শব্দ কল্প দ্রুম্
ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম্ দ্রাম্, শুনে লাগে খটকা-
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা!
শাঁই শাঁই পন্পন্ ভয়ে কান্ বন্ধ-
ওই বুঝি ছুটে যায় সে-ফুলের গন্ধ?
হুড়মুড় ধুপ্ধাপ- ওকি শুনি ভাই রে!
দেখ্ছ না হিম পড়ে যেওনাকো বাইরে।
চুপ্ চুপ্ ঐ শোন! ঝুপ্ঝাপ্ ঝ-পাস্!
চাঁদ বুঝি ডুবে গেলে?- গব্ গব্ গবা-স!
খ্যাঁশ্ খ্যাঁশ্ ঘ্যাঁচ্ ঘ্যাঁচ্, রাত কাটে ঐরে!
দুড়্ দাড়্ চুরমার- ঘুম ভাঙে কই রে!
ঘর্ ঘর্ ভন্ ভন্ ঘোরে কত চিন্তা!
কত মন নাচে শোন্ ধেই ধেই ধিন্ তা!
ঠুং ঠাং ঢং ঢং, কত ব্যথা বাজে রে-
ফট্ফট্ বুক ফাটে তাই মাঝে মাঝে রে!
হৈ হৈ মার্ মার্, “বাপ্ বাপ্” চীৎকার-
মালকোঁচা মারে বুঝি? সরে পড়্ এইবার।
শুরু
আয়রে ভোলা খেয়াল – খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে খ্যাপার গানে
নাইকো মনে নাইকো সুর।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর।
আয় খ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তধিন্ ধিন্ ,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাব হীন।
আজগুবি চাল্ বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে
আয়রে তবে ভুলের ভাবে
অসম্ভবের ছন্দেতে।
সাবধান
আরে আরে, ওকি কর প্যালারাম বিশ্বাস?
ফোঁস্ ফোঁস্ অত জোরে ফেলোনাকো নিশ্বাস।
জানোনা কি সে বছর ওপাড়ার ভূতোনাথ,
নিশ্বাস নিতে গিয়ে হয়েছিল কুপোকাৎ?
হাঁপ ছাড় হ্যাঁস্ফ্যাঁস্ ও রকম হাঁ করে-
মুখে যদি ঢুকে বসে পোকা মাছি মাকড়ে?
বিপিনের খুড়ো হয় বুড়ো সেই হল’ রায়,
মাছি খেয়ে পাঁচ মাস ভুগেছিল কলেরায়।
তাই বলি- সাবধান! ক’রোনাকো ধুপ্ধাপ্,
টিপি টিপি পায় পায় চলে যাও চুপ্ চাপ্।
চেয়োনাকো আগে পিছে, যেয়োনাকো ডাইনে
সাবধানে বাঁচে লোকে,- এই লেখে আইনে।
পড়েছ ত কথা মালা? কে যেন সে কি করে
পথে যেতে পড়ে গেল পাতকো’র ভিতরে ?
ভালো কথা- আর যেন সকালে কি দুপুরে ,
নেয়োনাকো কোনো দিন ঘোষেদের পুকুরে,
এরকম মোটা দেহে কি যে হবে কোন্ দিন,
কথাটাকে ভেবে দেখ কি রকম সঙ্গিন!
চটো কেন? হয় নয় কে বা জানে পষ্ট,
যদি কিছু হ’য়ে পড়ে পাবে শেষে কষ্ট।
মিছিমিছি ঘ্যান্ ঘ্যান্ কেন কর তক্ক?
শিখেছ জ্যাঠামো খালি, ইঁচরেতে পক্ক ,
মানবে না কোন কথা চলা ফেরা আহারে ,
একদিন টের পাবে ঠেলা কয় কাহারে ।
রমেশের মেঝ মামা সেও ছিল সেয়না,
যত বলি ভালো কথা কানে কিছু নেয়না
শেষকালে একদিন চান্নির বাজারে
প’ড়ে গেল গাড়ি চাপা রাস্তার মাঝারে!
সৎপাত্র
শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে-
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে?
মন্দ নয়, সে পাত্র ভাল-
রঙ যদিও বেজায় কালো;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক প্যাঁচার মতন।
বিদ্যে বুদ্ধি? বলছি মশাই-
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়!
উনিশটি বার ম্যাট্টিকে সে
ঘায়েল হ’য়ে থামল শেষে।
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়-
কষ্টে- সৃষ্টে দিন চলে যায়।
মানুষ ত নয় ভাইগুলো তার
একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;
আরেকটি সে তৈরি ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে।
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায়।
গঙ্গারাম ত কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পান্ডু রোগে।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর!
