মহসিন সাধারণত খুব ভোরবেলায় জাগেন। আজ ঘুম ভাঙল অনেক বেলায়। দীপা ডেকে তুলে বললেন,–তোমার একটা জরুরি টেলিফোন। মহসিন আধো ঘুমে টেলিফোন রিসিভারে মুখ লাগিয়ে বললেন, কে?
ওপার থেকে মধুর স্বরে বলা হল আমি।
আমিটা কে?
আমি নুশরাত জাহান–নুশা।
নুশা মানে–নুশা কে?
ওপাশ থেকে কাঁদো-কাঁদো গলায় বলা হল, আমি তোমার নুশা।
মহসিন বিস্মিত ও বিরক্ত হলেন।
তুমি এমন করছ কেন? আমি নুশা।
মহসিন টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন। বিছানার পাশে দীপা দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর চোখ জলে ভেজা। সেই দিকে তাকিয়ে মহসিনের মন মায়ায় ভরে গেল। এত গভীর মায়া, এত গভীর মমতা তার ভেতর আছে, তা তিনি কখনো বোঝন নি। এই মমতার উৎস কী? তিনি হাত বাড়িয়ে দীপাকে স্পর্শ করলেন। দীপা নিচু গলায় বলল, নিশানাথ চাচা কাল রাতে মারা গেছেন।
দীপার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে। মহসিনের চোখ ভিজে উঠল। তিনি গভীর বেদনা বোধ করলেন। ফিসফিস করে বললেন, মৃত্যু নিয়ে মন খারাপ করতে নেই দীপা। মৃত্যুও আনন্দময়। আমরা জানি না বলেই ভয় পাই।
এইটুকু বলেই তিনি চমকে উঠলেন। কেন এ রকম একটা অদ্ভুত কথা বললেন, ভেবে পেলেন না। তাঁর মনে হল, এই কথাগুলি স্বপ্নে পেয়েছেন। হ্যাঁ, অদ্ভুত একটা স্বপ্ন তিনি কাল রাতে দেখেছেন। যেন খুব একটা শীতের রাত খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে কোথায় যেন যাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন?
দীপা ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। তাঁর গাল অশ্রুতে ভেজা। মহসিন সেই অঞ মুছিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। তিনি গাঢ় স্বরে ডাকলেন, দীপা।
দীপা কিছু বলল না।
তিনি বললেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি, দীপা। এরকম করে কেঁদো না। আমার কষ্ট হচ্ছে। সত্যি কষ্ট হচ্ছে।
বলতে-বলতে সত্যি-সত্যি তাঁর চোখে জল এসে গেল। এই পৃথিবীতে চোখের জলের মতো পবিত্র তো আর কিছু নেই। এই পবিত্র জলের স্পর্শে সব গ্লানি—সব মালিন্য কেটে যায়।