শো শো শব্দ বাড়ছেই। শব্দটা এখন কানের পর্দার ভেতরে হচ্ছে। কুদ্দুসের মুখ শুকিয়ে গেছে। সে লিফটের মেঝেতে বসে পড়ল। আর তখনই কুকুরটার নাম মনে পড়ল-কিতমীর।
কিতমীর নাম পড়ার পরপরই হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে লিফট থেমে গেল। লিফটের দরজা খুলতে শুরু করল। দরজা পুরোপুরি খোলার জন্যে কুদ্দুস অপেক্ষা করল না। সে বসা অবস্থা থেকেই ব্যাঙের মত লাফ দিয়ে বের হয়ে পড়ল। বের হয়েই হতভম্ব হয়ে গেল। সে কোথায় এসেছে? ব্যাপারটা কী? লিফট থেকে বের হওয়াটা বিরাট বোকামি হয়েছে। যে ভাবে লাফ দিয়ে সে লিফট থেকে বের হয়েছে তার উচিত ঠিক একইভাবে লাফ দিয়ে আবার লিফটে ঢুকে যাওয়া। সে পেছনে তাকালো। পেছনে লিফট নেই। লিফট কেন কোন কিছুই নেই, চারদিকে ভয়াবহ শূন্যতা। সে নিজেও বসে আছে শূন্যের উপর। মাথার উপর আকাশ থাকার কথা। আকাশ-ফাকাশ কিছু নেই। তার চারপাশে কুয়াশার মতো হালকা ধোয়া। সেই ধোঁয়ার রঙ ঈষৎ গোলাপি। কুদ্দুস মনে মনে বলল, ইয়া গাফুরুর রাহিম। এ কী বিপদে পড়লাম! ও আল্লাহপাক, আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে। হে গাফুরুর রাহিম! একবার যদি এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাই তাহলে শুক্রবারে তারা মসজিদে সিন্নি দেব। এবং বাকি জীবনে আর লিফটে চড়ব না। দরকার হলে ৫০০ তলা পর্যন্ত হেঁটে উঠব। আমার উপর দয়া করো আল্লাহপাক।
কুদ্দুস চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সে তিনবার কুলহুআল্লাহ পড়ে বুকে দেবে। তারপর চোখ খুলবে। তাতে যদি কিছু হয়।
কোন দোয়াই প্রথম চোটে মনে পড়ছে না। হায়, এ কেমন বিপদ!
কুদ্দুসের ঘুম ভেঙেছে
কুদ্দুসের ঘুম ভেঙেছে।
সে তার গ্রামের বাড়িতে চৌকির উপর বই-খাতা মেলে পড়তে বসেছিল। পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কী সর্বনাশের কথা। কাল ইংরেজি সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা। রচনা এখনো দেখা হয় নি। অ্যা জার্নি বাই বোট এই বছর আসার কথা। গত বছর আসে নি। কুদ্দুস রচনা বই নিল। আর তখন মনে হল তাকে একটা সাপ মারতে হবে। সাপটা কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হবে। ভয়ংকর বিষধর একটা সাপ। এ রকম মনে হবার কী কারণ কুদ্দুস বুঝতে পারল না। তারপরও সে হ্যারিকেন হাতে নেমে এল। একটা মোটা লাঠি দরকার। লাঠি হাতে এক্ষুণি তাকে তার বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। হাতে একটু সময় নেই।
কেউ একজন তাকে বলছে—তাড়াতাড়ি করো, তাড়াতাড়ি করো। সেই কেউ একজনটা কে? কুদ্দুস জানে না। শুধু জানে এক্ষুণি একটা সাপ তার বাবাকে ছোবল দিতে আসবে। তার দায়িত্ব সাপটাকে মারা। যদি মারতে পারে তবেই তার জীবন হবে অন্য রকম।
কুদ্দুস তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ঐ তো সাপটা। শঙ্খচূড় নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে। হ্যারিকেনের আলোয় চোখ জ্বলজ্বল করছে।