মিঃ জ্যাকসন, আপনি কি উরিম ও থুমিমের কথা জানেন?
নামগুলো আমার চেনা, কিন্তু তাদের মানে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারব না।
প্রোফেসর বললেন, ইহুদিদের প্রধান পুরোহিতের বুকে যে কবচটা ঝুলত, তাকেই বলা হত উরিম ও থুমিম। ইহুদিরা এই কবচের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার ভাব পোষণ করত, যেমন রোমানরা করত ক্যাপিটলে রাখা সিবিলাইন পুঁথিগুলির প্রতি। সাংকেতিক চিহ্ন-আঁকা বারোটি মহামূল্য রত্ন দেখতে পাচ্ছেন। উপরে বাঁ দিক থেকে শুরু করে পাথরগুলি হল কার্নেলিয়ান, পেরিডট, এমারেল্ড, রুবি, ল্যাপিস ল্যাজুলি, অনিক্স, অ্যাগেট, অ্যামেথিস্ট, টোপ্যাজ, বেরিল আর জ্যাসপার।
আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম মণিমুক্তোখচিত মহামূল্য কবচটার দিকে। শেষে প্রশ্ন করলাম, এই কবচের সঙ্গে কি কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িত আছে?
জিনিসটা যে অতি প্রাচীন এবং অতি মূল্যবান, তাতে কোনও সন্দেহ নেই, বললেন, প্রোফেসর। অ্যান্ড্রিয়াস। অকাট্য প্রমাণ না থাকলেও আমরা নানা কারণে বিশ্বাস করি যে, এটা সেই সলোমনের মন্দিরের আদি ও অকৃত্রিম উরিম ও থুমিম। এ জিনিস ইউরোপের কোনও মিউজিয়মে নেই। আমার তরুণ বন্ধু ক্যাপ্টেন উইলসন মণিমুক্তো সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ। উনিই বলবেন এই পাথরগুলো কত খাঁটি।
তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ক্যাপ্টেন উইলসন দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর ভাবী পত্নীর পাশেই। অল্প কথায় তিনি তাঁর মনের ভাব ব্যক্ত করলেন।
সত্যি কথা। আমি এর চেয়ে ভাল পাথর আর দেখিনি।
স্বর্ণকারের কাজও দেখার মতো, বললেন অ্যান্ড্রিয়াস। অতীতে স্বর্ণকারেরা–
প্রোফেসরের কথার উপর কথা চাপিয়ে উইলসন বললেন, ওর চেয়ে ভাল সোনার কাজের নিদর্শন দেখা যাবে এই মোমবাতিদানে। তাঁর দৃষ্টি এখন অন্য একটি টেবিলের দিকে। আমরা সকলেই শাখা-প্রশাখা-বিশিষ্ট সোনার বাতিদানটার আশ্চর্য কারুকার্যের প্রশংসায় উইলসনের সঙ্গে গলা মেলালাম।
অ্যান্ড্রিয়াসের মতো বিশেষজ্ঞের চোখ দিয়ে এইসব আশ্চর্য জিনিস দেখা পরম সৌভাগ্যের কথা। সত্যি বলতে কি, সবকিছু দেখা শেষ হলে পর প্রোফেসর যখন আমার বন্ধুকে জানালেন যে, এখন থেকে এ সবই তার জিম্মায় চলে যাচ্ছে, তখন ভদ্রলোকের জন্য বেশ কষ্টই হচ্ছিল, আর সেইসঙ্গে আমার বন্ধুর সৌভাগ্যকে খানিকটা ঈষার চোখে না দেখে পারছিলাম না। এক সপ্তাহের মধ্যেই ওয়র্ড মর্টিমার বেলমোর স্ট্রিট মিউজিয়মের অধিকর্তা হিসাবে তার নতুন বাসস্থানে উঠে গেল।
এর দিন পনেরো পর মর্টিমার তার জনা-ছয়েক অকৃতদার বন্ধুদের সঙ্গে তার নতুন বাড়িতে একটা ভোজের আয়োজন করল। শেষে যখন সবাই যাবার জন্য উঠে পড়েছে, তখন মর্টিমার আমার কোটের আস্তিন ধরে একটা ছোট্ট টান দিয়ে বুঝিয়ে দিল যে, সে চায় আমি আর একটুক্ষণ থাকি।