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয়ে গঙ্গারামের।-
যাহোক্, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে?
হাত গণনা
ও পাড়ার নন্দ গোঁসাই, আমাদের নন্দ খুড়ো,
স্বভাবেতে সরল সোজা অমায়িক শান্ত বুড়ো।
ছিল না তার অসুখ বিসুখ, ছিল সে যে মনের সুখে,
দেখা যেত সদাই তারে হুঁকোহাতে হাস্যমুখে।
হঠাৎ কি তার খেয়াল হ’ল চল্ল্ সে তার হাত দেখাতে-
ফিরে এল শুকনো সরু, ঠকাঠক্ কাঁপছে দাঁতে
শুধালে সে কয় না কথা, আকাশেতে রয় সে চেয়ে,
মাঝে মাঝে শিউরে ওঠে, পড়ে জল চক্ষু বেয়ে।
শুনে লোকে দৌড়ে এল, ছুটে এলেন বদ্যিমশাই,
সবাই বলে, “কাঁদছ কেন? কি হয়েছে নন্দ গোঁসাই?”
খুড়ো বলে, “বলব কি আর হাতে আমার স্পষ্ট লেখা
আমার ঘাড়ে আছেন শনি, ফাঁড়ায় ভরা আয়ুর রেখা।
এতদিন যায়নি জানা ফির্ছি কত গ্রহের ফেরে-
হঠাৎ আমার প্রাণটা গেলে তখন আমায় রাখ্বে কে রে?
ষাটটা বছর পার হয়েছি বাপদাদাদের পুণ্যফলে-
ওরে তোদের নন্দ খুড়ো এবার বুঝি পটোল তোলে।
কবে যে কি ঘট্বে বিপদ কিছু হায় যায় না বলা”-
এই ব’লে সে উঠলো কেঁদে ছেড়ে ভীষণ উচ্চ গলা।
দেখে এলাম আজ সকালে গিয়ে ওদের পাড়ার মুখো,
বুড়ো আছে, নেই কো হাসি, হাতে তার নেই কো হুঁকো।
হাতুড়ে
একবার দেখে যাও ডাক্তারি কেরামৎ-
কাটা ছেঁড়া ভাঙা চেরা চট্পট মেরামৎ
কয়েছেন গুরু মোর, “শোন শোন বৎস,
কাগজের রোগী কেটে আগে কর মক্স”
উৎসাহে কি না হয়? কি না হয় চেষ্টায়?
অভ্যাসে চটপট্ হাত পাকে শেষটায়।
খেটে খুটে জল হ’ল শরীরের রক্ত-
শিখে দেখি বিদ্যেটা নয় কিছু শক্ত।
কাটা ছেঁড়া ঠুক্ ঠাক। কত দেখ যন্ত্র,
ভেঙে চুরে জুড়ে দেই তারও জানি মন্ত্র
চোখ বুজে চটপট বড় বড় মুর্তি,
যত কাটি ঘ্যাঁস্ ঘ্যাঁস্ তত বাড়ে ফুর্তি।
ঠ্যাং কাটা গলা কাটা কত কাটা হস্ত,
শিরিষের আঠা দিয়ে জুড়ে দেয় চোস্ত।
এইবারে বলি তাই, রোগী চাই জ্যান্ত-
ওরে ভোলা, গোটাছয় রোগী ধরে আন্ত!
গেঁটেবাতে ভুগে মরে ও পাড়ার নন্দী,
কিছুতেই সারাবে না এই তার ফন্দি-
একদিন এনে তারে এইখানে ভুলিয়ে,
গেটেঁবাত ঘেঁটে- ঘুঁটে সব দেব ঘুলিয়ে।
কার কানে কট্ কট্ কার নাকে সর্দি,
এস, এস, ভয় কিসে? আমি আছি বদ্যি।
শুয়ে কে রে? ঠ্যাং ভাঙা? ধরে আন্ এখেনে-
স্ক্রুপ্ দিয়ে এঁটে দিব কি রকম দেখে নে।
গলা ফোলা কাঁদ কেন? দাঁতে বুঝি বেদনা?
এস এস ঠুকে দেই আর মিছে কেঁদ না,
এই পাশে গোটা দুই, ওই পাশে তিনটে-
দাঁতগুলো টেনে দেখি কোথা গেল চিমটে?
ছেলে হও, বুড়ো হও, অন্ধ কি পঙ্গু,
মোর কাছে ভেদ নাই, কলেরা কি ডেঙ্গু-
কালাজ্বর, পালাজ্বর, পুরানো কি টাটকা,
হাতুড়ির একঘায়ে একেবারে আটকা!