচেয়ে নিচের স্তরে। মানুষরা ভয় পেয়ে নিচের স্তরটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে, যেন ওরা দ্বিতীয় বা প্রথম স্তরে যেতে না পারে। ব্যাপারটি অয়ুর কাছে হাস্যর মনে হয়েছে। এদের সমস্ত দরজা চৌম্বক শক্তিতে লাগান। অয়ু, নীম বা লী–এদের যে কেউ যে কোনো চৌম্বক শক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। ইচ্ছা করলেই এর দ্বিতীয় বা প্রথম স্তরে যেতে পারে। তা যাচ্ছে না, তার একমাত্র কারণ, তারা মানুষদের আর ভয় পাইয়ে দিতে চায় না।
তা ছাড়া নিজেদের স্তরেও অনেক কিছু দেখায় এবং শেখার আছে। বেশ কিছু মানুষও আটকা পড়েছে এই স্তরে। মানুষগুলি ভয়ে অস্থির হয়ে আছে। এক জনকে অবশ্যি পাওয়া গেছে যার ভয়টয় বিশেষ নেই। মোটাসোট। ফুর্তিবাজ লোক। অয়ু তার ঘরে ভুল করে ঢুকে পড়েছিল। এই লোকটি অন্যদের মতো লাফিয়ে ওঠে বা চিৎকারও শুরু করে নি। হাসিমুখে বলেছে, আমার মাকড়সান্ধুটির খবর কি? আমাকে ভক্ষণ করবার হেতু আগমন নাকি?
অয়ু ভক্ষণ শব্দটির অর্থ ধরতে পারে নি। লোকটি বলেহে, এসেছেন যখন, তখন বসুন।
এর অর্থ বেশ বোঝা গেল। অয়ু লোকটি যে রকম আসনে বসে আছে, সে রকম একটি আসনে উঠে বসল। লোকটি গম্ভীর হয়ে বলল, আপনি কি আমার কথা বুঝতে পেরে বসলেন, না ঐটি একটি কাকতালীয় ব্যাপার।
অয়ু কাকতালীয় শব্দটিও বুঝতে পারল না। এদের ভাষা যথেষ্ট জটিল। এই শব্দটি সে আগে একবারও শশানে নি।
কিছু পান করবেন? কমলালেবুর সবত দিতে পারি, কিন্তু আসল নয় নকল। সবই সিনথেটিক।
অয়ুর খুব ইচ্ছা করছিল লোকটিকে অবিকল মানুষের ভাষায় জবাব দেয়, বলে, আপনাকে ধন্যবাদ। খাদ্য গ্রহণ করার মতো শারীরিক ব্যবস্থা আমাদের নেই। আমরা সরাসরি শক্তি সগ্রহ করে থাকি। আপনাদের সঙ্গে আমাদের কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে।
কিন্তু আয়ু কিছু বলল না। লী বলে দিয়েছে, যেন তা করা না হয়। তার ধারণা মানুষরা যখন টের পাবে তারা ওদের ভাষায় কথা বলতে পারে, তখন আরো ভয় পেয়ে যাবে। ওদের সঙ্গে যোগাযোগের আগে ওদের মনের বৈরী ভাব প্ৰথমে দূর করতে হবে। নীম লীর কথা মেনে নিতে পারে নি। নীম বলেছে, ওদের মনের ভয় দূর করার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে ওদের সঙ্গে কথা বলা।
লী শান্ত স্বরে বলেছে, না, মানুষদের মনে ভয় ঢুকে গেছে। তারা ভাবছে আমরা হয়তো ওদের চেয়েও বুদ্ধিমান। এটি তারা মেনে নিতে পারছে না।
আমরা ওদের ভাষায় কথা বলামাত্র ওদের ধারণা বদ্ধমূল হবে–যার ফল হবে অশুভ।
মানুষদের এই ধারণাটিকেও অয়ুর অদ্ভুত লাগে। মানুষদের কাণ্ডকারখানা দেখে তারা তিন জনই মুগ্ধ হয়েছে। এমন একটি মহাকাশযান তৈরি করতে সীমাহীন বুদ্ধির প্রয়োজন। লীর মতে মানুষের জ্ঞান সীমাহীন। নীম তা স্বীকার করে না। তার ধারণা, কম্পন সম্পর্কে মানুষরা জানে খুব কম। নীমের ধারণা ভুল নয়। এ বিষয়ে তারা সত্যি সত্যি কম জানে। কিন্তু তবু মানুষদের জ্ঞানের পরিমাণও কম নয়। নানান তথ্য জমা করে রাখার জন্যে তারা যে কম্পিউটার তৈরি করেছে, তা একটি আশ্চর্য জিনিস। কম্পিউটারটি যে শুধু তথ্যাদি জমা করে তা এখনো পরিষ্কার হয় নি। তবে হন্তে শিগগিরই। লী এবং নীম দুজনেই এই সমস্যাটি নিয়ে চিন্তা করছে। অর বর্তমানে চিন্তা করবার মতো কোনো সমস্যা নেই। তাকে আবার সেই পুরনো সমস্যাটি দেয়া হয়েছে–ছটি আকাশছোঁয়া ঘরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী?
অনুসন্ধানকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ কেন বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তা বের করা গেল না। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, অদ্ভুত প্রাণীগুলি হয়তো কিছু একটা করেছে। সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গ্যালাক্সি-ওয়ানের সমস্ত যন্ত্রপাতি নিখুঁতভাবে কাজ করছে।
অনুসন্ধানকারী স্কাউটশিপটিতে কোনো ঝামেলা হয়েছে, সে রকম ভাবা ঠিক নয়। কারণ যোগাযোগের বেশ কয়েকটি বিকল্প ব্যবস্থা আছে। মাইক্রোওয়েভ ও লেসার ছাড়াও অত্যন্ত জরুরি অবস্থার জন্যে আছে ওমিক্রন রশ্মির ব্যবহার। এর একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সম্পর্ক নেই। মাইক্রোওয়েভ ও লেসার কাজ না করলেও ওমিক্রন রশ্মি কাজ করবে।
কম্পিউটার সিডিসি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হবার দুটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করে জরুরি মন্ত্রণালয় তার রিপোর্ট পেশ করল।