তোমার বাড়ি তো এখান থেকে দশ-পা, বলল মর্টিমার (আমি তখন অ্যালব্যানিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি)–তুমি একটু থেকে যাও। চুরুট সহযোগে দুজনে নিরিবিলি কথা হবে। একটা ব্যাপারে তোমার পরামর্শের দরকার।
অগত্যা আমি একটি আরাম কেদারায় বসে মর্টিমারের একটি উৎকৃষ্ট ম্যাট্রোনাস চুরুট ধরালাম। সবাই চলে যাবার পরে সে পকেট থেকে একটা চিঠি বার করে আমার সামনে বসল।
এই নামবিহীন চিঠিটা আজই সকালে এসেছে, বলল মর্টিমার। আমি পড়ে শোনাচ্ছি, তারপর তুমি বলো এ ব্যাপারে আমার কী কর্তব্য।
বেশ তো আমার সাধ্যমতো পরামর্শ দিতে আমি প্রস্তুত।
চিঠিটা হচ্ছে এই–মহাশয়, আপনার জিম্মায় যে সমস্ত মহামূল্য সম্পদ রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে আপনাকে বিশেষ সাবধান হতে বলি। বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী একটিমাত্র পাহারাদারে কাজ হবে বলে আমি মনে করি না। আপনি এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন না করলে অপূরণীয় ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে।
এই কি পুরো চিঠি?
হ্যাঁ।
অন্তত এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, তোমাদের ওখানে রাত্রে যে একটিমাত্র পাহারাদার থাকে, সে-খবরটা মুষ্টিমেয় যে কজন জানে, তাদেরই একজন লিখেছে এ চিঠি।
মর্টিমার এবার একটা রহস্যজনক হাসি হেসে চিঠিটা আমার হাতে দিল।
হস্তলিপি ব্যাপারটা নিয়ে তুমি কোনও চর্চা করেছ? প্রশ্নটা করে মর্টিমার আর-একটা চিঠি আমার সামনে রেখে বলল, এটার কনগ্রাচুলেটে সি-এর সঙ্গে ওটার কমিটেড-এর সি মিলিয়ে দেখো। ক্যাপিটাল আই-টাও লক্ষ করো, আর ফুলস্টপের জায়গায় ড্যাশ-চিহ্ন ব্যবহার করাটা। আমি বললাম, দুটো চিঠি নিঃসন্দেহে একই লোকের লেখা, যদিও প্রথমটায় হাতের লেখা গোপন করার একটা প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে।
দ্বিতীয় চিঠিটা হচ্ছে আমার এই নতুন চাকরিটা পাবার খবর পেয়ে প্রোফেসর অ্যান্ড্রিয়াসের অভিনন্দন পত্র।
আমি অবাক হয়ে চাইলাম মর্টিমারের দিকে, তারপর দ্বিতীয় চিঠিটা ওলটাতেই মার্টিন অ্যান্ড্রিয়াস সইটা চোখে পড়ল। যে তোক হাতের লেখা নিয়ে সামান্যতম চচাও করেছে, তার মনে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না যে, প্রোফেসর অ্যাড্রিয়াসই মিউজিয়মের সদ্য-ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ককে চুরির ব্যাপারে সাবধান হতে বলে এই নামহীন চিঠিটা লিখেছেন। ঘটনাটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি।
কিন্তু ভদ্রলোক এমন চিঠি লিখবেন কেন? আমি প্রশ্ন করলাম।
ঠিক এই প্রশ্নই আমি করতে চাই তোমাকে। তাঁর মনে যদি এ ধরনের আশঙ্কা থেকেই থাকে, তা হলে তো তিনি নিজে এসে আমাকে বলতে পারতেন।